parbattanews

পানছড়ির নবম শ্রেণীর ছাত্র আরিফের সংগ্রামী যুদ্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক, পানছড়ি:

পানছড়ি উপজেলার দমদম হেডম্যান টিলার দরিদ্র রিক্সাচালক আবুল হোসেনের বড় সন্তান আরিফের বয়স আনুমানিক পনের। সে পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। যমুনা শাখার মানবিকের ছাত্র আরিফের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার সংগ্রামের কাহিনী খুবই বেদনাদায়ক। রিক্সাচালক পিতার সংসারে সদস্য সংখ্যা চার। যার মাঝে আরিফ সবার বড়।

তার ছোট বোন জান্নাত মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রী। ছোট ভাই আরাফাত এখনো বিদ্যালয়ে যায় না। তার মা আয়েশা বেগম একজন গৃহিনী হলেও পরের বাড়িতে কাজ করে মাঝে মধ্যে আরিফের পড়া-লেখায় যোগান দেয়। কিন্তু কিডনি জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর মায়ের ঔষধের খরচাদি আরিফকেই বহন করতে হয়। বর্তমানে রিক্সা প্রায় বিলুপ্তির পথে।

রিক্সা চালিয়ে সংসারে নুন আনতে পানতা ফুরায়। তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি আরিফ শুরু করে রাজমিস্ত্রীর সহকারীর কাজ। কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে সপ্তাহে ৩/৪ দিন কাজ করে মায়ের ঔষধ, নিজের বই-খাতা-কলম আর বোনের পড়ালেখার খরচ যোগাড় করে। দিনে কাজ করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে লেখা-পড়া করেই ভবিষ্যতে একজন সরকারি চাকুরীজীবী হওয়ার স্বপ্ন আরিফের।

২০১৭ সালে জেএসসিতে ৩.৪৬ পাওয়া আরিফ সাত সকালেই বেরিয়ে পড়ে কাজের সন্ধানে। পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তির এক হাজার দুইশত পঞ্চাশ টাকা তার কঠোর পরিশ্রমের টাকা বলে সে জানায়। বছরের মাঝামাঝি সময় পার হলেও এখনো সহায়ক বই ক্রয় করা হয়নি। প্রাইভেট পড়ার ইচ্ছা থাকলেও টাকা দেয়ার সাধ্য নেই।

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক পর্যায়ে ২০১৮ সালে জেলার শ্রেষ্ঠ পানছড়ি বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক লিটন দাশ জানায়. আসলে এই খবরটা শুনে আমার নিজের কাছেও খুব খারাপ লাগছে। আরিফের এই করুণ কাহিনী আমার জানা ছিলনা। তাকে সারাবছর বিনা বেতনে প্রাইভেট এবং সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।

শিক্ষাক্ষেত্রে পানছড়িতে আলো ছড়ানো শিক্ষানুরাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম জানান, অনেকেই পরিশ্রম করে লেখাপড়া করে কিন্তু নবম শ্রেণিতে পড়ে রাজ মিস্ত্রির সহযোগীর মতো কষ্টের কাজের রেকর্ড বিরল। এ ব্যাপারে তিনি দেখবেন এবং সহযোগিতার কথাও এ প্রতিবেদককে বলেন।

Exit mobile version