parbattanews

পানছড়ির পান জেলার চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে

এককালে পানছড়িতে প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি পান উৎপাদন হতো। এলাকাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে এই পান নদী পথে রপ্তানী করা হতো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ফলে পানছড়ির কৃষকরা পান থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উর্পাজন করতো বলে এই এলাকার নাম দেওয়া হয় পানছড়ি। পানচাষীদের অনাগ্রহের কারণে পানের ঐতিহ্য বিলীন হতে চলছিল। কিন্তু সম্প্রতি পানের উৎপাদন আবারো কৃষকের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেছে। যার ফলে পানছড়ির বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় সপ্তাহে তিন দিন জমে উঠে পানের বিশাল হাট।

কৃষকদের সাথে আলাপকালে জানায়, শনি, রবি ও বুধবারে তিরপাবিল, করল্যাছড়ি, কানুনগোপাড়া, রাঙাপানি এলাকায় জমে উঠে এ সব হাট। সাত সকালেই খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও হাটহাজারি থেকে বেপারিরা হাজির হয়ে যায় পানের সন্ধানে। যুবনাশ্বপাড়া, সেনাজিপাড়া, তাপিতাপাড়া, রাজকুমার পাড়া, বাইগ্যাপাড়া, জগৎসেন পাড়া এলাকার বরোজ থেকে চাষিরা টমটম, সিএনজি, মাহেন্দ্র ও কেউ কেউ কাঁধে ভর করে পান নিয়ে আসে হাটে।

করল্যাছড়ির তিরপাবিল এলাকায় পানের হাটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খন্ড খন্ড ভাবে তিন জায়গায় জমেছে পানের হাট। যুবনাশ্ব পাড়া এলাকার পানচাষি বাডিধন চাকমা, বাইট্টা চাকমা, খর্গ পাড়ার উপেন্দ্র ত্রিপুরা জানায়, বুধবারে এখানে বিশাল হাট জমে। পনের থেকে বিশ লক্ষাধিক টাকার পান কেনাচেনা চলে এই প্রত্যন্ত এলাকার হাটে। খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, হাটহাজারি থেকে আসা ব্যবসায়ী মোমিন উল্লাহ, সাইফুল, এরশাদ উল্লাহ, প্রিয়তোষ দে জানায়, তারা দীর্ঘ বছর ধরে পানছড়ির সাথে পান ব্যবসায় জড়িত। এখান থেকে পান নিয়েই দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজার জাত করে থাকেন।

তারা আরো জানায়, এখানকার চাষীদের দাদন দিতে হয়। সারা বছর দাদনের মাধ্যমেই তারা চাষ করে সরবরাহ দিয়ে থাকে। কৃষকেরা জানায়, বর্তমানে পানের বাজার দর বেশ ভালো। এক বিড়া পান সর্বনিম্ন ৩০ টাকা থেকে একশত ত্রিশ টাকা পর্যন্ত সাইজ হিসেবে বেচা-কেনা চলছে।

কয়েকজন কৃষক জানালেন, মাঝে মধ্যে পানে বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। যার মাঝে রয়েছে তেল পোকা রোগ, মাছের চোখ, ঝিনুক পঁচা, লেজ পঁচা, জুমমারা, গোড়াপচা ইত্যাদি। স্থানীয় ইউপি সদস্য জয়দত্ত চাকমা, পুরনো পানচাষী পূর্ণাঙ্গ জীবন চাকমা, বিভুতি চাকমা জানায়, চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। প্রশিক্ষণে পরামর্শ পেলেই নিজেরাই পানের রোগ বালাই দুর করতে পারবে।

স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মানস কান্তি ত্রিপুরা জানান, পানচাষীদের নিয়ে উঠোন বৈঠক করার ব্যাপারে এলাকার কার্বারীর সাথে কথা দিন তারিখ ঠিক করা হবে।

পানছড়ি কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে অত্র উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হচ্ছে। চাষীর সংখ্যা ১০১২জন। এক কানি বা চল্লিশ শতকে বিশ হাজার পানের আগা বা চারা লাগানো হয়। লাগানোর ৬/৭ মাস পর থেকেই পান পাতা উত্তোলন শুরু হয়। রোগ বা পোকার আক্রমন না হলে কানি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার বিড়া পান উৎপাদন সম্ভব। তবে পানে পোকার আক্রমন খুব কম ছত্রাকজনিত রোগের প্রকোপ বেশী। রোপনের আগে ছত্রাকনাশক দিয়ে আগা শোধন না করলে পরবর্তীতে রোগ প্রতিরোধ করা কঠিন। রোপনের আগে কৃষকেরা কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ নিলে কাংঙ্খিত ফলন পাওয়া সহজ।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো: আলাউদ্দিন শেখ জানান, পান চাষের জন্য এই এলাকার মাটি ও আবহাওয়া খুবই উপযোগী। পান চাষীদের উন্নতন প্রশিক্ষণ দেয়ার চেষ্টা চলছে। আশা করা যাচ্ছে ভালো প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কৃষকেরা আরো বেশী উদ্বুদ্ধ হবে। ফলে সামনে পান চাষের পরিমাণ দ্বিগুন করার ব্যাপারে কৃষি অফিস আন্তরিকভাবে কাজ করবে। তাছাড়া পানচাষীরা যে কোন সমস্যা নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে তাদের যথাযথ পরামর্শ প্রদান করা হবে বলেও তিনি জানান।

Exit mobile version