parbattanews

পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন খাত অচল করতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে

bght

মিয়া হোসেন,পাবর্ত্য চট্টগ্রাম থেকে ফিরে:

পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এ অঞ্চলকে অশান্ত করতে দীর্ঘদিন ধরেই পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা নানাভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পাবর্ত্য এলাকায় বেশকিছু পর্যটন কেন্দ্র তৈরী করা হয়েছে। এসব পর্যটন কেন্দ্রে মানুষের আগমন সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বিস্তারে বিঘ্ন ঘটায়। এ জন্য পার্বত্য এলাকায় পর্যটন শিল্পের বিরুদ্ধে পাহাড়ী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছে স্থানীয়রা। সেই সাথে সরকারকে কঠোর হস্তে সন্ত্রাসী দমন করে পর্যটন শিল্পের বিকাশ করার জন্য স্থানীয়রা দাবি জানিয়েছে।

সরেজমিনে জানা গেছে, পাবর্ত্য এলাকায় যাতে পর্যটকরা না আসে এ জন্য পাহাড়ী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। পর্যটকদের ভয়ভীতি দেখানো হয়, বিভিন্ন হোস্টেল ও রিসোর্টের মালিকদের কাছ থেকে উচ্চহারে চাঁদা আদায় করা হয়। এমন কী বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়।


আরো দেখুন:
  1. আবারও বাঘাইছড়িতে মালভর্তি ট্রাকে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের আগুন
  2. রাঙামাটির সাজেকে মালভর্তি ট্রাকে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের আগুন
  3. সাজেকে পর্যটকবাহী মাইক্রোবাস আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা
  4. পণ্যবোঝাই ট্রাকে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের আগুন দেয়ার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন
  5. রাঙামাটির সাজেকে গাড়ি চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা

গত বছর ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে বান্দবানের অন্যতম দর্শনীয় স্থান স্বর্ণ মন্দিরে দর্শনার্থীদের প্রবেশে অনির্দিষ্ট কালের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। রাঙামাটির অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সাজেক। এ পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ করার জন্য নানামুখী চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। গত বছর পর্যটন মওসুমে ৩১ ডিসেম্বর রাঙামাটির সাজেকে সাবেক এক সেনা কর্মকর্তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তার গাড়িতে আগুন দেয় উপজাতি সন্ত্রাসীরা। গাড়ীতে আগুন দেয়ার ঘটনা গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া হয়। যাতে করে পর্যটকরা সাজেকে পরিদর্শন করতে না আসে।

স্থানীয় সাজেক এলাকার বাসিন্দারা জানান, আমরা এই পর্যটন কেন্দ্রের কারণে অনেক উপকৃত হচ্ছি। কিন্তু কিছু সংখ্যক সন্ত্রাসীরা নানাভাবে এই পর্যটন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। গত কয়েক মাস আগে ‘বৃহত্তর সাজেক ইউনিয়নবাসী’ ব্যানারে পর্যটনের বিরুদ্ধে একটি লিফলেট প্রচার করেছে সন্ত্রাসীরা। তারা ওই লিফলেটে বেশকিছু মিথ্যা তথ্য তুলে ধরে ‘পর্যটন তুলে নাও- নিতে হবে’ এই শ্লোগান দেয়ার জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছে। কিন্তু এলাকাবাসী তাদের ওই লিফলেটের বিরুদ্ধে আরেকটি লিফলেট এলাকাবাসীর কাছে তুলে ধরেছে।

“প্রচারে: রুইলুই ও কংলাকপাড়ার দরিদ্র এলাকাবাসী” ব্যানারে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পাল্টা লিফলেট প্রচার করেছে। “সাজেক ইউনিয়নবাসীর কাছে রুইলুই ও কংলাকপাড়াবাসীর আকুল আবেদন, সাজেক এর রুইলুইপাড়া পর্যটন কেন্দ্র বন্ধের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান” শিরোনামের এ লিফলেটে বলা হয়েছে, সাজেক পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে এই দুই পাড়ার দরিদ্র জনগণের ব্যাপক আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটেছে। এখন আমরা স্ত্রী পরিবার নিয়ে খেয়ে পড়ে সুখে বাস করতে পারছি।

এই পর্যটনকে কেন্দ্র করে ৩৫জন দরিদ্র ত্রিপুরা ও মিজো, পাংখু ব্যক্তিবর্গের সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে। সেই সাথে স্থানীয় ব্যক্তি উদ্যোগে ছোট বড় ১২টি রিসোর্ট, হোস্টেল গড়ে উঠেছে, যার দ্বারা আরো অনেক পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন হয়েছে। আমরা এলাকাবাসী আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি সমুন্নত রাখতে বদ্ধ পরিকর, কাজেই অসামাজিক কার্যক্রমের অভিযোগ ভিত্তিহীন। পর্যটনের জন্য আমাদের কোন পরিবার ও ব্যক্তিকে উচ্ছেদ হতে হয়নি বরং হেডম্যানের সহায়তায় নতুন স্থানে পরিকল্পিত ও আধুনিক বাসস্থান তৈরী করে দেওয়া হয়েছে, যা আমাদের উপকৃত করেছে।

এই এলাকায় পর্যটনের উন্নয়ন হলে সকলেই উপকৃত হবো, কাজেই অন্যের কথায় এবং গুজবে কান দিয়ে আমাদের তথা নিজেদের পেটে লাথি মারবেন না। চাঁদাবাজীতে ব্যর্থ হয়ে এবং নিজেদের হীনস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে সাজেক এলাকাবাসীর নামে যে উসকানী মূল কথাবার্তা ও আন্দোলনের পাঁয়তারা চলছে তার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান। এই পর্যটনকে কেন্দ্র করে পরিবহন খাতে অনেক লোকের কর্মস্থান হয়েছে। সেই সাথে প্রতিদিন অত্র এলাকায় নতুন নতুন দোকানপাট গড়ে উঠেছে, যা এ অঞ্চলের জনগণের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাবে। মনে রাখবেন, অতিথিরা দেবতা সমান, এদের নিরাপত্তা প্রদান আপনার আমার সকলের দায়িত্ব।

সাজেক এলাকার পর্যটন এসোসিয়েশনের প্রশাসক সিয়াতা লুসাই এ প্রতিবেদকে বলেন,

এখানকার পর্যটন শিল্পের বিরুদ্ধে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। তারা চাঁদা দাবি করে, এলাকায় ভয় ভীতি দেখায়। গত বছর একটি গাড়ি পুড়িয়ে এলাকায় ভীতি সৃষ্টি করেছে।

সাজেক এলাকার এক হোটেলের মালিক ও ধর্ম প্রচারক মইতে লুসাই বলেন,

আমরা এ পর্যটন কেন্দ্রের মাধ্যমে অনেক আয় রোজগার করতে পারছি। কিন্তু সন্ত্রাসীরা আমাদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। ফলে আমাদের এখানে ব্যবসা করাই কষ্ট করে হয়ে যাচ্ছে। এখানকার পর্যটন শিল্পের বিরুদ্ধে লিফলেট ছেড়ে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান।

Exit mobile version