parbattanews

পার্বত্য চট্টগ্রামে অখণ্ডতা বিরোধী যেকোনো চক্রান্ত সমূলে উৎপাটন করতে হবে

পাকিস্তানের শোষণ, নিপিড়নের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে এবং ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে আমরা পেয়েছি একটি লাল সবুজের পতাকা, স্বাধীন রাষ্ট্র- বাংলাদেশ। আর এ বাংলাদেশেরই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশের নাম পার্বত্য চট্টগ্রাম- যা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান জেলা নিয়ে গঠিত। এই পার্বত্য চট্টগ্রাম আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের এক-দশমাংশ। প্রকৃতির নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দেশি বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র চলছে।

১৯৭১ সালে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন করে একটি দেশ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হলেও আজ এই বাংলাদেশকে ভেঙে “জুম্মল্যান্ড” নামক আরেকটি রাষ্ট্রের দাবি তুলছে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি চাকমা বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা। এইসব সন্ত্রাসী প্রথমত পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে রাষ্ট্রের প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মিছিল মিটিং চালিয়ে নিজেদের মতো করে জনমত গঠন এবং শক্তি সামর্থ্য অর্জন করছে। উপজাতি সন্ত্রাসীদের এইসব অনৈতিক দাবি আমাদের রাষ্ট্রের জন্য হুমকি স্বরূপ।

১৯৭১ সালে এদেশীয় রাজাকারেরা যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি, ঠিক তেমনি বর্তমানে সেই রাজাকারের বংশধরেরাই এখন চাচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে আলাদা হোক। তারা চায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা রাষ্ট্র ‘জুম্মল্যান্ড’ হোক।

বর্তমান চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের পিতা ত্রিদিব রায়ের মতো কতিপয় পাকিস্তানপ্রেমী কুলাংগার ১৯৭১ সালে থাকলেও, সেসময় পাহাড়ি-বাঙ্গালী বীর মুক্তিযোদ্ধারা ঐকবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ করেছিল। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সমগ্র দেশ শত্রু মুক্ত করতে গিয়ে ত্রিশ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও চাকমা সার্কেল চিফ ত্রিদিব রায়ের কিছু উত্তরসূরি উপজাতি সন্ত্রাসীরা সেই লাখো শহীদের রক্তে ভেজা পবিত্র মাটি পার্বত্য চট্টগ্রামের অখণ্ডতাকে অবমাননা করে পাহাড়ে উড়াচ্ছে জুম্মল্যান্ডের পতাকা। তারা বানিয়েছে জুম্মল্যান্ডের মানচিত্র, সরকারি মনোগ্রাম, পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, জুম্মল্যান্ডের মুদ্রা এবং গঠন করেছে জুম্মল্যান্ডের সশস্ত্র বাহিনী!


আরও পড়ুন

কতিপয় পার্বত্য সন্ত্রাসীদের অনৈতিক দাবীর কাছে বাংলাদেশের জনগণ নতি স্বীকার করতে পারে না

শান্তিচুক্তির দীর্ঘদিন পরেও পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের কেন টার্গেটে সরকার ও সেনাবাহিনী?

পার্বত্য চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার গাইড লাইন


আর প্রতিনিয়ত এসব তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করছে। এদেরই অন্যতম হোতা করুণালঙ্কার ভিক্ষু নামের এক ভেকধারি উপজাতীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী নিজেকে ‘স্বাধীন জুম্মল্যান্ডের’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিচয় দিয়ে ‘স্বাধীন জুম্মল্যান্ড’ প্রতিষ্ঠার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল উপজাতিদের সমর্থন চেয়েছেন। শুধু তাই নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বাধীন করার মতো পর্যাপ্ত অস্ত্র, গোলাবারুদ তাদের হাতে মজুদ রয়েছে বলেও এই ভিক্ষু দাবি করেন। তাদের এইসব প্রচার-প্রচারণা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। দেশপ্রেমী বাংলার সকল জনতার উচিৎ, এইসব উপজাতি সন্ত্রাসীদের রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এক হয়ে রুখে দাঁড়ানো।

পরিশেষে বলতে চাই, আমরা সেই ’৭১ এর বীর জাতি। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীন ভূখণ্ড- বাংলাদেশ। এই ভূখণ্ডকে যদি কেউ আলাদা করতে চায় তাহলে এর পরিণাম হবে খুবই ভয়াবহ। প্রয়োজনে দেশপ্রেমিক পাহাড়ি-বাঙ্গালী তথা বাংলার ১৬ কোটি জনতা ঐকবদ্ধ হয়ে আরো একটি ’৭১ রচিত করবে তবুও বাংলার ১ ইঞ্চি মাটিও উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেবে না। পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশেরই অবিচ্ছেদ্য ভূখণ্ড। উপজাতি চাকমা সন্ত্রাসীদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে দেশের ১৬ কোটি মানুষ রুখে দাঁড়াবে। এই বাংলাদেশ আমার, আপনার, আমাদের সবার। এই বাংলাদেশ আমাদের ১৬ কোটি মানুষের প্রাণের বাংলাদেশ। তাই দেশবিরোধী সন্ত্রাসীদের প্রতি আহ্বান, উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড ও দেশদ্রোহী কার্যক্রমসহ সকল অপতৎপরতা পরিহার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার এটাই সঠিক সময়। এই দেশের মানুষের ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়া কোনো রাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসীর উচিত হবে না। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে দেশ বিরোধী সন্ত্রাসীদের সমূলে উৎখাত করতে যে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণে তারা পিছুপা হবে না।

লেখক: বান্দরবান থেকে

Exit mobile version