পার্বত্য চট্টগ্রামে বীর সেনানিদের বীরত্বগাঁথা-৮
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে জানা যায়, ১৯৮৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে ১৭ বিএমএ দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের সাথে কমিশন লাভ করেন লেফটেন্যান্ট (পরবর্তীতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল) মাহদী নাছরুল্লাহ শাহীর, বীর প্রতীক, ই বেংগল (তৎকালীন ইউনিট ১৬ ই বেংগল)।
১৯৯০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। বেতছড়িতে অবৈধ চাঁদা আদায়কারীদের গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে চলাচলের রাস্তায় এ্যামবুশ (ফাঁদ) পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্যাপ্টেন সৈয়দ সিরাজ-উল-হক এর নেতৃত্বে একটি টহল দল গভীর রাতে যাত্রা শুরু করে এবং সেই টহল দলের উপ অধিনায়ক ছিলেন লে. মাহদী। তখন তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের বরকল জোনের ১৬ ই বেংগল এ কর্মরত ছিলেন।
পরে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছানোর পর দল অধিনায়ক টহল দলটিকে ছোট ছোট উপদলে বিভক্ত করে অবস্থান নিতে নির্দেশ দেন। অতঃপর দল অধিনায়ক যখন উপদল সমূহের অবস্থান সুবিন্যস্ত করছিলেন তখন নায়েক মো. কামাল উদ্দিন অবৈধ চাঁদা আদায়কারী দলের একজন দুষ্কৃতিকারীকে বান্ডুলিয়ার পরিহিত অবস্থায় একটি জুম ঘর থেকে বের হতে দেখেন।
এসময় টহল অধিনায়ক সন্ত্রাসীদের আরও সদস্য জুম ঘরে অবস্থান করছে বলে অনুমান করেন এবং এ্যামবুশের পরিবর্তে জুম ঘরে রেইড করার পরিকল্পনা করেন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী টহল উপ অধিনায়ক লে. মাহদী বিলম্ব না করে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উঁচু পাহাড়ের দুর্গম পথে জুম ঘরের সন্নিকটে পৌছে যান। এসময় তার সাথে ছিল ল্যাঃ নায়েক মোঃ মতিউর রহমান। ক্যাপ্টেন সৈয়দ সিরাজ-উল-হক এবং সিপাহী মোঃ মোজাম্মেল হোসেনও লেঃ মাহদীকে অনুসরণ করে জুম ঘরের নিকটে পৌঁছে যান এবং উভয় দল একসাথে অতর্কিতভাবে দুষ্কৃতিকারীদের ঘিরে ফেলেন। ঘটনার আকস্মিকতায় দুস্কৃতিকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং সেনাবাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে।
এই সফল অভিযানে অবৈধ অর্থ আদায়কারী ৪ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। সেইসাথে একটি এসএমজি, ৩টি ম্যাগাজিনসহ ৯০ রাউন্ড এ্যামোনিশন, অবৈধ চাঁদার অর্থ এবং গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র উদ্ধার হয়।
পরবর্তীতে ১৯৯১ সালের ২২ মার্চ তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি লেঃ মাহদী নাছরুল্লাহ শাহীর’কে অভিযানে অনুকরণীয় সাহসীকতা ও বীরত্বের পরিচয় রাখায় বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন।