‘পার্বত্য চট্টগ্রামে শতকরা একভাগ জনগণও এখন জেএসএসকে বিশ্বাস করে না’

fec-image

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জন সংহতি সমিতির মধ্যে শান্তি চুক্তিটি হয়েছিল।

এই শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান হয়েছিল। পাহাড়ে তার একটা ইতিবাচক প্রভাবও পড়তে শুরু করেছিল। কিন্তু অল্প সময়ের আবার নতুন করে আলোচনার আসছে এই চুক্তি। শান্তি চুক্তি আলোচনায় আসার কারণ, মূলত নতুন প্রজন্মকে এই সম্পর্কে সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ ধারণা দেওয়া।

শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের সময় যাদের জন্ম তারা এখন দেশের নেতৃত্বের পর্যায়ে অবস্থান করছে। তাদের অনেকের পার্বত্য চুক্তির বিষয়ে সঠিক তথ্য না জানার কারণে অনেক সময় বিভ্রান্তির শিকার হয়। অনেকের প্রশ্ন শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর ২৫ বছর পার হলেও কোন এখনো পাহাড়ে শান্তি আসেনি। অথচ সরকার, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো প্রতি বছর ২ ডিসেম্বর  মহাসমারোহে চুক্তির বর্ষপূর্তি পালন করে।

লক্ষ্য করা যায়, শান্তি চুক্তি বাস্তাবায়ন না হওয়ার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (PCJSS) সরকারকে দোষারোপ করে নানা বিবৃতি দিয়ে থাকে। তবে তাদের কোন আন্দোলন সংগ্রামে করতে দেখা যায় না। আবার তারা নতুন প্রজন্মকে শান্তিচুক্তি নিয়ে নানাভাবে ভুল ধারণা দিয়ে সশস্ত্র আন্দোলনে অনুপ্রাণিত করে। এই সশস্ত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি সন্তু লারমা।

পার্বত্য ছাত্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি (PCJSS) প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার সাংগঠনিক নীতি ছিল শত্রুকে অধিকতর শত্রু মনে না করে নিরপেক্ষ ভাবা। নিরপেক্ষদের নিজের দলে নিয়ে সংগ্রামী বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া। এছাড়াও তার ক্ষমা করা ও ভুলে  যাওয়া ছিলো সাংগঠনিক নীতির একমাত্র হাতিয়ার।

বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ প্রসীত ও জেএসএস (সন্তু) শান্তি চুক্তি বিরোধী দল হিসাবে পরিণত হয়েছে। সন্তু লারমা নিজে কিছুটা নিরাপত্তার পেলেও তার ব্যাপক কর্মী বাহিনী নিরাপত্তা হীন হয়ে পড়েছে। যার ফলে তারা সশস্ত্র আন্দোলনের প্রেরণা দিয়ে শতশত কর্মহীন যুবককে অস্বাভাবিক জীবনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অপরদিকে মূল ইউপিডিএফ প্রসীত নিয়মাতান্ত্রিক আন্দোলনে কথা বলে ও জেএসএস দলের সাথে বিরোধের কারণে তাদের আত্মরক্ষা বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হয়। এরফলে শুরু হয় আত্মরক্ষার তাগিদে উভয়ের দলে বেআইনি অস্ত্র সংগ্রহ, ব্যবহার ও কর্মযজ্ঞ।

এছাড়াও তারা নিজেদের ক্ষমতা জানান দিতে দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংগঠিত করে রাষ্ট্রের কাছে বেআইনি হয়ে পড়ে।  পার্বত্য চট্রগ্রামে প্রসীত খীসা ও সন্তু লারমার দলের সর্বক্ষণ সশস্ত্র আন্দোলনের হুমকি শোনা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামে দক্ষিণাঞ্চল খ্যাত রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায় কাপ্তাই, রাজস্থলী, জুরাইছড়ি, রুমা, রোয়াংছড়ি, থানছি, লামা ও বান্দরবান সদর উপজেলাসহ জেএসএস এর কুকর্ম অপহরণ, খুন, গুম ও রক্তপাতের ঘটনা প্রতিনিয়ত দেখতে পায় সাধারণ মানুষ।

জেএসএসের এই নির্যাতনে মাত্রা বেড়ে গেলে বান্দরবানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী মারমা ন্যাশনাল পার্টি (মগ) ও বম সম্প্রদায়ের কুকি চীন খ্যাত বম পার্টির জন্ম হয়।

ইদানীং দেখা যায়, রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলা ও বান্দরবান জেলায় জেএসএস (সন্তু) সংগঠনের সাথে মগ পার্টির সশস্ত্র যুদ্ধে অনেকেই হতাহত হয়। আর বম সংগঠনের সশস্ত্র ও জেএসএস জেএলএ খ্যাত সন্ত্রাসীদের একাধিক বার সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়লে এতেও উভয়ের হতাহতে খবর আসে।

ইতিমধ্যে সারা বাংলাদেশের তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে যে, কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (নাথান) বম সংগঠনের সাথে দেশের সব চেয়ে কুখ্যাত সশস্ত্র সন্ত্রাসী জঙ্গি সংগঠনের যোগসূত্র পাওয়া যায়। এমন তথ্যের ভিত্তিতে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা অভিযান শুরু করে। ফলে সরকার বনাম কুকি চীন বম পার্টির জঙ্গি সংগঠন সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। যার ফলে উভয়ের অনেক হানাহানি খবর পাওয়া যায়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি সশস্ত্র সংগঠনের মারণাস্ত্রের ব্যবহার দেশের মানুষকে হতবাক করেছে। জেএসএস তাদের রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত কারণে পাহাড়ি-বাঙালি সাধারণ জনগণের শান্তি, উন্নয়ন ও অর্থনৈতিকভাবে বাধাপ্রাপ্ত করে অধিক পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এছাড়াও জেএসএস পার্বত্য বান্দরবানে ১০টি ভাষাভাষি ১৩টি জাতিসত্তা ও জনগণকে বিভ্রান্ত ও বিপদাপন্ন করে চলছে।

বর্তমানে জেএসএসের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করায় তাদের শত্রু সংখ্যা বেড়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের শতকরা ১ ভাগ জনগণ এখন আর জেএসএসকে বিশ্বাস করে না। ইউপিডিএফ প্রসীত দলের লক্ষ্য পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও মূল জেএসএসের লক্ষ্য জুম্মল্যান্ড গঠন ও বাস্তবায়ন করা।পার্বত্য চট্টগ্রাম (শান্তি) চুক্তির বাহিরে গিয়ে সরকারের কাছ থেকে অধিকার আদায় করা সম্ভব নয় এমনটাই মনে করেন পাহাড়ি জনগণ। তাই তারা চুক্তি বিরোধীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। তাই সকলের উচিত অচিরেই শান্তিচুক্তি বিরোধী শক্তিকে দমন করে সাধারণ জনগণের অধিকার আদায়ে তৎপর হওয়া।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন