পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি বড় কারাগারে পরিণত হয়েছে: সন্তু লারমা

fec-image

পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি বড় কারাগারে পরিণত হয়েছে, বড় সেনানিবাসে পরিনত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির আয়োজনে আলোচনা সভায় এসব মন্তব্য করেন সংগঠনটির সভাপতি শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা ।

বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে আজ দুটি পক্ষ। একটি পক্ষ যারা পাহাড়ের নিরীহ মানুষ, যারা চুক্তির বাস্তবায়ন চাই। আর আরেকটি পক্ষ সরকার এবং তার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পক্ষ। জনসংহতি সমিতি চুক্তির আলোকে যে আইনগুলো প্রণীত হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন চায়। সরকার আজ জনসংহতি সমিতিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত করে নেতাকর্মীদের নানাভাবে দমন-পীড়ন করছে। অনেক নেতাকর্মীকে আজ মামলা দিয়ে, হামলা করে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে। বহিরাগত যে গরিব বাঙালিদের জিয়াউর রহমান নিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এখনো চলমান।

জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত বাস্তব চিত্রসমূহ তুলে ধরে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল এর বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ আইনে ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে সাধারণ প্রশাসন, আইন শৃংখলা, পুলিশ ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, বন ও পরিবেশ, পর্যটন, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন ইত্যাদি রাজনৈতিক প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ও কার্যাবলী হস্তান্তর করা। নির্বাচন বিধিমালা ও স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা বিধিমালা প্রণয়ন পূর্বক আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা, ’অপারেশন উত্তরণ’ নামক সেনাশাসনসহ সকল অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করা; ভূমি কমিশনের মাধ্যমে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করে বেদখল হওয়ার জায়গা জমি জুম্মদের নিকট ফেরত দেয়ার দাবি করেন।

তিনি আরও বলেন, সরকার পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে, সর্বোপরি জুম্ম জনগণ জাতিগতভাবে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতৃত্ব কর্তৃক সৃষ্ট সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ, জেএসএস (এন এন লারমা) সংস্কারপন্থী, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক, মগ পার্টি, আরএসও, আরসাসহ পার্বত্য চুক্তি বিরোধী ও মৌলবাদী জঙ্গি গোষ্ঠীর আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে খুন অপহরণ মুক্তিপণ আদায় ইত্যাদি সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে এই অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের ব্যানারে সংগটিত করে মুসলিম সেটেলার উগ্র জাতীয়তাবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে জনসংহতি সমিতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে।

ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, পার্বত্য চুক্তির দুই যুগ পূর্তি আজ বিষাদ, বেদনার সঙ্গে পালন করতে হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের একটি কলোনি হিসেবে দেখছি আমি। উপনিবেশ হিসেবেই পাহাড়কে ব্যবহার করা হচ্ছে। পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়কে উপনিবেশ নয়, সরকারি ভাষায় উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু ২৪ বছরেও তা হয়ে উঠতে পারলো না।

বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, ২৪ বছর পর চুক্তি নিয়ে যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস থাকার কথা ছিল, তা আজ নেই বলে আমার মনে হয়। জিয়াউর রহমান যখন চরভাঙা গরিব বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তখন তরুণ সংসদ সদস্য হিসেবে আমরা বিরোধিতা করেছিলাম।

পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের কোচেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, আমরা শান্তি চেয়েছিলাম বলেই চুক্তি করেছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি, বাস্তবতা তাই বলে দেয়। অন্তত শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হয়েছে, ন্যূনতম তাও বলতে পারি না। উল্টো একতরফাভাবে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে বলে আমরা দেখেছি। আদিবাসী মানুষের আদি জীবিকার ওপরও হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। তাদের সমাজ, সংস্কৃতি, পেশা, অর্থনীতি সবকিছুর ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিষ্টার সারা হোসেন ও বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন