পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে একটি “সন্ত্রাসী দল” বলে ঘোষণা-ভারতের গুয়াহাটি হাইকোর্টের

fec-image

ভারতের গুয়াহাটি হাইকোর্ট রায়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)-কে একটি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে দেওয়া ৬৯ পৃষ্ঠার রায়ে হাইকোর্ট জানায়, ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা (NIA) বনাম রোহমিংলিয়ানা মামলার শুনানিতে সংগঠনটির বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতা, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালানের গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

২০১৩ সালের ৭ মার্চ আসাম রাইফেলস চট্টগ্রাম সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ চারজনকে আটক করে। এদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি নাগরিক — মনি ত্রিপুরা, রবি চাকমা ও সবুজ চাকমা। তাদের কাছ থেকে ৩১টি একে-৪৭ রাইফেল, একটি এলএমজি, একটি ব্রাউনিং অটোমেটিক রাইফেল এবং কয়েকশ রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়। গুয়াহাটি হাইকোর্ট এর আদেশের ১৮ নম্বর অনুচ্ছেদে উঠে আসে, এরা সবাই পিসিজেএসএস-এর সক্রিয় সদস্য এবং এই অস্ত্রসম্ভার সংগঠনটির নির্দেশেই তারা ভারতে নিয়ে এসেছিল। “অস্ত্রগুলো বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির একটি সন্ত্রাসী দলের বলে অভিযোগ করা হয়েছে।” হাইকোর্ট পিসিজেএসএসকে বর্ণনা করতে ১০ বার সন্ত্রাসী শব্দটি ব্যবহার করেছে।

১৮ অক্টোবর সুহাস চাকমা তার ফেসবুক পোস্টে দেওয়া এক বিবৃতিতে এসব তথ্য তুলে ধরেন। হাইকোর্ট এর ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়,  “পি.ডবিøউ. (প্রসিকিউশন উইটনেস ) ১৬-এর সাক্ষ্য থেকে আরও জানা যায় যে, মামলার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া তিন বাংলাদেশি নাগরিক, জিজ্ঞাসাবাদের সময় স্বীকার করেছেন যে তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য।”

৪ নম্বর অনুচ্ছেদে, গুয়াহাটি হাইকোর্ট উল্লেখ করেছে, “এখানে উল্লেখ্য যে, মামলাটি এনআইএ-এর কাছে হস্তান্তরের আগে, আইজলের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চার অভিযুক্ত ব্যক্তি, মনি ত্রিপুরা, সবুজ চাকমা, রবি চাকমা এবং সি. লালনঘকথাঙ্গা @ নাঘাকা-কে জামিন দিয়েছিলেন এবং তারা এনআইএ এবং  ট্রায়াল কোর্টে হাজির হতে ব্যর্থ হন, গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্য তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু, বিচারের সময় তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়নি।”

গুয়াহাটি হাইকোর্টের রায়ের পর, ভারত সরকার স্পষ্টতই পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস), যাকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে তাকে কোনো স্থান দিতে পারে না। পিসিজেএসএস-এর অস্ত্র, মাদক এবং ক্যাডারদের বারবার আটক করা হয়েছে – রায়ের পর থেকে সমস্ত পিসিজেএসএস প্রধান নেতারা ভারতে পলাতক। ২০২৫ সালের ১৯ জুন আসাম রাইফেলস কর্তৃক জব্দ করা ১০ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য আটকের বিচারে পিসিজেএসএসকে শীঘ্রই একটি মাদক-সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হবে। যদি পিসিজেএসএস ক্যাডাররা ভারতে এই অস্ত্র ও মাদক পাচার অব্যাহত রাখে, তাহলে তাদের প্রত্যেককে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে এবং ভারত থেকে নির্বাসনের সম্মুখীন হতে হবে। তাদের প্রত্যেককে মনি ত্রিপুরা, রবি চাকমা এবং সবুজ চাকমার মতো পলাতক হতে হবে – ভারতে থাকতে পারবে না । যদি পিসিজেএসএস নেতারা যারা ভারতে অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান পরিচালনা করেন তারা মনে করেন যে তারা নিরাপদ এবং কিছুই হবে না, সেই দিনগুলো চলে গেছে – এবং সেটা প্রত্যেকেই আদালতের মামলার মুখোমুখি হওয়া পর্যন্ত অনুভব করে। বাংলাদেশ তাদের জন্য বন্ধ। পিসিজেএসএস কার্যত তামিল ইলমের লিবারেশন টাইগার্সে (এলটিটিইি) পরিণত হচ্ছে ।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন