parbattanews

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে নুহাশের মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক

তরুণ নির্মাতা নুহাশ হুমায়ূন ‘রানিং রাফি’ নামে টেকনো মোবাইল ফোনের একটি বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেন। বিজ্ঞাপনটি টেলিভিশনের জন্য বানানো হলেও প্রথমে প্রকাশ করা হয় ইউটিউব এবং ফেসবুকে। বিজ্ঞাপনটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শুরু হয় বিতর্ক। চলতে থাকে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।

অনেকে বিজ্ঞাপনটির প্রশংসা করেন, আবার অনেকেই বিজ্ঞাপনটির ঘটনা প্রবাহ পাহাড়ি এলাকার পাহাড়ি-বাঙালি সম্পর্কের বাস্তব চিত্রের সাথে সাংঘর্ষিক বলে মনে করেন, কেউ কেউ মনে করেন বিজ্ঞাপনটিতে পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালি এবং ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে সম্প্রীতির চিত্র ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে সেখানকার পাহাড়ি ও বাঙালিদের সম্পর্কের ঐতিহাসিক পটভূমির সত্যতাকে খর্ব করা হয়েছে।

টেকনোর ফেইসবুক পেইজে বিজ্ঞাপনের ভিডিওটির নিচে সিফাত ইবনে জামান লিখেন, ‘নুহাশকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ব্যাতিক্রম একটা অ্যাড দেখানোর জন্য।’

‘খুব সুন্দর একটা বিজ্ঞাপন।’ – মনিরুজ্জামান মনিরের মন্তব্য।

ইউটিউবে ভিডিওটির নিচে পথিক চাকমা লিখেন, ‘অতি আবেগ, কল্পনা প্রসুত, অসংগতি, সর্বোপরি বাস্তবের সাথে কোন মিল নাই।’

‘সম্প্রীতি বন্ধনের খুব সুন্দর একটা বিজ্ঞাপন, বাবার ছোয়া পেয়েছেন নুহাশ ভাই।’ – মন্তব্য করে আবদুল মুমিন।

ব্লগার আরিফ জেবতিক লিখেছেন, পাহাড়ে বাঙালিরা আছে, কিন্ত তারা ইফতারের সময় টের পায় না। তাঁরা দুনিয়ার একমাত্র বাঙালি যারা মাচাং ঘরে বাস করে। তাঁদের বিদ্যুত আছে, কিন্তু ঘড়ি নাই। তাই এক পাহাড়ি ছেলেকে রোজ ইফতারের সময় দৌঁড়ে দৌঁড়ে পাহাড়ে পাহাড়ে গিয়ে বলে দিয়ে আসতে হয় ‘ইফতারের টাইম হইছে, ইফতার করেন।’ ….এটা হইল বিজ্ঞাপন! আরে ……, দৌঁড়ায়া দৌঁড়াইয়া ঘরে ঘরে গিয়া বলতে বলতে তো তারাবির সময় হয়ে যাবে। তার চাইতে চোঙা দিয়া একটা আজান দিলেও তো পারে, নাকি?

‘………. এখন তো ইফতারের লিখিত সময়সূচি সহজেই পাওয়া যায়। রেডিওতে শুনে মাইলকয়েক দৌড়ে জানাতে হবে কেন! ঘড়ি না থাকলেও তো, ইফতার করার ব্যাপারে ইসলামের একটা বিধান আছে। এটা একটা কিম্ভূতকিমাকার বিজ্ঞাপন।’ – লিখেছেন পাহাড়ের অধিবাসী নাজমুল আহসান।

‘….পাহাড়ের এতগুলি বছরের ইতিহাসকে এক লহমায় বিকৃত করে ফেলল!….’- দাবী ব্লগার সুসুপ্ত পাঠকের।

সাংবাদিক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ লিখেছেন, ‌‌‌‌’মুসলিম ছেলে যখন পূজা দেখতে যায়, হোলি খেলে তখন চেতনাবাজ, মুক্তমনারা বলেন, ধর্ম যার যার- উৎসব সবার। কিন্তু পাহাড়ি ছেলে যখন সেহরিতে মুসলিম পরিবারকে ডেকে তোলে, তখন তারা ধুঁয়া তোলে জাত গেল জাত গেল বলে। রমজানের রোজা ধর্মীয় আচার। কিন্তু ইফতারী, সেহেরী শুধু ধর্মীর আচারের আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ নেই আজ।

রমজান উপলক্ষে বিশ্বের অমুসলিম দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা মুসলিম সম্প্রদায়কে দাওয়াত দিয়ে ইফতারি করাচ্ছেন। ব্যক্তি উদ্যোগেও অনেক অমুসলিম ধনী/নিঃধনী সাধারণ মানুষ রোজাদারদের ইফতার কারাচ্ছেন। বিশ্বে বহু অমুসলিম রোজা রাখছেন। ভারতের কারাগারগুলোতে কয়েদিরা রোজা রাখছেন এমন খবর দেখেছি। ভারতের বিভিন্ন মন্দিরগুলোতেও রোজাদারদের নিমন্ত্রণ করে ইফতার করানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। বাংলাদেশের অমুসলিম দুতাবাসগুলোও ইফতার পার্টি দিয়ে থাকে। সেখানে তারাও এই ইফতারে শরীক হয়।

এমনকি রাজধানীর মায়াকাননের বৌদ্ধ মন্দির বহুবছর যাবত রমজানের ত্রিশদিনই ইফতার বিতরণ করে থাকে মন্দির প্রাঙ্গনে। সারা বিশ্বে এধরণের খবর প্রশংসিত হচ্ছে। কেবল ব্যতিক্রম বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে। রমজানে পাহাড়ি একটি ছেলে ছেলেটি বহু দুরের পাহাড়ী গ্রাম থেকে দীর্ঘ দুর্গম পথ পেরিয়ে বাঙালি গ্রামে ঢুকে মুসলিমদের ইফতার ও সেহেরির সময় জানিয়ে সতর্ক করে। ফলে একদিন মুসলিমরা তাকে তাদের সাথে ইফতারে শরীক করে এবং তার কষ্ট লাঘবের জন্য একটি মোবাইল ফোন গিফট করে।

এই সাধারণ কাহিনী নিয়ে টেলি বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেছেন নন্দিত কথা শিল্পী হুমায়ূন আহম্মেদের পূত্র নুহাশ হুমায়ূন। অমনি জাত গেল জাত গেল বলে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে পাহাড়ের একটি গোষ্ঠী। সাম্প্রদায়িকতা, সংস্কৃতি, ধর্মান্তরকরণের প্রভৃতির গন্ধ আবিস্কার করে এই গোষ্ঠীটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গরম করে ফেলছে। এরা কারা? এরা পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সোহার্দ্য, সহাবস্থান, শান্তি ও উন্নতির পথে প্রতিবন্ধক। এরা তারা যারা চায় না পাহাড়ে পাহাড়ী বাঙালী মিলে মিশে থাক।

এরা তারা যারা কোনো পাহাড়ি মেয়ে বাঙালি ছেলেকে ভালবেসে বিয়ে করলে নিলামে তুলে গণধর্ষণ করে হত্যা করে, আবার কোনো বাঙালি মেয়ে পাহাড়ি ছেলেকে বিয়ে করলে আহ্লাদে আটখানা হয়। এরা পাহাড়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, অপহরণ, বিচ্ছিন্নবাদের পরিচালক ও পৃষ্ঠপোষক। দূর্ভাগ্য হলো- এদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়েছে কিছু বুদ্ধিজীবী শেয়াল, সুশীল কাক ও বহুরূপী মিডিয়া। অবশ্য তাতে পাহাড়ের সাধারণ মানুষের কিছু যায় আসে না। তারা এই ভেদনীতিকে থোড়াই কেয়ার করে সম্প্রীতির জয়গানই গাইছে।’

বিজ্ঞাপনটি তৈরির সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, আজানের শব্দ শোনা যায় না এমন একটি এলাকায় রমজান মাসে সেহেরি ও ইফতারের সময় পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালি মুসলমানদের আজানের সময় জানিয়ে দেয়া এক কিশোরের গল্পের মাধ্যমে পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রীতির চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে বিজ্ঞাপনটিতে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে নির্মাতা নুহাশ হুমায়ূন আলাদাভাবে বিবৃতি দেবেন বলে জানা গেছে।

Exit mobile version