পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন সংশোধন চুড়ান্ত আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদন
♦চেয়ারম্যানসহ তিন জনের সম্মতি পেলেই পাহাড়ের ভূমিবিরোধ নিয়ে যে কোনো আবেদনের নিষ্পত্তি করতে পারবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন♦ সচিবসহ(অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ) কমিশনে উপজাতীয় সদস্য সংখ্যা হবে চার জন♦ ভবিষ্যতে বিচারপতি উপজাতীয় হলে সম্পূর্ণ কমিশনই উপজাতীয় অধ্যুষিত হবে♦
পার্বত্য নিউজ রিপোর্ট :
মন্ত্রিসভা পার্বত্য চট্টগ্রাম (সিএইচটি) ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন-২০১৩ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। সংশোধনের ব্যাপারে বিভিন্ন পক্ষের উদ্বেগের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে আজ এ অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। বাসস, বিডি নিউজ।
সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে বিভিন্ন পক্ষ থেকে উত্থাপিত সকল উদ্বেগ মন্ত্রিসভার কাছে পেশ করা হয়। মন্ত্রীসভার সর্বশেষ বৈঠকে এ আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। চূড়ান্ত অনুমোদনে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বিভিন্ন পক্ষ থেকে যেসব উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছে মন্ত্রিসভায় তার প্রতিটি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং এই সংশোধনী যথাযথ বলে অভিমত প্রকাশ করা হয় ।’
তিনি আরো বলেন, এ আইন বিষয়ে যারা উদ্বিগ্ন ছিলেন তাদের এটি আগাগোড়া পাঠ করা এবং গভীরভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। আইনটি যথার্থ হয়েছে মন্তব্য করে সচিব বলেন, “যারা উদ্বিগ্ন, তারা যদি আইনটি ভালভাবে পর্যালোচনা করেন এবং গভীরে যান, তাহলে বুঝতে পারবেন, এ আইন পাহাড়ি বাঙ্গালী সবার জন্যই কল্যাণকর হবে। কারো ক্ষতির কারণ হবে না।”
মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইঞা সেদিন সাংবাদিকদের বলেন, ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তিতে কমিশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় কিছুটা পরিবর্তন করা হচ্ছে।
বর্তমান আইনে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে কমিশনের সর্বসম্মতির প্রয়োজন হয় বা চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে ধরা হয়। আইন সংশোধন হলে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিতে কমিশনের সর্বসম্মতি বা চেয়ারম্যানসহ সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন প্রয়োজন হবে।
কমিশনের পাঁচ সদস্যের মধ্যে চেয়ারম্যানসহ মোট তিন জনের সিদ্ধান্ত এক হলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির আলোকে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য এই কমিশনকে আরো তৎপর ও কার্যকর করাই ছিল মূলত: এর লক্ষ্য।
উপজাতি ও বাঙালি নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সংগঠন ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তৈরি এ সংশোধনীতে প্রস্তাব করা হয় যে, অবৈধভাবে দখলকৃত ও শরণার্থী পুনর্বাসনে ব্যবহৃত পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল ভূমি এই কমিশনের আওতায় আসবে।
প্রস্তাব অনুযায়ী একজন উপজাতি সদস্য অথবা তাদের সম্প্রদায়ভূক্ত কোনো ব্যক্তি এ কমিশনের সদস্য সচিব হওয়ার ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের একজন সার্কেল প্রধান যদি সদস্য হিসাবে কমিশন আহুত বৈঠকে হাজির হতে না পারেন, সেক্ষেত্রে তিনি যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ার পূর্ণ কর্তৃত্ব দিয়ে একজন প্রতিনিধি পাঠাতে পারবেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কমিশন চেয়ারম্যান (আপিল বিভাগের অব. বিচারপতি)সহ অধিকাংশ কমিশন সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে এই কমিশন যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। সংশোধনীতে আরো প্রস্তাব করা হয় যে, ভূমি মন্ত্রণালয় এর আইনের বাস্তবায়নে তিন মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান প্রণয়ন করতে পারবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এই আইনের প্রয়োজনীয় বিধিমালা প্রণয়নের জন্য আগামী ৩ মাসের সময় দেওয়া হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ১৯৯৭ সালে প্রণয়নকালে সেখানে ৬ মাসের মধ্যেই বিধিমালা করার কথা বলা হলেও তা করা সম্ভব হয়নি। সংশোধনিতে (সময় বেঁধে দেওয়া) বিষয়টি তুলে দেওয়া হয়েছে।
এই আইনে মূলত অবৈধ দখল, অবৈধ বন্দোবস্ত দেওয়ার বিষয়টি এই কমিশন নিষ্পত্তি করবে ও আইনের বাইরেও বৈধ মালিকদের হাত ছাড়া ভূমির জটিলতাও সমাধান করা হবে। চলতি আইনে ‘পুনর্বাসিত শরণার্থীদের ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ’ পার্বত্য চট্টগামের প্রচলিত আইনে নিষ্পত্তি করার কথা বলা হয়েছে। এর সঙ্গে ‘অবৈধ বন্দোবস্ত ও বেদখল’ জমির বিরোধও যুক্ত করতে বলা হয়েছে খসড়ায়।
প্রচলিত আইনে কোনো বৈধ মালিকদের ভূমি বলতে কেবল জমি বোঝানো হলেও সংশোধিত আইনে ভূমি বলতে জমি ও জলাভূমি বোঝানো হবে।
সংশোধিত আইনের খসড়ায় কমিশনে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এর আগে ৪টি কমিশন এখানে কাজ করেছে। এর আগে গত ২৭ মে এই খসড়ায় নীতিগত অনুমতি দেয়। বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিমন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের জুলাই মাসে ভূমি কমিশন পুনর্গঠনের পর পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তির জন্য জরিপ চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে জনসংহতি সমিতিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠন, সুশীল সমাজ, তিনটি সার্কেলের প্রধানরা (তিন রাজাসহ) এর বিরোধিতা করে।
তাদের বক্তব্য ছিল, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন এই ভূমি কমিশন আইন সংশোধন করা না হলে এই জরিপ সফল হবে না।
এদিকে মন্ত্রিসভা খসড়া অনুমোদনের পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী ৬টি বাঙালী সংগঠন এই আইনের বিরুদ্ধে হরতাল অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছে। কিন্তু চুড়ান্ত আইনে তাদের দাবীর কোনো বিষয়ই বিবেচনায় রাখা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ানম্যান ইঞ্জিয়ার আলকাস আল মামুন।
তিনি বলেন, এই আইন করে চুড়ান্তভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালীদের উচ্ছেদ নিশ্চিত করা হলো। কমিশনে বাঙালীদের জমি নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে অথচ সেখানে বাঙালীদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। কমিশনে সচিবসহ চারজনই উপজাতীয় হওয়ায় একজন অবসরপ্রাপ্ত বাঙালী বিচারক হবেন তাদের হাতের পুতুল। ফলে উপজাতিদের কাজের বিরোধিতা করার ক্ষমতা তার থাকবেনা। অন্যদিকে ভবিষতে যদি কোনো উপজাতীয় বিচারপতি কমিশনের চেয়ারম্যান হন তাহলে এটি উপজাতীয় ভূমি কমিশনে পরিণত হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালীরা এই অবৈধ ভূমি কমিশন মানবেনা।
তিনি বলেন, পাহাড়কে আবাদ করতে, সন্ত্রাসী সন্তু লারমাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে পাহাড়ের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে বহুবার বুকের রক্ত দিয়েছে বাঙালী। প্রয়োজনে আবার বুকের রক্ত দেবো কিন্তু এই কালো আইন মানবো না।
পার্বত্য জেলায় যেখানে উপজাতী ও অউপজাতির বসবাস প্রায় সমান সেখানে ভূমি কমিশন গঠনে ৪(চার)জন সদস্যেই উপজাতী এ পরিস্থিতিতে বাঙালীরা ভূমি অধিকারসহ সব ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। বাঙালী উচ্ছেদ তরান্বিত হবে । ভূমি কমিশন গঠনে পাহড়ীদের দিীর্ঘ দিনের দাবী পূর্ণতা পেল। বাঙ্গালীরা নিজ দেশে পরবাসী হবে । অশান্তির স্থায়ী বীজ বপন হলো ।