পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকায় কর্মসূচি


পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীতে গণসংযোগ ও প্রচার চালিয়েছে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন। চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে দেশবাসীকে অধিকতর সচেতন ও সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন।
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল ১১টায় ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে তাঁরা এই গণসংযোগ ও প্রচার কর্মসূচি শুরু করেন।
পরে পুরানা পল্টন মোড় হয়ে দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত যান তাঁরা। সেখান থেকে তাঁরা পুরানা পল্টন মোড়ে এসে কর্মসূচি শেষ করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, ‘দেড় বছর ধরে বাঙালিদের নেতৃত্বে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি।’
গণসংযোগ ও প্রচার কর্মসূচিতে বাঙালিদের পাশাপাশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। কর্মসূচিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বৃহত্তর গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে উদ্বোধনী বক্তব্যে জাকির হোসেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন।
সেগুলো হলো-
১. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সময়সূচী ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে চুক্তির দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. পাহাড়ে সামরিক কর্তৃত্ব ও পরোক্ষ সামরিক শাসনের স্থায়ী অবসান করতে হবে।
৩. আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক করা এবং স্থানীয় শাসন নিশ্চিত করতে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক এসব পরিষদের যথাযথ ক্ষমতায়ন করতে হবে।
৪. পার্বত্য ভূমি সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকরের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তু ও ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের পুনর্বাসন করে তাঁদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৫. দেশের মূল স্রোতধারার অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য পৃথক দুটি দাবি তুলে ধরা হয়।
১. ইউনিয়ন পরিষদসহ সর্বস্তরের স্থানীয় সরকারে সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ আসন সংরক্ষণ এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
২. তাদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।
এই কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুল রশীদ ফিরোজ, ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহিল কাইয়ুম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের যুগ্ম আহ্বায়ক অসিত বরণ রায়, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সালেহ আহমেদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহসাধারণ সম্পাদক গজেন্দ্র নাথ মাহাতো, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই প্রমুখ।
পুরানা পল্টন মোড়ে কর্মসূচি এসে শেষ হলে সেখানে সমাপনী বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী।
এসময় তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের অচলাবস্থা দেশের জন্য নিরাপত্তা বয়ে আনতে পারে না।
এই কর্মসূচি থেকে যে প্রচারপত্র বিলি করা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, দুঃখজনক হলেও সত্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের ২৬ বছর পেরোলেও এই চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামকে জুম্ম–অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে তার অনন্য বৈশিষ্ট্যসহ সংরক্ষণ ও বিকাশের কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। পাহাড়ে এখনো ঔপনিবেশিক কায়দায় পাহাড়ি মানুষের ওপর শাসন ও শোষণ অব্যাহত আছে।