পাহাড়ে পাকতে শুরু করেছে সোনালী জুম ধান: মহোৎসবের প্রস্তুতি
কথায় আছে আমরা মাছে ভাতে বাঙ্গালি আর তার তাৎপর্যটুকু ফুটে উঠে ভাত মাছ আর ডাল দেখলে। যুগ যুগ ধরে সংস্কৃতি রক্ষায় কৃষকরা চাষাবাদ করে আসছে আমাদের এই বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্য ধান চাষ। আর ধান থেকে যে চাল উৎপন্ন হয় তা খেয়ে জীবন ধারণ করে আছে বাংলাদেশের সকল মানুষ। তার ব্যতিক্রম হয়নি বান্দরবানের মতো পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত সকল জাতি-ধর্মের মানুষের মাঝেও।
পাহাড়ি উঁচু উঁচু জায়গা আর আঁকাবাঁকা পথ ধরে বয়ে যাওয়া রাস্তার সকল পাশে চাষাবাদ করা হয় জুম ধানের। আর এই জুম ধানের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসরত সকল পাহাড়ি সম্প্রদায়ের মানুষ। খুবই সুস্বাদু এই খাবার।
দুর্গম পাহাড়ে বর্তমানে তারা চাষাবাদ করছেন নানান রকমের ধান। আর তাদেরই ধান চাষের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে বান্দরবানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গুলো। আদিম পদ্ধতি ছাড়াও তাদেরকে নানারকম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলছে দুর্গম পাহাড়ে জুম চাষে।
শ্রাবণ-আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি বর্ষার মাসে বান্দরবানের পাহাড়ে জুম ধান কাটা শুরু হয়। হাজার হাজার পরিবার জুম চাষ করে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে পরিবারের সমস্যাগুলো মেটানোর চেষ্টা করে।
তারা ধান চাষের পাশাপাশি বেগুন, মরিচ, তুলা, ভুট্টা, টিল ও বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষবাদ করে এভাবে জীবিকা নির্বাহ করে। জুম চাষ করে যা উপার্জন করে তা দিয়ে পুরো বছরেরর সংসার চালিয়ে নেয়।
পূর্ব আকাশে সূর্য উঠার আগে পাহাড়ের গায়ে হালকা আলো পরতে শুরু করলে মাথায় ঝুঁড়ি নিয়ে পাহাড়ে জনপদের নারী-পুরুষেরা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পরে দূর পাহাড়ের উদ্দেশ্যে।
পাহাড়ি অঞ্চলে পাহাড়ের ঢালু গায়ে উৎপাদিত হয় ধান। এই অঞ্চলে এ ধান “জুমের ধান” নামে পরিচিত। এই সময়টাতে জুম ধান পেকে সোনালী রঙ ধারণ করে। আশ্বিন-কার্তিক মাস শুরু হতে না হতেই পাহাড়িদের নবান্ন উৎসব শুরু হবে। তাই এখন থেকে পাহাড়িদের উৎসব আয়োজনে পরিকল্পনা রয়েছে। সারা বছরে রৌদ দুপুরের কাটা দিনগুলো মহা নবান্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
সরোজমিনে গিয়ে দেখা গেল বান্দরবানের লাইমি পাড়া, চিম্বুক, দশ মাইল এলাকা, গেছমনি পারা, ও নীলগিরির কিছু পার্শ্ববর্তী এলাকায় সোনালী জুম ধান পাকতে শুরু করেছে।
এই বিষয়ে চিম্বুক এলাকার জুম চাষী আবাদ বমের সাথে কথা বললে তিনি জানান জুম ধান প্রায় পাকতে শুরু করেছে, ধান পুরোপুরি পাকা হলে আমরা ধান কাটা শুরু করব। আবহাওয়া মোটামুটি ভালো থাকার কারণে আমরা এই বছর অনেক ধান পাব বলে আশা করছি।
গ্যাস মনি পাড়ার কৃষক মেল থান ম্রো এর সাথে কথা বললে তিনি জানান, এবার ধানের ফসল দেখে আমরা অনেক খুশি। এই ধানের পিছনে আমরা অনেক কষ্ট করেছি। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জুম ধানের নানারকম পরিচর্যা করেছি। যার ফলশ্রুতিতে আমরা এ ভালো ফলন উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি ধান কাটা শেষে আমরা নবান্ন উৎসব সুন্দরভাবে করতে পারবো।
এ বিষয়ে বান্দরবানের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ওমর ফারুক জানান, এই বছর কৃষকরা ভালো ফলন উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে, আমরা তাদেরকে জুম চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন রকম বারো মাসি ফসল উৎপাদনে নানারকম প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে নিয়মিতভাবে নানা রকমভাবে হাতে কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তা দেখানো হয়েছে।
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও তারা কৃষি চাষের পাশাপাশি নানা রকম ফল ও শাকসবজি উৎপাদনের দ্বিগুণ পরিমাণ লাভবান হয়েছে।
আমরা চেষ্টা করবো পরবর্তীতে দুর্গম এলাকায় বসবাসরত সকল কৃষকদের নানারকম উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে পাহাড়ে বিভিন্ন ফল উৎপাদন করে বান্দরবানের সুনাম যাতে সম্পূর্ণ বাংলাদেশের ছড়িয়ে যায় সেই ব্যাবস্থা করতে।