পাহাড়ধস ঠেকাতে ‘জাদুর ঘাস’র চাষ

fec-image

পাহাড়ধসে প্রাণহানি ও পাহাড়ি বেলে মাটিতে নালা-নর্দমা ভরাট রোধে ‘জাদুর ঘাস’ হিসেবে পরিচিত বিন্না ঘাস (ভেটিভার গ্রাস) প্রকল্পের আওতা বাড়ানো হচ্ছে। দ্রুত বর্ধনশীল, জলবায়ুসহিষ্ণু, সহজ চাষপদ্ধতি ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় দীর্ঘমূলী এ ঘাস পাহাড়, নদী তীর, বাঁধের ভূমিক্ষয় রোধে মোক্ষম হাতিয়ার হিসেবে সমাদৃত হবে এমন আশা বিশেষজ্ঞদের।

নগরের টাইগারপাসে বাটালি হিল মিঠা পাহাড়ের পাদদেশে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) এ পাইলট প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ মে। বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড ভেটিভার গ্রাস ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় ওইদিন ভেটিভার সেন্টার উদ্বোধন করেন থাই রাজকুমারী মাহা চাকরি সিরিনধর্ন। তিনি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের হাতে বিন্না ঘাসের চারা তুলে দেন। নিজ হাতে রোপণও করেন এ ঘাস।

চসিকের প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত বিন্না ঘাসের পাইলট প্রকল্প থেকে উৎপাদিত চারা মিঠা পাহাড়ের ঢালু অংশে লাগানো হচ্ছে। প্রতিদিন চসিকের নিজস্ব শ্রমিকেরা দক্ষতার সঙ্গে কাজটি করছেন।

চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে পাইলট প্রকল্পে বিন্না ঘাস চাষ, পরিচর্যা, যত্ন, ফুল, ঘাসের উচ্চতা ইত্যাদি বিষয়ে ভৌত স্টাডি সম্পন্ন করেছি। ইতোমধ্যে আমরা প্রচুর চারা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। যেগুলো চসিকের নিজস্ব পাহাড়ের ঢালুতে লাগাচ্ছি। এর থেকে আমরা ক্ষয়রোধে কার্যকারিতা পরীক্ষা করবো। বিশেষ করে মাটি আটকে রাখার সক্ষমতা, শেকড়ের দৈর্ঘ্য ও গভীরতা, শুষ্ক মৌসুমে প্রাকৃতিকভাবে টিকে থাকার ক্ষমতা ইত্যাদি। আশাতীত সাফল্য পেয়েছি আমরা। চসিকের টাইগারপাসের প্রধান কার্যালয়ে ঢোকার সময় এ পাইলট প্রকল্পের সবুজের সমারোহ সবাইকে মুগ্ধ করছে।

তিনি জানান, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার অনেক কারণ রয়েছে। পরিবেশের জন্য চরম ক্ষতিকর উপকরণ পলিথিন, প্লাস্টিকসহ অপচনশীল বর্জ্য যদি নালা-নর্দমা ভরাটের ১ নম্বর কারণ হয় তবে দ্বিতীয় কারণটি হলো বৃষ্টিতে নেমে আসা পাহাড়ি বালু। যেগুলো আটকে রাখার জন্য প্রচুর সিলট্রেপ (বালু ধরার ফাঁদ) দরকার। এ বালু নালা থেকে খালে, খাল থেকে কর্ণফুলী নদীও দ্রুত ভরাট করছে। যা অব্যাহত থাকলে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের চ্যানেলের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করবে।

আরও চারা তৈরি করে নগরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড়ে লাগানোর জন্য বিতরণের উদ্যোগ নেবেন জানিয়ে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচতে হলে, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হলে, পাহাড় বাঁচাতে হলে বিন্না ঘাস হচ্ছে টেকসই হাতিয়ার। এটি নিয়ে দেশ-বিদেশে অনেক গবেষণা হয়েছে। সাফল্যও এসেছে। এখন নগরবাসীকে সচেতন করতে হবে। একদিন চট্টগ্রাম শহর ছাড়িয়ে বিভিন্ন উপজেলা, পার্বত্য জেলার পাহাড়, সড়ক, নদীভাঙন, বেড়িবাঁধের ভাঙন ঠেকাতে বিন্না ঘাসে সয়লাব হয়ে যাবে।

২০১৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা প্রশমনে বিন্না ঘাসের ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, বিন্না ঘাসের শেকড় ১০ ফুটের বেশি দীর্ঘ হওয়ায় পাহাড়ের ক্ষয় রোধ করবে। উপকূল, নদী ও খাল পাড় এবং চরাঞ্চলে ভাঙন ঠেকাবে। চিংড়িঘেরের পাড় বাঁচাবে। পানি ও মাটির বিষাক্ত পদার্থ শোষণ করবে ৭০-৯০ শতাংশ। এ ঘাসের পাতা দিয়ে দৃষ্টিনন্দন কুটির শিল্পসামগ্রী এবং শেকড় দিয়ে মূল্যবান ওষুধ, সাবান ইত্যাদি তৈরি করা যাবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন  বলেন, বিন্না ঘাসের পাইলট প্রকল্পের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। আমাদের নিজস্ব পাহাড়ে পরীক্ষামূলকভাবে এ ঘাসের চাষ বাড়ানো হচ্ছে। থাইল্যান্ডের একটি বিশেষজ্ঞ দল বেশ কিছু পাহাড় পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। তাদের মত ছিল, সব পাহাড়ে হয়তো এটি সমান কার্যকর হবে না। কিছু পাহাড়ে খুব ভালো কাজ দেবে।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামে অতীতে পাহাড়ধসে কয়েকশ’ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। পাহাড়ি মাটি বৃষ্টির পানিতে ক্ষয় হয়ে নালা ভরাট করছে, খাল ভরাট করছে। আগে গৃহস্থালি বর্জ্যে যে নালা ভরাট হতো তা ঠেকাতে আমরা ডোর টু ডোর পদ্ধতি চালু করেছি। কিন্তু সিলট্রেপ না থাকায় পাহাড়ি বালুতে নালা ভরাট ঠেকানো যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে বিন্না ঘাসের জাদুকরী ক্ষমতায় যদি পাহাড়ক্ষয় ঠেকানো যায় তবে অবশ্যই আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবো। বিনামূল্যে এ ঘাসের চারা বিতরণ করবো। ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করবো।

সূত্র : বাংলানিউজডটকম

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, জাদুর ঘাস, পাহাড়
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন