পাহাড়ি আখের গুড়ের কদর বাড়ছে বান্দরবানে

বান্দরবানে পাহাড়ের পাদদেশে কৃষি চাষের গুরুত্ব বাড়ছে অনেক সময় ধরে। বিভিন্ন ফলমূল কিংবা শাক-সবজিতে বাজিমাতের নাম লিখিয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবান। এছাড়াও সেখানে কৃষকদের মাঝে পৌঁছে গেছে বিভিন্ন উন্নত মানের যন্ত্রপাতি । পাহাড়ের বিভিন্ন ফল চাষের পাশাপাশি তামাক চাষ ছেড়ে আখ চাষেও ঝুঁকছেন অনেক চাষী। তবে এবার ভিন্ন পদ্ধতি হিসেবে আখের রস থেকে তৈরি হচ্ছে গুড়। সে প্রাকৃতিক তৈরিকৃত আখের গুড় এখন যাচ্ছে দেশে বিভিন্ন প্রান্তে। আগামীতে এই আখের গুড় অর্থনৈতিক গুরুত্ব রাখবে এমনটাই আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের আখ থেকে গুড় বানানো উৎপাদন শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। তিন পার্বত্য জেলা মধ্যে বান্দরবান জেলায় প্রথম শুরু হয় আখ থেকে গুড় তৈরি কাজ । প্রাথমিকভাবে এই প্রক্রিয়া শুরু করলে পরে এটি কোন রাসায়নিক ছাড়ায় প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হয় গুড়। সে যাত্রার পর থেকে ১৫০ জন উপকারভোগী কৃষকদের থেকে আখ সংগ্রহ শুরু করে বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউট। শুরু হয় সোডা ও হাইড্রোজেন দিয়ে গুড় বানানো প্রক্রিয়াকরণ। প্রায় কয়েক ঘণ্টা পর গুড়ে পরিণত হয়ে বাজারজাতের জন্য প্যাকেজিং তৈরি করা হয়। বাজারের প্রতি প্যাকেটের মূল্য নির্ধারণ করা ২২০ টাকা। এবং এই গুড় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়। যেটি চাহিদা রয়েছে অনেক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রোয়াংছড়ি, ক্রাইক্ষ্যং পাড়া, বাঘমারা, সুয়ালক, লেমুঝিড়িসহ ফলসি জমিতে বিভিন্ন জাতের আখ চাষ করেছেন কৃষকরা। প্রায় ৩২ জাতের আখের চাষ হচ্ছে মাঠ জুড়ে। গাছের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কৃষকরা। অন্যদিকে মাঠ থেকে আখ কেটে চলছে পরিষ্কারের কাজ। আখগুলোকে আধুনিক যন্ত্রের মেশিনের সাহায্যে বের করা হচ্ছে রস। সেসব রস একটি বড় স্টিল প্লেটে ঢেলে শুরু হয় গুর তৈরির প্রক্রিয়াকরণ। রসের ময়লা আবর্জনা দূর করতে ভিন্ন পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা হয় প্রাকৃতিক একটি গাছে চামড়া । যে চামড়া ব্যবহার ফলে উত্তপ্ত বাষ্পের রস থেকে আলাদা হয়ে যায় ময়লা আবর্জনা। সেখানে ময়লা সরাতে ব্যবহার করা হয় জালের ছাকনি। প্রায় ৪ ঘণ্টা আগুনে উত্তপ্ত করার পর গুড়ের মত তৈরি হতে শুরু করে। দেড় ঘণ্টা নাড়িয়ে তৈরি হয় গুড়। সেই গুড়ের এক চামচ চিনি দিয়ে বাজারজাত করণের প্রস্তুত করা হয়। সেই আখের গুড় নাম দেওয়া হয় পাহাড়ের আখ গুড়। যেটি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড দ্বারা পরিচালিত।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্য মতে, গেল মৌসুমের ২০২০-২১ অর্থ বছরে আখ চাষ হয়েছে ২ মেট্রিক টন। চলতি বছরের ৩, দশমিক ৩৫ মেট্রিক টনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়াও বান্দরবান বাজারের চাহিদা রয়েছে ৩০ হতে ৩৫ মেট্রিক টন।
আখ চাষী চিহ্লা মং মারমা বলেন, ইক্ষু সুগারক্রপ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আখ চাষ করেছি। প্রায় ৫ বিঘা জমিতে ৩২টি জাতের আখ রয়েছে । সে আখগুলোকে আমরা কেটে সুগারক্রপ অফিসে সরবরাহ করি। ১ বিঘা জমিতে এই আখ চাষ করে ৮০-৮৫ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করা যায়।
আখ থেকে গুরু তৈরি কারিগর মো. শফিক জানান, প্রথমে আখগুলোকে পরিষ্কার করে মেশিনের সাহায্যে রস বের করা হয়। রসগুলোকে একটি বাটিতে ঢেলে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা ফুটানো হয়। রস থেকে গুড় তৈরি হয়ে গেলে সেটি ১ কেজি করে একটি বাক্সে ঢাকা হয়। পরে সেই গুড়কে প্যাকেটজাত করে দেশে বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়। এই গুড় প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হয়। যা বাজারের মূল্য ২২০ টাকা।
বাংলাদেশ সুগারক্রপ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কৃষিবিদ ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ক্যছেন মারমা বলেন, গুড় তৈরিজাত হিসেবে পার্বত্য অঞ্চলে মধুমালা, ৪১ অমৃত, বিএমসি আর ৩৭, ৩৮ এই কয়েকটি জাতগুলো গুড় হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছি। গুড় তৈরি উপযোগী হিসেবে যদি প্রান্তিক পর্যায়ে উপজেলাগুলোতে পৌঁছাতে পারি, তাহলে আমরা আশাবাদী তিন পার্বত্য জেলায় তামাকের বিকল্প হিসেবে চাষীরা মধ্যবর্তী ইনকাম হিসেবে বেড়িয়ে আসবে।
তিনি বলেন, ইকু চিপিয়ে খাওয়া প্রক্রিয়া জাত হিসেবে সম্প্রসারণ করা ফলে তিন পার্বত্য জেলা ইকু চাষের যে প্রকল্পের গ্রহণ করা হয়েছে সেটি কৃষদের জন্য লাভের উপযোগী হতে পারে। তামাকের বিকল্প হিসেবে ইক্ষু ও সাথী ফসল চাষ সম্প্রসারণের প্রচেষ্টায় আছি। আশা করি এই চাষ আগামীতে আরো বৃদ্ধি পাবে।