পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের গুলিতে নওমুসলিম হত্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোকের ছায়া

fec-image

পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানের রোয়াংছড়িতে ওমর ফারুক নামে এক নওমুসলিমকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার (১৮ জুন) রাত ৯টার দিকে নামাজ আদায় করে বাড়ি ফেরার পথে রোয়াংছড়ি সদর ইউনিয়নের তুলাছড়ি আগাপাড়া এলাকায় পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ তাকে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকের ছায়া বিরাজ করছে। তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানাচ্ছে নেটিজেনরা। পাশাপাশি দোষীদের অনতিবিলম্বে শাস্তি দাবি জানাচ্ছে তারা।

মুসলিম প্রধান দেশে এভাবে একজন নওমুসলিমকে গুলি করে হত্যা করায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে অনেকে। তাদের প্রশ্ন, পাহাড়ে কি তাহলে পরিকল্পিতভাবে ডি ইসলামাইজেশন চলছে?

এ বিষয়ে সাংবাদিক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ লিখেন, ‘নও মুসলিম ওমর ফারুক (পূর্ব নাম পূর্ণেন্দু ত্রিপুরা) বন্ধুর দাওয়াতে ২০১৪ সালে খ্রিস্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার অত্যন্ত দুর্গম পার্বত্য এলাকায তুলাছড়িতে নিজের জমিতে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম ধর্ম চর্চা করতে শুরু করেন। শুধু তাই নয় রোয়াংছড়ির ওই চরম বৈরী পরিবেশে তিনি অন্যান্য বিধর্মীদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করেন। এতে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা একের পর এক তাকে হত্যা করার হুমকি দিতে থাকে। কিন্তু ওমর ফারুক জীবনের তোয়াক্কা না করে ইসলামের প্রচার অব্যাহত রাখেন। তার এই প্রচেষ্টায় শুধু নিজের পরিবার নয়, রোয়াংছড়ি এলাকায় তার দাওয়াতে ৩০টি উপজাতীয় পরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। একারণে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা তাকে থামাতে গত ১৮ জুন দিবাগত রাতে মসজিদ থেকে এশার নামাজ পড়ে ফেরার পথে গুলি করে হত্যা করে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। একটা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বাধীন দেশে শহীদ ওমর ফারুকের ধর্মচর্চার নিরাপত্তা রাষ্ট্র দিতে পারেনি এ লজ্জা রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে আমাদের। ওমর ফারুক শহীদ হওয়ার পর তার পরিবার ও তার হাতে বাইয়াত হওয়া নওমুসলিম পরিবারগুলো চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়েছে। তুলাছড়ি পাড়ার এই মসজিদটিতে নামাজ পড়তে যেতে স্থানীয় নওমুসলিমরা আতঙ্কিত অবস্থায় রয়েছে। এই প্রেক্ষিতে স্থানীয়দের দাবি, রোয়াংছড়ির নওমুসলিম পরিবারগুলোর নিরাপত্তা ও তুলাছড়ি মসজিদে নামাজ ও ধর্মচর্চার নির্ভয় পরিবেশ, তুলাছড়িতে নিজের প্রতিষ্ঠিত মসজিদটির নামকরণ শহীদ ওমর ফারুক মসজিদ নামে নামকরণ করে স্থায়ী মসজিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা এবং শহীদ ওমর ফারুকের পরিবারের নিরাপত্তা এবং উক্ত পরিবারকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হোক।’

লোকমান হোসাইন লিখেন, ‘এক আদনানকে নিয়ে সারাদেশে ও মিডিয়া তোলপাড় হলেও একজন নওমুসলিম ও দ্বীনের দ্বায়ী মসজিদের ইমামকে গুলি করে হত্যা করলেও সবাই আজ চুপ! পারবো আল্লাহর কাছে কিয়ামতের দিন জবাব দিতে? ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ও প্রচার করার অপরাধেই বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে গুলি করে শহীদ করা হয়েছে এই ওমর ফারুক ভাইকে। জেএসএস সন্ত্রাসীরা ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই উনাকে হুমকি দিচ্ছিলো। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে নামাজের পর তাঁকে মসজিদের সামনেই গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি প্রায় ৩০ টি পরিবারকে ইসলামের পথে এনেছিলেন এবং যেই মসজিদের সামনে হত্যা করা হয়েছে, এটি তার জায়গায় নিজের প্রতিষ্ঠিত মসজিদ। আল্লাহ ভাইকে শহীদের মর্যাদা দান করুক।’

তহিদুজ্জামান তপু লিখেন, ‘উমর ফারুক ত্রিপুরা ভাই। বান্দরবন, রোয়াংছড়ি উপজেলার প্রথম মুসলিম। উনার হাতেই ত্রিশটি পরিবার ইসলাম গ্রহণ করেছে। নিজের জায়গায় নির্মাণ করেছেন মসজিদ। গতকাল ভাইকে ওরা এসব কারণেই শহীদ করে দিলো। ওমর ফারুক ত্রিপুরা ভাইকে শহীদ করেছে কথিত শান্তি বাহিনী! অর্থাৎ চাকমা। বান্দরবন জেলার রোয়াংছড়ির তুলাছড়িপাড়ায় এশার নামাজের পরে মসজিদের বাহিরে গেলে, সন্ত্রাসীরা তার বুকে এবং মাথায় গুলি করে, এর কিছুক্ষণ পর তিনি শহীদ হন। ভাই ওমর ফারুক ঐ অঞ্চলের প্রথম মুসলমান এবং উক্ত মসজিদের ইমাম। ইসলাম গ্রহণের অপরাধে দীর্ঘদিন যাবত সন্ত্রাসীরা মুসলিমদেরকে হুমকি দিয়ে আসছিলো, তারই জেরে নওমুসলিম ওমর ফারুক ত্রিপুরাকে শহীদ করে। আল্লাহ তাকে শহীদি মর্যাদা নসীব করুন, আমীন। উল্লেখ্য যে, পার্বত্য অঞ্চলে নওমুসলিম ভাই বোনদের সাথে এই ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।’

ওমর ফারুককে ‘একজন দ্বীনের একজন দায়ী’ উল্লেখ করে মুহাম্মদ খালিদ সাইফুল্লাহ লিখেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে যাকে হত্যা করা হয়েছে, তিনি কেবলই একজন নওমুসলিম নন। তিনি হচ্ছেন সেখানকার পাঁচটি মুসলিম পরিবারের সালাত আদায়ের জন্য মসজিদ প্রতিষ্ঠাকারী, মসজিদের জমিদাতা এবং ঐ মসজিদের ইমাম। তিনি তো দ্বীনের একজন দায়ী ছিলেন। আমার ভাইয়েরা! কীসে আপনাকে প্রতিবাদ থেকে দূরে রেখেছে অথচ আমি দেখতে পাচ্ছি, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যার উদ্দেশ্য ওই অঞ্চলে ইসলামের দাওয়াতকে পৌছাতে না দেয়া! একজন ইমামকে বাংলাদেশের শত্রু বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হত্যা করল, আর আপনারা এখনো কিছুই বলছেন না? ওমর ফারুক সালাত আদায় করে মসজিদ থেকে বের হয়ে বাড়ির দিকে যাওয়ার পথেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের গুলিতে তার লাল খুন বান্দরবানের মাটি রঞ্জিত হয়েছে। পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, ইসলাম গ্রহণ করায় সন্তু লারমার জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সশস্ত্র শাখার লোকজন তাকে হুমকি দিয়ে আসছিল। তারা ভয় পাচ্ছিল, ইসলামের আদালত ও ইনসাফ যদি ছড়িয়ে পড়ে, তবে ওই অঞ্চলে ইসলামের উত্থান ঠেকানো অসম্ভব! এজন্যই তারা ওমর ফারুক নামের আমাদের মুসলিম ভাই, একজন ইমাম ও দ্বীনের দায়ীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এলাকাবাসী জানিয়েছে, সন্তু লারমার সন্ত্রাসী বাহিনিই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। আপনারা কি এই সন্ত্রাসী বাহিনীর দৌরাত্ম্য চলমান দেখতে চান? যদি চুপ থাকেন তাহলে পাহাড়ে ইসলামের আলো নিভে যাবে। ওই অঞ্চল বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। প্রতিষ্ঠা করা হবে জুম্মল্যান্ড! এর উদ্দেশ্য, বাংলাদেশ নামক মুসলিম ভূখণ্ডকে দুর্বল করে দিয়ে গ্রেটার ভারত প্রতিষ্ঠার পথে আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া! পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রচুর ইউরেনিয়াম আছে, যা দিয়ে পারমানবিক বোমা বানানো হয়। আছে প্রচুর বনজ ও খনিজ সম্পদ। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের কুনজর কিন্তু এই অঞ্চলে। সুতরাং সচেতন হোন। অন্যকে সচেতন করুন। আমাদের ভাই শহীদ ওমর ফারুককে হত্যার তীব্র প্রতিবাদ করুন। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সন্ত্রাসী বাহিনির নিরস্ত্রীকরণের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি তারা অস্ত্র না ছাড়ে, তবে অস্ত্রের ভাষায়ই কথা বলুক দেশের সেনাবাহিনী। নিরস্ত্র সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার জন্যই এই সন্ত্রাসী বাহিনীর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া দরকার! হে আল্লাহ! আপনি ওমর ফারুককে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। পার্বত্য চট্টগ্রামে ইসলামের আলো প্রজ্জ্বলিত হওয়ার উসিলা হিসেবে তার রক্তকে কবুল করুন। তার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়ে বিনা হিসেবে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন, আমীন। পার্বত্য চট্টগ্রামের শহীদ ওমর ফারুক: একজন নওমুসলিমই নন, দ্বীনের একজন দায়ী।’

মরজুর ই এলাহীর প্রশ্ন, ‘বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক এবং তুচ্ছ বিষয়ের আলোচনার ভীড়ে বান্দরবানের তুলাছড়ি পাড়ার নবমুসলিম উমর ফারুক হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি নাতো? বাংলাদেশের সংবিধানের ৪১ অনুচ্ছেদে যে ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে,তাতে ধর্ম অবলম্বন,পালন,প্রচার,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের আছে। এসব মৌলিক অধিকার। নিহত উমর ফারুক মসজিদে ইমামতি করতেন,আযান দেয়া এবং মসজিদের জায়গাটি তিনিই দিয়েছেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরে তাকে বিভিন্ন সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন থেকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। হুমকিতে আবদ্ধ না থেকে সর্বশেষ তাকে হত্যা করা হলো। আফসোসের সাথে বলতে হচ্ছে, আমরা যারা বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহর বিভিন্ন সংকট মুহুর্তে মুখর থাকি, তারা আজ নীরব! হয়তবা পর্যাপ্ত খবরাখবর না থাকার কারণে এমনটি হতে পারে। এই আমাদের সচেতনতা? আমরা যখন ফিলিস্তিন,কাশ্মীরের সব রকমের তথ্য রাখি,তাদের বিপদে তহবিল সংগ্রহ, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ সভার আয়োজন করি, তখন দেশীয় পরিধির মধ্যে এরকম উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে এতোটা আবেগহীন কেন? ফেসবুকে যারা সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেন, দুই একজন ছাড়া বেশিরভাগই চুপ! আফসোস! পাহাড়ের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ঠকারী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

‘ইসলাম ধর্ম গ্রহণ ও প্রচার করায় বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে গুলি করে শহীদ করা হয়েছে ওমর ফারুক নামের একজন নও মুসলিমকে। পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন জেএসএস সন্ত্রাসীরা ইসলাম গ্রহণের পর থেকেই উনাকে হুমকি দিচ্ছিলো। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে নামাজের পর তাঁকে মসজিদের সামনেই গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি প্রায় ৩০ টি পরিবারকে ইসলামের পথে এনেছিলেন এবং যেই মসজিদের সামনে হত্যা করা হয়েছে সেটিও উনার জমিতে প্রতিষ্ঠিত। বিদেশী মদদপুষ্ট এই জঙ্গি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন জেএসএস ও ইউপিডিএফকে সমূলে উৎখাত না করার কারণে যখন যা মন চায়, তাই করে যাচ্ছে।’ – আবদুর রউফের মন্তব্য।

আমিনুল ইসলাম লিখেন, ‘যারা এতদিন পাহাড়ে মানবাধিকার নিয়ে গলা ফাটিয়েছেন, তারা এই ঘটনায় এখনও চুপ কেন? শুধু মুসলমান নয়, কোন বিবেকবান মানুষ এই ঘটনায় চুপ থাকতে পারে না।’

উদ্বেগ প্রকাশ করে রেজাউল করিম লিখেন, ‘সরকার ও পাহাড়ে আইন-শৃংখলা ও দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানাবো, অনতিবিলম্বে এই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। এরা দেশের জন্য হুমকি।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন