parbattanews

পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের লাগানো আগুনে রাঙামাটিতে বৌদ্ধ মন্দির পুড়ে ছাই

পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের লাগানো আগুনে পুড়ে যাওয়া ধুপশীল আন্তর্জাতিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র (বৌদ্ধ বিহার) এর ধংসাবশেষ

রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ধুপশীল এলাকায় একটি বৌদ্ধ মন্দির পুড়িয়ে দিয়েছে পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় মন্দিরের সেবককে মারধোর করে মন্দির থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। শুক্রবার(১৫মে) রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

সন্ত্রাসীদের লাগানো আগুনে মন্দিরটি সম্পূর্ণ পুড়ে ভষ্মিভূত হয়ে গেছে। ঘটনার সত্যত্যা স্বীকার করে বিলাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পারভেজ আলী পার্বত্যনিউজকে বলেন, স্থানীয়ভাবে বিরোধের সূত্রে এই মন্দিরে আগুন লাগানো হয়ে থাকতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার বিলাইছড়ি উপজেলাধীন ১নং বিলাইছড়ি ইউনিয়নের (৭নং ওয়ার্ড) ধূপশীলপাড়া এলাকায় ড. এফ. দীপংকর ভান্তে নামে এক বাঙালি ভান্তে ধর্ম প্রচার শুরু করলে তার স্থানীয় ভক্তরা ধুপশীল আন্তর্জাতিক বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্র (বৌদ্ধ বিহার) একটি মন্দির নির্মাণ করেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় সন্ত্রাসীরা তাদের সন্ত্রাস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ ও দূর্গম স্থানে অবস্থিত বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সন্ত্রাসবাদ পরিচালনার সেফ হাউজ হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু ড. এফ দীপঙ্কর ভান্তে একজন উচ্চ শিক্ষিত ও আধুনিক মনস্ক ভান্তে হওয়ায় শুরু থেকে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

এ প্রেক্ষিতে সন্ত্রাসীরা বাঙালি দীপঙ্কর ভান্তেকে সরিয়ে তার স্থানে পাহাড়ী ভান্তেদের নিয়োগের চেষ্টা চালাতে থাকে। কিন্তু স্থানীয় শান্তিপ্রিয় পাহাড়ীদের একটি অংশ দীপঙ্কর ভান্তের সমর্থন করায় তাদের উচ্ছেদ করতে সন্ত্রাসীরা একের পর তার উপর ও তার সমর্থকদের উপর হামলা চালাতে থাকে। সন্ত্রাসীদের হামলা ও হুমকির মুখে ড. এস দীপঙ্কর ভান্তে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলেও তার সেবকরা মন্দিরটি পরিচালনা করতে থাকে।

সূত্র মতে, শুক্রবার রাতে ১০-১২ জনের পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের একটি দল অকষ্মাৎ মন্দিরে ঢুকে সেখানে উপস্থিত সেবক কুচেন্দ্র তঞ্চঙ্গাকে মারধোর করে বের করে দেয়। এসময় তারা মন্দিরের কাঠমোতে আগুন ধরিয়ে দিলে কাঠের মন্দিরটি নিমিষেই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

স্থানীয়রা বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক দল জেএসএস এই মন্দির নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছিলো। বিশেষ করে মন্দির নির্মাণ ও এর কার্যক্রম পরিচালনা বাধাগ্রস্ত করতে বিভিন্ন সময় যেসব নাশকতার ঘটনা ঘটেছে তাতে এই দলটি সম্পৃক্ততার অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে বিলাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পারভেজ আলী পার্বত্যনিউজকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সন্ত্রাসীরা সম্ভবত পেট্রোল ব্যবহার করে থাকতে পারে। মন্দিরটি কাঠের হওয়ায় তা দ্রুত পুড়ে যায়।

কারণ হিসেবে তিনি পার্বত্যনিউজকে আরো বলেন, এই মন্দির নিয়ে স্থানীয়ভাবে অনেকদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিলো। পাহাড়ী ভিক্ষুরা এখানে বাঙালী ভিক্ষুকে মেনে নিতে পারছিলো না বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও আরো অন্যান্য কারণও থাকতে পারে। সবকিছু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, ঘটনাস্থল অত্যন্ত দুর্গম হওয়ায় রাতে পুলিশ পাঠানো সম্ভব না হলেও সকালে পুলিশ মন্দিরটি পরিদর্শন করে আহত ভিক্ষুকে উদ্ধার করে এনেছে। এ বিষয়ে তার থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

Exit mobile version