পাহাড়ের নিরাপত্তা পরিস্থিতি: বজ্র আটুনি ফস্কা গেরো

fec-image

বাঘাইছড়িতে দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে ঢুকে দোতলায় অবস্থিত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে তার উপস্থিতিতে, তার সামনে বসা ইউপি সদস্যের বুকে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে তাকে হত্যা করে উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা। এরপর তারা সেখান থেকে বের হয়ে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের প্রধান গেটে আরো তিন রাউন্ড গুলি করে মোটরসাইকেল যোগে পালিয়ে যায়!!

উপজেলা পরিষদ একটি উপজেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহৎ প্রশাসনিক কার্যালয়। সেখানে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা বা পুলিশ ডিউটি থাকে বা থাকার কথা। এহেন খুন কাণ্ডে কমপক্ষে ৫-১০ মিনিট সময় লাগার কথা। তাহলে এই সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী করেছে? কেন খুনীদের আটকাতে পারলো না? তারা কী আদৌ সে চেষ্টা করেছে? নাকি সেখানে তাদের কোনো ডিউটি ছিলো না? বাঘাইছড়ির মতো সন্ত্রাস কবলিত একটি উপজেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ইউনিট কী করে এমন অরক্ষিত থাকে? এ হত্যাকাণ্ড পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরাপত্তা পরিস্থিতির একটি বিরাট ফাটলকে চিহ্নিত করেছে। একেই বোধ হয় বলে, ‘বজ্র আঁটুনি, ফস্কা গেরো’।

আমি ভেবে অবাক হয়ে যায়, যে খুনীরা পিআইও’র সামনে বসা ইউপি সদস্যকে খুন করে নিরাপদে ও বাধাহীনভাবে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছে তারা তো চাইলেই পিআইওকেও খুন করতে পারতো? ইউএনওকেও খুন করতে পারতো, উপজেলা চেয়ারম্যানকেও খুন করতে পারতো এবং এভাবেই নিরাপদে প্রস্থান করতে পারতো। তখন কী হতো?

এর আগেও একইভাবে ২০১৮ সালের ৩ মে নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে উপজেলা পরিষদ কার্যালয় প্রাঙ্গণে খুন করে নিরাপদে পালিয়ে যায় খুনীরা। সে ঘটনায় একটি মামলা হয়েছিল। কয়েকদিন ধড়পাকড়, দু’য়েকজন আটকও হয়েছিল, ব্যাস ওই পর্যন্তই। এরপর ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ বাঘাইছড়িতে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের উপর উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা হামলা করে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, আনসার সদস্যসহ কমপক্ষে ৭জনকে খুন করে। সেই পরিণতিও তথৈবচ। এ কারণেই সন্ত্রাসীরা একই ঘটনার বারবার পুণরাবৃত্তির সাহস পাচ্ছে।

তাই আজ জরুরী ভিত্তিতে ভেবে দেখার সময় এসেছে, পাহাড়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার এই ‘ফস্কা গেরো’ যদি খুব দ্রুত বজ্র আঁটুনিতে পরিণত করা না যায়, তাহলে সেদিন আর বেশী দুরে নয়, যখন এই উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা ডিসি অফিসে ঢুকে ডিসিকেও খুন করে নিরাপদে প্রস্থান করবে এবংপাহাড়ের কোনো কর্মকর্তা, কোনো নেতা, কোনো পর্যটক, কোনো ব্যক্তিই তাদের অফিসে, বাড়িতে বা অবস্থানে নিরাপদে থাকতে পারবে না।

বিগত কয়েক মাসে নিয়মিতভাবেই বাঘাইছড়ি ও সাজেক উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের ব্রাশফায়ারে ও বন্দুকযুদ্ধে প্রকম্পিত হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকবার বিজিবি ক্যাম্পের কাছাকাছি এ ঘটনা ঘটেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন