parbattanews

পাহাড়ে কাউন চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা

cawon-dhan-news_alikadam-pic-copy

আলীকদম প্রতিনিধি:

পাহাড়ে কাউন চাষের ব্যাপক উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগের অভাবে এ চাষ সম্প্রসারণ হচ্ছেনা। পাহাড় ও সমতলের মানুষের কাছে কাউন পরিচিত একটি কৃষিপণ্য।

স্থানীয় জুমচাষী রেংরই ম্রো জানান, পাহাড়ি ঢালু জমিতে জুমে ধান চাষের সাথে মিশ্রশস্য হিসেবে কাউন চাষ করা হয়। কাউন স্থানীয়দের কাছে ‘কৈন চইল’ নামে পরিচিত। পাহাড়ে বৈশাখ মাসে জুমে ধানবীজ বোনার সময় কাউনবীজ ছিটানো হয়। বৃষ্টির পানি মাটিতে পড়ার পর কাউনবীজ গজিয়ে ওঠে। কাউন একবীজপত্রী উদ্ভিদ। দেখতে অনেকটা সর্ষে দানার মতো। তবে জুমচাষীদের কাছে এটি এক প্রকার ধান হিসেবে পরিচিত। কাউন গাছ সাধারণত ৫ থেকে ৬ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। তিনি জানান, কাউন গাছ মাঝারি লম্বা, সবুজ রঙের পাতা, কাণ্ড শক্ত বিধায় সহজে নুয়ে পড়ে না। এর শীষ লম্বা, মোটা ও রোমশ প্রকৃতির হয়।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সবধরণের মাটিতেই কাউনের আবাদ হয়। বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভাল ফলন হয়। জুমচাষীরা সাধারণতঃ এপ্রিল থেকে মে মাস পর্যন্ত ঢালু পাহাড়ে জুমচাষের সাথে কাউনের বীজ ছিটিয়ে আবাদ করে থাকেন। কাউনের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বোনা যায়। সারিতে বীজ বপন করলে চারা পরিচর্যায় সুবিধার পাশাপাশি ফলনও বেশী পাওয়া যায়। বীজ বুননের সময় সারির দূরত্ব ২৫-৩০ সে.মি. রাখতে হয়।

চাষী আব্দুল করিম জানান, কাউন সমতলেও ফলন হয়। এক্ষেত্রে মাটি ঝরঝরে করতে হয়। বপনের ১৫ থেকে ২০ দিন পর নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। প্রতিবিঘা (৩৩ শতাংশ) জমি থেকে প্রায় ৩৫০ কেজি পর্যন্ত কাউন উৎপাদন হয়। ১৯৮৯ সালে ‘তিতাস জাত’ নামে কাউন বীজ কৃষি বিভাগ থেকে অনুমোদন লাভ করে। এ জাতটি রবি মৌসুমে ১১৫ দিনে এবং খরিপ মৌসুমে ৮৫-৯৫ দিনে পরিপক্ক হয়।

অতিথি আপ্যায়নে, সামাজিক উৎসব-পার্বণে কাউনের পায়েশের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। কাউন পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ সুস্বাদু খাবার। পাহাড়ে ও সমতলে কাউন সমান জনপ্রিয়। আয়বর্ধনকমূলক এই চাষে পাহাড়ের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

জুমচাষী স্বাধীন মনি তঞ্চঙ্গ্যা জানান, প্রতিকেজি কাউন ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে কাউন উৎপাদন হয় না। জুমচাষে ধানের সাথে কাউনের মিশ্রচাষের ফলে আলাদা জমিরও প্রয়াজন হয় না। তাই খুব সহজেই কাউন চাষ করা যায়।

জানতে চাইলে কৃষিবিদ আলী আহমেদ বলেন, সরকারিভাবে চাষীদের বিনামূল্যে কাউন বীজ বিতরণের সুযোগ নেই। এ কৃষিপণ্যটি একটি পুষ্টিমানসমৃদ্ধ কৃষিপণ্য। কৃষকরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কাউন অর্থকরী ফসলে রূপ নিতে পারে।

Exit mobile version