parbattanews

পাহাড়ে কৃষি উপকরণ বিতরণে বৈষম্যের শিকার বাঙালিরা

মোট জনসংখ্যার অর্ধেক হওয়া সত্ত্বেও পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী বাঙালিরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জীবনমান উন্নয়নের নানা কার্যক্রমে তারা পিছিয়ে রয়েছে। অধিকাংশ কৃষিজমি বাঙালিদের হলেও সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত কৃষি উপকরণ তারা পায় না। পাহাড়ে উপজাতীয়দের চারটি গ্রুপের কাছে জিম্মি বাঙালিরা। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি হলেও উপজাতীয় জনগোষ্ঠীই পাহাড়ে যাবতীয় ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের অধিকারী। বাঙালিদের সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে।

সম্প্রতি খাগড়াছড়ির আটটি উপজেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনডিপি) যৌথ উদ্যোগে খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের মাধ্যমে উপজাতি এবং বাঙালি কৃষিজীবীদের মধ্যে ১৯১টি পাওয়ার টিলার ও সেচপাম্প বিতরণ করা হয়, যার অধিকাংশই পেয়েছে উপজাতীয় সদস্যরা। গুইমারা উপজেলায় ১৩টি পাওয়ার টিলারের ১২টিই দেওয়া হয়েছে উপজাতীয়দের। মাত্র একটি দেওয়া হয়েছে একজন বাঙালিকে। লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় সাতটি পাওয়ার টিলারের মধ্যে ছয়টি দেওয়া হয়েছে উপজাতীয়দের। একটি পেয়েছে বাঙালি একজন। সেখানে পাঁচটি সেচপাম্পের মধ্যে চারটি পেয়েছে উপজাতীয়রা। একজন বাঙালি পেয়েছেন একটি সেচপাম্প।

মানিকছড়ি উপজেলায় উপজাতি কম, মাত্র ২৯ শতাংশ এবং বাঙালি ৭১ শতাংশ। সেখানে ১১টি পাওয়ার টিলারের মধ্যে ১০টিই পেয়েছে উপজাতীয়রা। একটি পেয়েছে একজন বাঙালি। সেখানে ১৩টি সেচপাম্পের মধ্যে ১২টি দেওয়া হয়েছে উপজাতীয়দের। একটি দেওয়া হয়েছে এক বাঙালিকে। সেখানে মোট ২৪টি পাওয়ার টিলার ও সেচপাম্পের মধ্যে মাত্র দুটি পেয়েছেন দুই জন বাঙালি কৃষিজীবী।

খাগড়াছড়ি উপজেলায় ৩৪টি কৃষি সরঞ্জামের মধ্যে বাঙালি পেয়েছে চারটি। সেখানে ১৮টি পাওয়ার টিলারের মধ্যে ১৪টি দেওয়া হয়েছে উপজাতীয়দের। মাত্র চারটি দেওয়া হয়েছে চার বাঙালিকে। ১৬টি সেচপাম্পের মধ্যে সবই দেওয়া হয়েছে উপজাতীয়দের। বাঙালিদের একটিও দেওয়া হয়নি। দীঘিনালা উপজেলায় ১৫টি পাওয়ার টিলারের মধ্যে উপজাতীয়দের দেওয়া হয়েছে ১১টি আর বাঙালিদের দেওয়া হয়েছে চারটি। সেখানে পাঁচটি সেচপাম্পের মধ্যে চারটি পেয়েছে উপজাতীয়রা। মাত্র একটি পেয়েছে এক বাঙালি কৃষিজীবী।

একইভাবে মহালছড়ি উপজেলায় ১২টি পাওয়ার টিলারের মধ্যে ১০টি পেয়েছে উপজাতীয়রা। দুই বাঙালি পেয়েছে দুটি। ১২টি সেচপাম্পের মধ্যে সবই উপজাতীয়দের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। বাঙালিদের একটিও দেওয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারি সেবা ও সরঞ্জাম বিতরণের ক্ষেত্রে এমন অনিয়ম দীর্ঘদিন থেকে চলে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিদের প্রতি এই বৈষম্যমূলক নীতির কারণে সেখানকার বাঙালিরা ক্রমশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিদের প্রতি বৈষম্যমূলক নীতি পরিহার করে সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম অধিকার ফোরামের সভাপতি মাইনুদ্দিন বলেন, এখানে জনসংখ্যার মধ্যে বাঙালি ৫১ ভাগ এবং পাহাড়ি ৪৯ ভাগ হলেও আমরা সমান সমান হিসেবে ধরে নেই। মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে এই এলাকায় উন্নয়নের জন্য মন্ত্রণালয়, বোর্ড ও পরিষদ গঠন করা হয়। তিন জেলা পরিষদ আছে। শিক্ষা, সরকারি কৃষি খাত, সামাজিক বনাঞ্চলগুলোর ক্ষেত্রে যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করা হয় সেগুলোর ৯০ ভাগ পায় উপজাতি। আর ১০ ভাগ পায় বাঙালি। আবার বাঙালিদের মধ্যে পছন্দের লোকদের দেওয়া হয়। দরিদ্রদের দেওয়া হয় না।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ৮১টি বাঙালি গুচ্ছ গ্রাম আছে। এসব গুচ্ছ গ্রামে ৫৬ হাজার পরিবার বসবাস করছে। প্রতিটি গুচ্ছ গ্রামে বসবাসকারীদের নিজস্ব কোনো জায়গা নেই। প্রতি পরিবারকে পাঁচ একর জমি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা ঐসব জমিতে যেতে পারে না। পাহাড়িরা জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। উপজাতীয়দের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ঐ জমি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। টিআর, কাবিখার সহযোগিতা ৫৬ হাজার পরিবার পায় না।

মাইনুদ্দিন বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে বৈষম্য দূর না হলে বাঙালিদের অধিকার আদায়ে যে কর্মসূচি গ্রহণ করা দরকার তাই করা হবে। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে প্রচলিত ভোটার তালিকা অনুযায়ী নির্বাচন হলে বৈষম্য অনেকটা দূর হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

Exit mobile version