parbattanews

পাহাড়ে চাঁদাবাজি-অপহরণ-গুম-খুনের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে দু’বাঙালি সংগঠনের সাংবাদিক সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

অপহৃত খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার তিন বাঙালি ব্যবসায়ীসহ গত কয়েক বছরে নিখোঁজ ২৮ বাঙালিকে উদ্ধার, পাহাড়ি সংগঠনগুলোর অব্যাহত চাঁদাবাজী, খুন ও গুম বন্ধসহ ৮ দফা দাবিতে খাগড়াছড়িতে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে পার্বত্য অধিকার ফোরাম ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙালি ছাত্র পরিষদ।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুলাই) সকালে খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এ সাংবাদিক সম্মেলন থেকে দাবি আদায়ে আগামী ২৪ জুলাই খাগড়াছড়িতে মানববন্ধনসহ কঠোর কর্মসূচী ঘোষণার হুমকি দেওয়া হয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, পার্বত্য অধিকার ফোরামের চেয়ারম্যান ও বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. মাঈন উদ্দীন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সাধারণ সম্পাদক এসএম মাসুম রানা, যুগ্ম সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন, জেলা সাংগঠনিক পারভেজ আলম, খাগড়াছড়ি স:ক: আহ্বায়ক মো. ইব্রাহিম খলিল, সদস্য সচিব মো. রণি, টেকনিক্যাল কলেজ সভাপতি মো. সোহেল আরিয়ান, সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার তিন বাঙালি কাঠ ব্যবসায়ী হযরত আলী, মহরম আলী ও সালাউদ্দীন জেলার মহালছড়িতে কাঠ কিনতে গিয়ে অপহৃত হয়। অপহরণকারীরা মুক্তিপণের জন্য তাদের পরিবারের কাছ থেকে দফায় দফায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা আদায় করে নেওয়ার পর যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

সাংবাদিক সম্মেলনে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে ৪ শত কোটি টাকা চাঁদাবাজি করছে অভিযোগ করে বলা হয়, উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো তাদের রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড কায়েমের জন্য ও জাতিগত বিদ্বেষের বহি:প্রকাশ হিসেবে পাহাড়ে অব্যাহতভাবে বাঙালিদের ওপর জাতিগত হত্যা ও গুম এবং অপহরণ চালিয়ে যাচ্ছে।

নির্বিচারে গুলি করে পাখির মত মানুষ মারছে, তাদের গুলিতে গত ৪ মে প্রাণ দিয়েছে বাঙালি গাড়ী চালক মো. সজিব হাওলাদারসহ ৫ জন। তার একদিন পূর্বে হত্যা করা হয়েছে দুইজনকে। সজিব হত্যাকান্ডের কোন আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি প্রশাসন। তাদের হাতে জিম্মি পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ।

গত ৩ মাসে গুলি করে হত্যা করেছে ১৭ জনের বেশি মানুষকে। এর পরিপেক্ষিতে প্রশাসনের কোন আশাব্যঞ্জক অভিযান ও অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি।

সশস্ত্র উপজাতি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো এবং উপজাতি নেতৃবৃন্দের স্বাধীন জুম্মল্যান্ডের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের তাড়ানোর জন্য বাঙালিদের অর্থনীতি ধ্বংসের খেলায় মেতেছে। তারই অংশ হিসেবে মে-২০১৮ইং হতে অস্ত্রের মুখে জেলার বৃহৎ পানছড়ি বাজারকে পরিচালনা করতে দিচ্ছে না উপজাতি সশস্ত্র সংগঠন ইউপিডিএফ ও জেএসএস। গত দুইমাস যাবত পানছড়ি বাজারের দুইশত জনের বেশি স্থায়ী ব্যবসায়ী বাজার মিলাতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত। প্রশাসনের কোন প্রকার সহযোগীতা না পেয়েও বাধ্য হয়ে নিজ উদ্যোগে পণ্য আদান প্রদানের চেষ্টা করলে গত ২৮ জুন ব্যবসায়ীদের পণ্যবাহী গাড়ি ভাঙচুর করে, কুপিয়ে জখম ও আহত করে শুক্কুর আলী, সুজন ও ইমনসহ ৫/৬ জনকে।

পানছড়ি বাজার চালু করার জন্য চাঁদা হিসেবে ৫ কোটি টাকা দাবি করা হচ্ছে। যেমনটি করা হয়েছিল ২০১৭ সালের জানুয়ারীতে লক্ষীছড়ি বাজার বর্জণ করে। পরে প্রায় ২ কোটি টাকা চাঁদার বিনিময়ে চালু করা হয় লক্ষীছড়ি বাজার। অদ্যবধি বাঘাইহাট বাজার চালু করতে পারেনি। এভাবে লাগাতার হত্যা-গুম-অপহরণ ও ধর্ষণ অব্যাহত থাকলে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালিরা রোহিঙ্গাদের মত পরিস্থিতিতে পড়তে পারে।

দুই বাঙালি সংগঠনের দাবিগুলো হচ্ছে, জেলার পানছড়ি বাজার চালুর জন্য সাধারণ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীসহ সবার নিরাপত্তা বিধান করে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে পানছড়ি বাজার চালু করে সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষা করা, মাইক্রোবাস চালক মো. সজিব হত্যাকারীদের গ্রেফতার পূর্বক শাস্তির আওতায় আনা ও সজিবের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া, উচ্ছেদ হওয়া খাগড়াছড়ির বাবুছড়ায় সোনা মিয়া টিলার ৮১২টি বাঙালি পরিবার ও রামগড়ের সোনাই আগায় ১২০টি বাঙালি পরিবারকে তাদের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে তাদের নিরাপত্তা বিধানে স্থায়ী নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা, তিন পার্বত্য জেলায় শিক্ষা, চাকুরী ও ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোটা বৈষম্য দূর করে জনসংখ্যানুপাতে সমান সুবিধা দেওয়া, বাঙালি ব্যবসায়ীদের অর্থনীতি ধ্বংসের জন্য ষড়যন্ত্রমূলক ৯.৫% শতাংশ একতরফা বৈষম্যমূলক কর বাতিল অথবা সকল সম্প্রদায়ের জন্য ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সমান কর চালু করা, খাগড়াছড়ি জেলা সদরের সবুজবাগে অবস্থিত একমাত্র বাঙালি ছাত্রাবাসটি সংস্কার করে পর্যাপ্ত সুবিধা দেওয়া ও পর্যায়ক্রমে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ, মহিলা কলেজ ও জেলার ১০টি কলেজে ১০টি বাঙালি ছাত্রাবাস নির্মাণ করা।

Exit mobile version