parbattanews

পাহাড়ে পর্যটনবিরোধী প্রচারণা

%e0%a6%aa%e0%a6%be%e0%a6%b9%e0%a6%be%e0%a7%9c-%e0%a6%aa%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%9f%e0%a6%a8

ফজলুল হক, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম থেকে ফিরে:

পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। পাহাড় নদী আর ঝর্ণার আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ ছুটে যান পাবর্ত্য অঞ্চলের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে।

জানা গেছে, দেশের এক-দশমাংশ ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত পার্বত্য তিন জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। পাহাড়, নদী-নালা ও গাছপালাবেষ্টিত অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ ভূমিতে রয়েছে বাঙালি ও ১৩টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত। পর্যটন শিল্পের জন্য রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। কিন্তু কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্য তা আজ ভূলুণ্ঠিত হতে বসেছে।

তিন জেলার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান:
বান্দরবানে নীলাচল, নীলগিরি, বগালেক, মেঘলা, স্বর্ণমন্দির, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক পাহাড় ও ঝুলন্ত ব্রিজ, খাগড়াছড়িতে কলাংপাড়া, দীঘিনালা বনবিহার, রিছাং ঝর্না, আলুটিলা রহস্যাময় গুহা, সাংকসর নগর বৌদ্ধা মন্দির এবং রাঙ্গামাটিতে সাজেক ভ্যালি, কর্ণফুলী হ্রদ, পর্যটন মোটেল ও ঝুলন্ত সেতু, সুবলং ঝর্ণা, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান, ফুরমোন পাহাড়, রাজবণ বিহার, তিনটিলা বণবিহার ও উপজাতীয় যাদুঘর প্রভৃতি রয়েছে।

সম্ভাবনাময় পর্যটন:
রিছাং বর্ণার কাছে বসবাসকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চাকমা অধিবাসী জানান, বাপু আমার পাঁচটি মেয়ে, তিন মেয়ের বিয়া দিয়েছি। ১০জন নাতি নাতনি রয়েছে।এখানে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসে। মানুষের চা বিড়ি খাওয়ানোর জন্য প্রথমে একটি দোকান করেছি। এখন আমার চারটি দোকান। দোকানগুলো আমার স্ত্রী, মেয়ে এবং নাতি নাতনিরা চালায়।

পর্যটন শিল্পবিরোধী প্রচারণা:
পর্যটন আকৃষ্ট এসব অঞ্চলকে অশান্ত করতে দীর্ঘদিন ধরেই পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা নানাভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।পাবর্ত্য এলাকায় বেশকিছু পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। এসব পর্যটন কেন্দ্রে মানুষের আগমনে সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বিস্তারে বাধার সৃষ্টি হওয়ায় পার্বত্য এলাকায় পর্যটন শিল্পের বিরুদ্ধে পাহাড়ি সন্ত্রাসীগোষ্ঠীগুলো নানাভাবে ষড়যন্ত্র শুরু করছে।

তাদের এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন।তারা কঠোর হস্তে সন্ত্রাসীদের দমন করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, সাজেক, কাপ্তাই ও পাবর্ত্য এলাকায় যাতে পর্যটকরা না আসে এ জন্য পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।পর্যটকদের ভয়ভীতি দেখানো হয়, বিভিন্ন হোস্টেল ও রিসোর্টের মালিকদের কাছ থেকে উচ্চহারে চাঁদা আদায় করা হয়। এমন কি বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়।

২০১৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে বান্দবানের অন্যতম দর্শনীয় স্থান স্বর্ণ মন্দিরে দর্শনার্থীদের প্রবেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।পরে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হস্তক্ষেপে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়।

রাঙামাটির অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সাজেক। এ পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ করার জন্য নানামুখী চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসীরা।২০১৪ সালের পর্যটন মওসুমে ৩১ ডিসেম্বর রাঙামাটির সাজেকে সাবেক এক সেনা কর্মকর্তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তার গাড়িতে আগুন দেয় উপজাতি সন্ত্রাসীরা।

এ ঘটনায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পর্যটকরা যাতে সাজেকে পরিদর্শন করতে না আসে এ কারণে এসব ঘটানো হয়।সাজেক এলাকার বাসিন্দারা জানান, আমরা এই পর্যটন কেন্দ্রের কারণে অনেকভাবে উপকৃত হচ্ছি।কিন্তু কিছু সন্ত্রাসী নানাভাবে এই পর্যটন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

কয়েক মাস আগে ‘বৃহত্তর সাজেক ইউনিয়নবাসী’ব্যানারে পর্যটনের বিরুদ্ধে একটি লিফলেট প্রচার করেছে সন্ত্রাসীরা।তারা ওই লিফলেটে বেশকিছু মিথ্যা তথ্য তুলে ধরে ‘পর্যটন তুলে নাও- নিতে হবে’ এই শ্লোগান দেয়ার জন্য এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।কিন্তু সন্ত্রাসীদের লিফলেট প্রচারণার বিরুদ্ধে ‘রুইলুই ও কংলাকপাড়ার দরিদ্র এলাকাবাসী’ পাল্টা লিফলেট প্রচার করেছে।

‘সাজেক ইউনিয়নবাসীর কাছে রুইলুই ও কংলাকপাড়াবাসীর আকুল আবেদন, সাজেকের রুইলুইপাড়া পর্যটন কেন্দ্র বন্ধের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ান’ শিরোনামের লিফলেটে বলা হয়েছে, সাজেক পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে এই দুই পাড়ার দরিদ্র জনগণের ব্যাপক আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটেছে। এখন আমরা স্ত্রী পরিবার নিয়ে সুখে বসবাস করতে পারছি।

এই পর্যটনকে কেন্দ্র করে ৩৫জন দরিদ্র ত্রিপুরা, মিজো ও পাংখু জনগোষ্ঠীর সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় ব্যক্তি উদ্যোগে ছোট বড় ১২টি রিসোর্ট ও হোস্টেল গড়ে উঠেছে, যার মাধ্যমে আরও অনেক পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে।

প্রচারে বলা হয়, ‘আমরা এলাকাবাসী আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর।কাজেই অসামাজিক কার্যক্রমের অভিযোগ ভিত্তিহীন। পর্যটনের জন্য আমাদের কোন পরিবার ও ব্যক্তিকে উচ্ছেদ হতে হয়নি বরং হেডম্যানের সহায়তায় নতুন স্থানে পরিকল্পিত ও আধুনিক বাসস্থান তৈরি করে দেয়া হয়েছে যার মাধ্যমে আমরা উপকৃত হয়েছি।

এই এলাকায় পর্যটনের উন্নয়ন হলে সকলেই উপকৃত হবে। কাজেই অন্যের কথায় এবং গুজবে কান দিয়ে আমাদের নিজেদের পেটে লাথি মারবেন না। চাঁদাবাজিতে ব্যর্থ হয়ে এবং নিজেদের হীনস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে সাজেক এলাকাবাসীর নামে যে উসকানিমূলক কথাবার্তা ও আন্দোলনের পায়তারা চলছে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।

এই পর্যটনকে কেন্দ্র করে পরিবহন খাতে অনেক লোকের কর্মস্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিদিন এই এলাকায় নতুন নতুন দোকানপাট গড়ে উঠেছে, যা এ অঞ্চলের জনগণের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাবে।

মনে রাখবেন, অতিথিরা দেবতা সমান, এদের নিরাপত্তা প্রদান সকলের দায়িত্ব। তবে বর্তমানে সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণ বন্ধ থাকলেও তাদের হুমকি এবং দেয়ালে সাঁটানো পোষ্টার দিয়ে পর্যটকবিরোধী প্রচারণা বন্ধ নেই’।

সাজেক এলাকার পর্যটন এসোসিয়েশনের প্রশাসক সিয়াতা লুসাই বলেন, এখানকার পর্যটন শিল্পের বিরুদ্ধে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা নানাভাবে ষড়যন্ত্র করছে। তারা চাঁদা দাবি করে, এলাকায় ভয়ভীতি দেখায়। ২০১৪ সালে একটি গাড়ি পুড়িয়ে এলাকায় ভীতি সৃষ্টি করেছিল।তারপর থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রহরায় সাজেকে পর্যটকদের ভ্রমণ করানো হয়।

সাজেক এলাকার এক হোটেলের মালিক ও ধর্ম প্রচারক মইতে লুসাই জানান, আমরা এ পর্যটন কেন্দ্রের মাধ্যমে অনেক আয় রোজগার করতে পারছি। কিন্তু সন্ত্রাসীরা আমাদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। ফলে আমাদের এখানে ব্যবসা করা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। এখানকার পর্যটন শিল্পের বিরুদ্ধে লিফলেট ছেড়ে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানান।

– সূত্র: জাগো নিউজ

Exit mobile version