parbattanews

মার্চে চায়না, ভারত ও মিয়ানমার থেকে প্রবেশ করা বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশীর হদিস নেই

দেশব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে সাধারণ ছুটি চলছে ২৬ মার্চ থেকে। পার্বত্য অঞ্চলের প্রেক্ষাপট সমতল থেকে অনেকটা ভিন্নতর হলেও মানুষকে ঘরে আটকে রাখতে এখন পর্যন্ত প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে সাথে সেনাবাহিনীও।

এই চরম দুর্যোগের দিনে চাঁদাবাজী না থামালেও দূর্গম পাহাড়জুড়ে এ মহামারি ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এবার কঠোর অবস্থানে পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ এবং জেএসএস। মাঠের রাজনীতিতে দল দু’টির সম্পর্ক বিপরীতমুখী হলেও এ ক্ষেত্রে তারা অনেকটা ঐক্যবদ্ধ। দেশজুড়ে অঘোষিত লকডাউন চললেও পাহাড়ে কিন্তু কঠোর অবস্থানে তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমনটাই জানালেন একাধিক পাহাড়ি নেতা।

সূত্র জানায়, রাজনৈতিকভাবে অনেকটা আত্মগোপনে থাকা প্রসিত বিকাশ খীসার ইউপিডিএফ পাহাড়ে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বেশ নড়েচড়ে বসেছে। একই কর্মসূচীকে ভিন্নভাবে পালন করার চেষ্টা চালাচ্ছে সন্তু লারমার জেএসএসও।


আরো পড়ুন:

পাহাড়ের চরম দুর্দিনে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও প্রথাগত নেতারা কোথায়?


তাদের মতে, চাকরীর সুবাদে দেশের বিভিন্ন গার্মেন্টস বা কল কারখানায় হাজার হাজার উপজাতীয় নারী পুরুষ কর্মরত রয়েছে। লকডাউন বা ছুটির পর কোন লোক যাতে পাহাড়ের ভেতর প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এসব দেখভাল করার জন্য এলাকার মেম্বার, হেডম্যান, কার্বারীদের কাছে বিশেষ নির্দেশনাও পাঠানো হয়েছে। দল দুটির নির্দেশনা অমান্য করলে রয়েছে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থাও। তবে আপতদৃষ্টিতে দল দুটি দেশের অভ্যন্তরে চাকুরীজীবীদের ক্ষেত্রে কিছুটা সফল হলেও শঙ্কা রয়েছে প্রবাসীদের ক্ষেত্রে।

বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ মাস জুড়ে বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত প্রবাসী উপজাতীয় পাহাড়ে ঢুকেছে। এদের সিংহভাগই চীন, মিয়ানমার, ভারত ও মালয়েশিয়া ফেরৎ। পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মগুরুদের বড় একটি অংশ চীন থেকে মিয়ানমার হয়ে দেশে ঢোকে প্রায়শই। ভারতের সাথে অরক্ষিত দুর্গম সীমান্ত থাকায় এসব সীমান্ত দিয়ে দুইপাড়ের উপজাতীয় বাসিন্দারা নিয়মিত যাতায়াত করে। অনেকেই অবৈধ সীমান্ত ব্যবসায় সাথে জড়িত। ব্যবসায় প্রয়োজনে নিয়মিত এপার ওপার করে।

চীন, মিয়ানমার, ভারত এবং মালয়েশিয়া ফেরৎ ব্যক্তিদের অনেকেই আবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। দূর্গম পাহাড়ে এদের তদারকি কিভাবে করা হচ্ছে বা কারা করছে তাও অজানা। এসব প্রবাসীদের নিয়ে পাহাড়ের মানুষ বেশ আতংকে রয়েছে।

ফলে এই মূহুর্তে সমতলের চেয়ে পাহাড় অধিকতর ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। অনেকে তথ্য গোপন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করায় করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত কাউকে শনাক্ত করাও মুশকিল হয়ে পড়েছে। তাছাড়া পাহাড়ীদের বড় একটি অংশ ওঝা বৈদ্যর উপর নির্ভরশীল। ফলে এদের মধ্যে কেউ সংক্রমিত হলেও তান্ত্রিক চিকিৎসার কারণে লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যাবে। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকির পরিমাণটাও বেড়ে যাবে। দূর্গম পাহাড়ের এসব তথ্য বের করা দুঃসাধ্য হলেও এখনই তাদের তালিকা তৈরি করা প্রয়োজন।

এ ছাড়াও পাহাড়ের দুর্গম বৌদ্ধ মন্দির ও কিয়াংগুলোতে এখনো শত শত ভিক্ষু এবং আশ্রমগুলোতে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী রয়েছে। দুর্গম ও পশ্চাদপদ হওয়ায় এদের কাছে স্বাস্থ্যবার্তা পৌঁছানো কষ্টকর। এদেরকে ঠিকমতো স্বাস্থ্য সচেতন, সতর্কতা সম্পর্কে জানানো এবং তাদের গতিবিধি মনিটরিং না করা হলে পাহাড়ে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞগণ মত প্রকাশ করেছেন।

Exit mobile version