parbattanews

পাহাড়ে হাইব্রিড পেঁপে চাষ : বেকার যুবক থেকে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ি ওয়াগ্গার নিপুণ

papa-2

আলমগীর মানিক, রাঙ্গামাটি:
কোনো প্রকার সাহায্য ছাড়াই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পড়ালেখা চালিয়ে নিজেকে একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে গড়ে তুলে অবশেষে সোনার হরিণ নামক চাকুরির খোজেঁ সরকারি-বেসরকারি দপ্তরগুলোতে ধরনা দিয়েও একটি চাকুরি যোগাতে পারেননি। কারণ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলেও নেই দেশের তথাকথিত এক্সক্লুসিভ যোগ্যতা যাকে প্রাকৃতিক ভাষায় উপাধি দেওয়া হয়েছে সেকেন্ড গড হিসেবে। তারপরও হতাশায় নিমজ্জিত না হয়ে নিজের চাচা’র ডকুমেন্টারি জায়গার কাগজপত্র দিয়ে শহরের কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে মাত্র ৮০ হাজার টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে রাস্থার পাশে একটি পাহাড়ি নীচু জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন হাইব্রিড জাতীয় পেঁপের আবাদ।

উপরের তথ্যগুলো একজন শিক্ষিত পাহাড়ি বেকার যুবকের। রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলাধীন ওয়াগ্গায় বসবাসরত এই যুবকের নাম নিপুন বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা। মাত্র সাত মাসের ব্যবধানে এই পাহাড়ি যুবক এক লক্ষ বিশ টাকা মূলধন খাটিঁয়ে বর্তমানে তার মূলধন দাড়িয়েছে প্রায় পাচঁ লাখ টাকায়। নিপুন পেঁপে চাষ করে এখন আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি রীতিমত স্বাবলম্বী একজন ব্যবসায়ী। সে প্রায় ১একর পতিত জমিতে পেপেসহ বিভিন্ন রকমের বাগান করেছে। নিপুনের এই অভাবনীয় সাফল্য দেখে এলাকার বেশ কয়েকজন বেকার যুবক এখন হাইব্রিড জাতীয় পেঁপে চাষের দিকে ঝুঁকছে।

পেঁপে চাষ করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের বিষয়ে নিপনের সাথে আলাপকালে সে জানায়, কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করে দুই বছর আগে কাপ্তাইয়ের ওয়া¹ায় পাহাড়ের পতিত জমিতে দুইশ চারা দিয়ে পরীক্ষামুলকভাবে পেঁপে চাষ শুরু করে নিপন বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা। প্রথমবারেই পেপে চাষ করে সফলতা এবং আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় নিপন আরো বেশী পরিমান পতিত জমি নিয়ে সেখানে পেপেসহ অন্যান্য ফলজ বাগানের পরিকল্পনা করছে বলে জানান। শুধু  পেপে চাষ করে নিপন তঞ্চঙ্গ্যা  আয়  করেছেন ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা । পতিত জমিতে পেপেসহ বিভিন্ন ফলফলাদির চাষে নিপনের সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই তার এই পদ্ধতিতে পেপেসহ অন্যান্য ফসলের চাষে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছে। কাপ্তাইয়ে কৃষকদের মাঝে ইতিমধ্যেই জনপ্রিয়  হয়ে উঠেছে পেঁপে চাষ। পেপে চাষের খরচ অনুযায়ী বেশী লাভজনক হওয়ায় পাহাড়ী এলাকায় এখন বেড়েছে পেঁপে চাষ।

এলাকার অনেক কৃষক জানান, নিপনের সফলতা দেখে এলাকার তারা অনেকেই শুরু করে দিয়েছেন পেঁপে চাষ। পাহাড়ী ছড়া থেকে পানি সংগ্রহ করে পেঁপে চাষ করছেন তারা।
কাপ্তাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের কৃষি কর্মকর্তা সুষ্মিতা চাকমা জানান,  পেপে চাষে লাভজনক হওয়ায় কাপ্তাই এলাকায় পেঁপে চাষ বাড়ছে।  এবছর ১৪৫ হেক্টর জমিতে পেপে চাষ হয়েছে। পেপেসহ বিভিন্ন ফলজ চাষে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগীতা ও পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষিকর্মকর্তা সুষ্মিতা চাকমা। শুধু পেপে নয়। কৃষি পরামর্শ এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে পাহাড়ের মাটিতে যেকোন ফসল চাষাবাদ করা হলে পাহাড়ে ভাল ফলন ফলানো সম্ভব। পাহাড়ের হাজার হাজার একর পরিত্যক্ত জমি কৃষি উৎপাদনে কাজে লাগানোর জন্য সরকারের সহায়তা কামনা করেছেন পাহাড়ের কৃষকেরা।

Exit mobile version