কক্সবাজারে দুইদিনের টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। কাদাময় শহরে পরিনত হয়েছে পৌর এলাকা। রাস্তায় উঠেছে হাঁটু পরিমান পানি। এ কারনে অনেক এলাকায় ড্রেনের পানি বসতবাড়িতে ঢুকে পড়ে। এ সময় ডুবে যায় রাস্তাঘাট। কয়েক ফুট পানির নীচে তলিয়ে গিয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে অনেক সড়ক উপ-সড়ক। অতিরিক্ত ময়লার কারণে ড্রেন দিয়ে পানি চলাচল করতে পারেনি। ফলে সড়কের উপর দিয়ে অনায়াসে প্রবাহিত হয়েছে টানা বৃষ্টির পানি। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি ও আকষ্মিক বিরতিহীন বৃষ্টিতে আটকা পড়েছে সর্বস্তরের জনসাধারণ। কর্মমূখি মানুষের চলাচলেও বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে চরমভাবে।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভার অধিকাংশ এলাকায় নালা-নর্দমা, ড্রেন দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বসতবাড়ি ও দোকানপাট। তাতে পানি চলাচল করতে না পেরে বাসা বাড়িতে ঢুকে পড়ছে ময়লাযুক্ত পানি। এতে সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে জমে থাকছে পানি। এ সব অবৈধ দখলদারদের কারণে একদিকে যেমন জনদুর্ভোগ বাড়ছে, অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর নগরীর অস্বাস্থ্যকর তৈরি পরিবেশ হচ্ছে দিনদিন।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দূর্বলতার সুযোগে দখলদাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসী বারবার তাগাদা ও অভিযোগ করলেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে বৃষ্টির কারণে কক্সবাজার শহরের এন্ডারসন রোড, পান বাজার সড়ক, বাজারঘাটা, রুমালিয়ারছড়া, পেশকারপাড়া, বাজারঘাটা, হোটেল-মোটেল জোন, টেকপাড়া, পিটিআই স্কুল রোড়, সদর উপজেলা গেইটসহ অনেক এলাকায় পানি চলাচল করে সড়কে। এতে কাদাযুক্ত হয়ে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো। এসব এলাকায় আটকে পড়ে সাধারণ মানুষ। বন্ধ হয়ে যায় বেশিরভাগ যানবাহন চলাচল। পানিতে উল্টে গেছে সিএনজি অটোরিক্সাসহ বেশ কয়েকটি ছোটখাটো যানবাহন।
বিশেষ করে, কক্সবাজার শহরের নুরপাড়া এলাকাটি একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এইখানকার ড্রেনে শহরের অধিকাংশ ছোট বড় ড্রেন মিলেছে। আইবিপি রোড, হাসপাতাল সড়কসহ উপরের সব পানি এই ড্রেন দিয়ে চলাচল করে। নুর পাড়ার প্রবেশপথ তথা উমিদিয়া মাদ্রাসার সামনে দিক থেকে ড্রেনটি গিয়ে সোজাসুজি বাঁককালিতে পড়েছে। এক সময় এই ড্রেনটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও গভীর থাকলেও এখন অনেকটা ভরে গেছে। অধিকন্তু ড্রেন দখল করে নির্মিত হয়েছে দোকানপাট ও বসতবাড়ি। ড্রেনের জমে থাকা ময়লা-আবর্জনাগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার করা হচ্ছে না। যে কারণে বর্ষা মৌসুম আসলেই এখানকার বাসিন্দাদের অবর্ণনীয় ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধাগ্রস্ত হয় জীবন চলা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ড্রেনের দক্ষিণ মাথা থেকে শেষ পর্যন্ত অন্তত ১৫ জন দখলদার নির্মাণ করেছে বসতবাড়ি ও দোকানপাট। তারা পৈত্রিক জমির মতো ভোগ করছে পৌরসভার ড্রেনের জায়গা। এ সব অবৈধ স্থাপনার কারণে ড্রেন দিয়ে পানি চলাচল করতে না পেরে ময়লা পানি বসতবাড়িতে ঢুকছে। চলার পথে জমে থাকছে ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি। দেখা গেছে, উত্তর মাথায় ড্রেনের জায়গার উপর নির্মিত হয়েছে কয়েকটি বসতবাড়ি। এ কারণে উপর থেকে আসা পানি নিচে নামতে পারছে না। স্বাভাবিক চলাচলের পথ বাধাগ্রস্ত হয়ে আশপাশের বসতবাড়ি ও আঙ্গিনায় ঢুকে পড়ছে ড্রেনের পানি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শনিবার ভোর থেকে বৃষ্টির কারণে নুর পাড়ার প্রধান সড়কটি জলমগ্ন ছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। ব্যাহত হয় স্বাভাবিক চলাচল। এ নিয়ে তাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
এদিকে, এলাকাবাসীর এমন দুর্দশার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কক্সবাজার পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের নারী সদস্য ও প্যানেল মেয়র শাহেনা আকতার পাখি। তিনি স্বচক্ষে দেখেন দখলবাজির কারণে করুণ পরিণতি। এলাকাবাসীর মুখ থেকে দু:খ দুর্দশার কথা শোনেন।
এ সময় স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন জুনু, নুরুল আবছার শিকদার, ডাক্তার ওয়াহিদুল আলম, কামরুল হাসান আজাদসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা কাউন্সিলর শাহেনা আকতার পাখিকে অতি দ্রুত সমস্যা নিরসনের আহ্বান জানান। ভোগান্তির শিকার মানুষের অনুরোধের প্রেক্ষিতে শাহেনা আকতার পাখি পৌর মেয়র মুজিবুর রহমানের সাথে আলাপ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে এলাকাবাসীকে আশ্বস্থ করেন। সেই সঙ্গে ড্রেন দখল করে স্থাপনাকারীদের আগামী দুই দিনের মধ্যে দখল ছেড়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। অন্যথাই মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদের শাস্তি প্রদানেরও হুঁশিয়ারি দেন।
প্যানেল মেয়র শাহেনা আকতার পাখি জানান, নুরপাড়ার ড্রেন দখল করে ঘরবাড়ি, দোকানপাট করেছে অনেকে। তাতে পানি চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত হয়ে ড্রেনের পানি সড়কে চলছে। সমস্যা সমাধানে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে ভারী বৃষ্টিতে শহরের পিটিস্কুল এলাকা, বাজারঘাটা ও কলাতলি সবচেয়ে প্লাবিত হয়েছে। রাস্তায় জমে গেছে হাটু পরিমান পানি। এতে পর্যটকসহ স্থানীয়রা চরম দুর্ভোগে পড়ে। পানির কারনে গাড়ি চলাচলও ব্যাহত হয়। অপরদিকে ভারী বৃষ্টিতে টেকনাফ, উখিয়া, রামু, পেকুয়া, চকরিয়া, মহেশখালী উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। টানা ভারী বর্ষনের ফলে কক্সবাজারে ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় পাহাড় ধ্বসের আশংকা করা হচ্ছে।