parbattanews

পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকি থাকায় দীঘিনালায় তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, তিন শতাধিক শিক্ষার্থী ও অভিবাবক বিপাকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকি এড়াতে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায় তিনটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।

পাঠদান বন্ধ ঘোষণা হওয়া বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে  ক্ষেত্রপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মায়াফা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চমড়াছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ধ্বসের ঝুঁকিতে রয়েছে আরো ৬ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এদিকে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হওয়ায় ঐ সব বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখতে  বিকল্প পথ খুঁজছে প্রশাসন। এছাড়াও আরো ৬টি বিদ্যালয়কে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন।

সরেজমিনে ৫ জুলাই মায়াফা পাড়া এলাকা গিয়ে দেখা যায় বিদ্যালয়ের ভবনের কয়েক ফুট পাশ থেকে পাহাড় ধ্বসে নিচে পড়ে গেছে। ভবনের প্রতিটি পিলারই বিধ্বস্ত। বিদ্যালয়টি অনেকটা ঝুলে আছে শূণ্যের উপর। এতে করে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন।গত কয়েকদিন বর্ষণ অব্যাহত থাকায় বিদ্যালয় ভবনের নিচের অংশের মাটি সরতে শুরু হওয়ায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রশাসনের নির্দেশে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে।

বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মায়াফা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০৫ জন, তারমধ্যে পিএসসি পরীক্ষার্থী ১৪ জন। চমড়াছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮২ জন, তারমধ্যে পিএসসি পরীক্ষার্থী ১৯ জন।

মায়াফা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিএসসি পরীক্ষার্থী ধন্য চরণ ত্রিপুরা জানায়, বৃষ্টি পড়ায়  মঙ্গলবার বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেয় স্যাররা। কিন্তু আজ বাসা থেকে জোর করে স্কুলে পাঠানো হয়েছে।

স্কুলের সামনে বসে থাকা দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী জোবালি ত্রিপুরা, নাইলাটি ত্রিপুরা, নিমান চাকমা জানতোনা যে তাদের বিদ্যালয়ে ক্লাশ হবে না। প্রতিদিনের মতো বিদ্যালয়ে এসে হাজির হয়েছে তারা।

তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী তুরান ত্রিপুরার পিতা তজেন্দ্র ত্রিপুরা জানান, পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকি থাকায়  মঙ্গলবার থেকে বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করে শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ে উঠার রাস্তা কাঁদাময় হওয়ায় ছেলেমেয়েদের উঠতে অসুবিধা হচ্ছে। তার উপর পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকিতে আমরা শঙ্কিত।

মায়াফা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক টিপলু বড়ুয়া জানান, পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকি থাকায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মঙ্গলবার থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়ে দুপুরে খাবার দেয়ায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসছে।

পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকি থাকায় পার্বত্য জেলা পরিষদ গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদ্যালয়ের নিচে একটি ধারক দেয়াল নির্মাণ করে দেয়। কিন্তু গত কয়েকদিনের বর্ষণে বিদ্যালয়ের নিচের অংশের মাটি সরে যেতে শুরু করেছে। এতে করে পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

চমড়াছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তন্ময়া চাকমা জানান, পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকি থাকায় গত মঙ্গলবার থেকে প্রশাসনকে অবহিত করে বিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মো. শেখ শহিদুল ইসলাম জানান, প্রবল ও মাঝারি বর্ষণে পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকি থাকায় মঙ্গলবার উপজেলার দুইটি বিদ্যালয় ও বুধবার আরেকটি বিদ্যালয়সহ তিনটি বিদ্যালয়ে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সময় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় উপজেলার ৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা লেখা হয়েছে। বিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশই নির্মাণ ত্রুটির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানান ইউএনও।

দীঘিনালা উপজেলা চেয়ারম্যান নব কমল চাকমা জানান, বিদ্যালয়গুলো পুরোপুরি পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই বড় ধরনের ঝুঁকি এড়াতে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।ভারী বর্ষণ কেটে না যাওয়া পর্যন্ত বিদ্যালয় দুটি বন্ধ থাকবে। এছাড়াও দীঘিনালা উপজেলায় আরো ৬টি বিদ্যালয় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে তারা জানান।

Exit mobile version