পেকুয়ার নুনাছড়ি খাল পুনঃখনন কাজ শুরু, বাড়বে কৃষি জমির পরিমাণ


কক্সবাজারের পেকুয়ায় পুনঃখনন কাজ শুরু করা হয়েছে পাহাড় থেকে উৎপত্তি নুনাছড়ি খালের। জনগুরুত্বপূর্ণ এ খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।
গত সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে উপজেলার টইটং ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় নুনাছড়ি খালে মাটি কাটার কাজ শুরু করা হয়েছে। চট্টগ্রাম কক্সবাজারের সেচ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন এ কাজ বাস্তবায়ন করছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বরাদ্দ থেকে সরকারের এ সংস্থাটি ওই কাজ সম্পন্ন করছেন বলে দায়িত্বশীল সুত্র নিশ্চিত করেছেন।
কৃষির উন্নয়ন ও সেচ সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসির) অনুকুলে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। এরই মধ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ৭শ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। ৫ বছর মেয়াদে বিএডিসি এ সব বরাদ্দের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করবে। ওই খাতের বরাদ্দ থেকে বিএডিসি উপজেলার টইটং ইউনিয়নের নুনাছড়ি খালে মাটি খনন কাজ বাস্তবায়ন করছে। মেসার্স মাসুদ এন্টারপ্রাইজ নামক একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই কাজের কার্যাদেশ পেয়েছেন। তারা ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নুনাছড়ি খালে ২ কিলোমিটারে খনন কাজ বাস্তবায়ন করবে।
স্থানীয়রা জানান, নুনাছড়ি খালের উৎপত্তি টইটং বাঁশখালীর সীমান্তবর্তী পাহাড়ী অঞ্চল থেকে। উজান থেকে নেমে আসা পানি প্রবাহে এ খাল অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। এটি টইটং মৌজার ১ নং সিটের আওতাভুক্ত খাল। বৃটিশ আমলেই এ খাল কৃত্রিমভাবে খনন করা হয়। বিগত প্রায় ২০/৩০ বছর ধরে ওই খালটি মরাখালে রূপান্তর হয়। স্থানীয় কিছু ভূমিদস্যু চক্রের লোলুপ দৃষ্টিতে খালের গতি থেমে যায়। হ্রাস পায় ওই খালের নাব্যতা ও প্রশস্ততা। অনেকাংশে এ খালটির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে যায়। মানুষের কুদৃষ্টি ও লোলুপ দৃষ্টিতে বহু জায়গায় এ খাল জবর দখল করা হয়। টইটংয়ের ১ নং ওয়ার্ডের জুমপাড়ার রজনীকুম নামক স্থান থেকে খাল খনন শুরু হয়েছে। পশ্চিম দিকে মালঘারা হয়ে স্কুলপাড়ায় এসে বাঁক পরিবর্তন হয়। দক্ষিণদিকে হাবিবপাড়া হয়ে বকসুমোড়া সেখান থেকে টইটংয়ের আলিগ্যাকাটা ও বাঁশখালীর দক্ষিণ পুইছড়ির কোনারপাড়ার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে ওই খাল টইটংয়ের সীমান্ত ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটারে চলছে মাটি খনন কাজ। এ দিকে খালের দৃষ্টিনন্দন খনন কাজে সন্তুষ্ট হয়েছেন কৃষকসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা আরো জানান, এ খালে খনন কাজ বাস্তবায়ন সম্পূর্ণ হলে টইটংসহ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুইছড়ির বিপুল জনগোষ্ঠীর সুফল বয়ে আসবে। সূচিত হবে কৃষিতে নতুন দিগন্তের সূচনা। বাড়বে সবুজের সমারোহ। প্রায় ১২শ একর জমিতে বাড়বে কৃষি আবাদ। উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে কৃষি ও কৃষিজ পণ্যের। বিশেষ করে বর্ষার সময় সুরক্ষিত থাকবে কৃষকের আমন ও আউশ ফসল। খালটি সংষ্কার না হওয়ায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের ফসল। খালটি পুনঃসংষ্কার হওয়ায় পানির প্রবাহ নিচের দিকে দ্রুত নেমে যাবে। জুমপাড়া, মালঘারা, স্কুলপাড়া, আলিগ্যাকাটা, মাদ্রাসাপাড়া, ফজুরমোড়া, ওয়াজখাতুনপাড়া, সোনাইয়াকাটা, পন্ডিতপাড়া, শের আলী মাষ্টারপাড়া, মিত্তান্তঘোনাসহ টইটংয়ের আরো অনেক এলাকায় কৃষিতে নবদিগন্তের সূচিত হবে। এ ছাড়াও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর দক্ষিণ ও পূর্ব পুইছড়ির হাইদারিঘোনা, মাওলারপাড়া, নুরাবাপের পাড়া, সাইয়েরপাড়া, আবদু রহমানপাড়া, কোনারপাড়া, সিকদারপাড়াসহ বিপুল এলাকায় বাড়বে ফসল ও সবজি আবাদ। হাবিবপাড়ার সিরাজ, আলিগ্যাকাটার নুরুল আবছার, আলমগীর, মালঘারার আবদুল মালেক, বকসুমোড়ার আবদুল মজিদসহ টইটংয়ের আরো বহু কৃষক জানান, তারা খাল খননে বেজায় খুশী। বর্ষার সময় পানির স্রোতে ফসল তলিয়ে যায়। এখন থেকে এ খালের পানি ও সেচের আওতায় বাড়বে সবজি ও ফসল উৎপাদন।
এদিকে খাল খনন করার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত আবু সুফিয়ান মোস্তফা কামাল অভিযোগ করেন, সরকারী খাস জমির পাশাপাশি খতিয়ান ভুক্ত আমরা প্রান্তিক কৃষকদের জমি বিএডিসির ঠিকাদার মাসুদের কাছ থেকে টইটং ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদ চৌধুরী চুক্তিভিত্তিক কাজ নিয়ে জোরপূর্বক আমাদের জমির উপর খাল খনন করছেন। এ খাল খনন করার আগে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর আমাদের কে জমি অধিগ্রহণের কোন নোটিশ করে নাই। আমাদের কে ক্ষতিপূরণ না দিয়ে খাল খনন কাজ শুরু করেছেন।
টইটং ইউপির চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এটি আমার টইটংয়ের জন্য সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ। ৪০ ফুট প্রস্থ হচ্ছে খাল দু’কুলে পাড়সহ। ৮ থেকে ১০ ফুট হচ্ছে গভীর। খালের তলা ১২ ফুট। দু’পাড়ে লোকালয়ের মানুষের যাতায়াতের পথও প্রশস্ত হচ্ছে। বড় স্বার্থের জন্য ক্ষুদ্র স্বার্থকে বিসর্জন দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। জায়গা জমির দাম বাড়বে। কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে। টইটং ও সীমান্তবর্তী বাঁশখালীর অন্তত ২০ হাজার মানুষ বর্ষার সময় বন্যা থেকে রক্ষা পাবে। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন আবু সুফিয়ানের জমিতে খাল খনন হচ্ছে সে অহেতুক অভিযোগ করছে। মূলত খাস জমির উপর করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসির) পেকুয়ার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক জানান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সেচ প্রকল্পের আওতায় সীমান্তবর্তী অঞ্চলের এ খালটিতে সংষ্কারকাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। কাজের মান ও গতি নিরুপনের জন্য আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। অধিগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এসব জানেন না বলে জানান।
এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাসেল জানান, বিএডিসি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ। কাজটি তারাই বাস্তবায়ন করছে। তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়ে গেলে এখানকার কৃষির উন্নয়ন ও কৃষিজমিতে আবাদ বাড়বে।
এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানা, বিষয়টি আমি জানার পর এসিল্যান্ড কে সার্ভেয়ার দিয়ে জমি পরিমাপ করার নির্দেশ দিয়েছি।