পেকুয়ায় তিন মাস পর গৃহবধূ হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা

fec-image

পেকুয়ায় শশুর বাড়িতে জান্নাতুল ফেরদৌস নামের এক গৃহবধুকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যার অভিযোগে ৩মাস পর আদালতে মামলা দায়ের করেছে নিহতের পরিবার। চলতি মাসের ১৪ জুলাই চকরিয়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের ভারুয়াখালী গ্রামের হাজী জাফর আলমের স্ত্রী ও নিহত গৃহবধূর মা নুর নাহার বেগম বাদী হয়ে ৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। যার মামলা নং সিআর ৩৬১/২০ইং। ধারা ৩০২/ ৫০৬/৩৪দ:বি।

মামলার আসামীরা হলেন, পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের আবদুল হামিদ সিকদার পাড়া গ্রামের মৃত বশির আহমদের পুত্র ও নিহদের শশুর আবুল কাসেম (৫৫), শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম (৫০), দুই ননদ উম্ম আইমন (১৮) ও উম্মে সাদিয়া, রাজা মিয়ার স্ত্রী লতিফা বেগম (২৪)সহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে। মামলার শুনানীতে এদিন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারামতে বাদী নুর নাহার বেগমের জবানবন্ধী রেকর্ড করেন এবং তিন কার্য দিবসের মধ্যে মামলার ঘটনার বিষয়ে কোন আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা যাচাইপূর্বক আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পেকুয়া থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।

জানা যায়, চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের আবদুল হামিদ সিকদার পাড়া গ্রামের শশুর বাড়ি থেকে জান্নাতুল ফেরদৌসের লাশ উদ্ধার করে পেকুয়া থানা পুলিশ। এরপর লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে পুলিশ। ঘটনার পর নিহত জান্নাতুল ফেরদৌসের মা নুর নাহার বেগম পেকুয়া থানায় এজাহার দায়ের করলেও পুলিশ সেটি মামলা হিসেবে নেয়নি।

আদালতে দায়েরকৃত হত্যা মামলার অভিযোগে নিহত জান্নাতুল ফেরদৌসের মা নুর নাহার বেগম উল্লেখ করেছেন, তার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের সাথে ইসলামী শরিয়াত মোতাবেক গত ০১/০৩/২০১৮ইংরেজি তারিখে আবুল কাসেমের পুত্র মাহবুবুল আলম প্রকাশ বাদশার সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর তার মেয়ের স্বামী জীবিকার তাগিদে লিবিয়ায় চলে যায়। বিদেশ যাওয়ার সময় তিনি তার মেয়ের স্বামীকে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন।

মামলার এজাহারে নুর নাহার বেগম আরো দাবি করেছেন, তার মেয়ের স্বামী লিবিয়া চলে যাওয়ার পর শশুর বাড়ির লোকজন তার মেয়ের উপর কারণে-অকারণে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে এবং বেশ কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করে। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১২ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টার দিকে শশুর আবুল কাসেম, শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম ও দুই ননদ মিলে তার মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসকে অকথ্য গালিগালাজসহ শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছিল। নির্যাতনের ঘটনার বিষয়টি জান্নাতুল ফেরদৌস তার অপর মেয়ে ফরিদা ইয়াসমিনকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছিলেন। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে পর দিন ১৩ এপ্রিল সকালে শশুর বাড়ির লোকজন তার মেয়েকে আবারো শারীরিক নির্যাতন করে। শশুর আবুল কাসেম এক কেজি ওজনের বাটখারা হাতে নিয়ে তার মেয়েকে বুকে, গলায়, ও তলপেটে পর পর আঘাত করে। এরপর শশুর ও দুই নদসসহ আরো কয়েকজন তার মেয়েকে লোহার রডদ্বারা আঘাত করে। নির্যাতনের এক পর্যায়ে তার মেয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। পরবর্তী তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে মর্মে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আড়াল করার জন্য নানামুখী চক্রান্ত শুরু করে শশুর বাড়ির লোকজন।

স্থানীয়রা জানান, খবর পেয়ে ওই দিন পেকুয়া থানা পুলিশের এসআই সনজীত চন্দ্র নাথ সঙ্গীয় পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে জান্নাতুল ফেরদৌসের লাশ উদ্ধার করে এবং লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। সুরতহাল রিপোর্টে তৈরীর সময় নিহতের গলার ডান পাশে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।

পেকুয়া থানার এস আই সনজীত চন্দ্র দেব এ প্রসঙ্গে জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধারপূর্বক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেছিলেন। এসময় নিহতের গলার ডান পাশে একটি দাগের চিহ্ন পাওয়া গেছে। পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে লাশের ময়না তদন্ত করা হয়। এখনো ভিসেরা রিপোর্ট আসেনি। তাই বিস্তারিত বলা যাচ্ছেনা।

নিহতের মা নুর নাহার বেগম অভিযোগ করেছেন, তার মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য শশুর বাড়ির লোকজন মোটা অংকের বিনিময়ে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকার্তাকে ম্যানেজ করে পুরো হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি আড়াল করার জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তার নিহত মেয়ের প্রকৃত ময়না তদন্ত রিপোর্ট নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেছেন।

পেকুয়া থানার ওসি কামরুল আজম জানান, পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছিলেন। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওসি জানান, ময়না তদন্তের ভিসেরা রিপোর্ট এখনো আসেনি। রিপোর্ট হাতে না আসা পর্যন্ত হত্যা না আত্মহত্যা বলা যাবেনা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মামলা, হত্যার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন