parbattanews

রোহিঙ্গারা ফিরতে ইচ্ছুক! প্রত্যাবাসনের খবর নেই!

২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ঢলের ৩ বছর পূর্তিতে কোন দাবী দাওয়া সম্বলিত সভা-সমাবেশের আগাম আয়োজন নেই। তবে ঘরোয়াভাবে কোন-কোন ক্যাম্পে স্বপ্রনোদিত হয়ে দোয়া-প্রার্থনা করার কথা রয়েছ বলে অনেকেই দাবী করেন। তাও পরিস্থিতি বুঝে।

গত বছর ২৫ আগস্ট পালিত হয়েছে নানা দাবী সম্বলিত প্রায় ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বিশাল সমাবেশ করে। গত দুই বছর এ দিবসটি আসে এবং যায়। কিন্তু, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরা নিয়ে কোন সিদ্ধান্তই বাস্তবায়িত হচ্ছেনা। ফলে অনিশ্চয়তায় রোহিঙ্গারা।

তাঁরা জানে না কবে তাদের দেশ মিয়ানমারে ফিরতে পারবে। আন্তর্জাতিক মহলের নানা তৎপরতা সত্ত্বেও প্রত্যাবাসন নিশ্চিত না হওয়ায় এ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গাদের মাঝে।

২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবস উপলক্ষ্যে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দিবসটি পালনে ব্যাপক অনুষ্ঠান মালা থাকতো। এ বছরে কিন্তু চিত্র ভিন্ন ছিল।

বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে ভয়, আতংক আর বিপর্যস্থ রোহিঙ্গারা। তাই উল্লেখ যোগ্য কোন কর্মসূচী চোখে পড়েনি। তবে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে কোন -কোন এনজিও ঘরোয়াভাবে দিবসটি পালন করার খবর পাওয়া গিয়েছিল।

রোহিঙ্গারা বলছেন, মিয়ানমার সরকারের দমন নিপীড়নের শিকার হয়ে বাপ-দাদার ভিটেমাটি ছেড়ে শরণার্থী হয়েছি। জীবন ধারণের উপকরণসহ সবদিক দিয়ে সুখে থাকলেও মনটা পড়ে আছে রাখাইনে।

কিন্তু, আন্তর্জাতিক মহলের দীর্ঘ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও নিরাপদ ও মানসম্পন্ন প্রত্যাবাসন পিছিয়ে গেছে বার-বার।

এছাড়াও বিশ্বব্যাপী করোনা নিয়ে দাতা দেশগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ায় ঘোর অন্ধকারে রয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। চাপা পড়ে আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সব কার্যক্রম।

এ কারণে সব ধরনের অপরাধ থেকে পার পেয়ে যাবে মিয়ানমার সরকার। তবে পররাষ্ট্র সচিব মিয়ানমার সরকারের দোষারোপ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমার কে দায়ী করেছেন।মিয়ানমার সরকার প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে কোন আন্তরিক পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন।

উখিয়ার কুতুপালং টিভি রিলে উপকেন্দ্র সংলগ্ন ৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি নুরুল আলম, মো. সাদেক ও মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সংঘটিত ঘটনায় প্রাণ রক্ষায় এসেছিলাম, এবার ফিরে যেতে চাই। সহযোগিতা যতই পাইনা কেন, শরণার্থী জীবন ভাল লাগে না।

গরমে রোহিঙ্গা বস্তিতে থাকলেও মনটা রাখাইনে পড়ে থাকে। আমরা স্বপ্ন দেখি রাখাইনে ফিরে যাবার। কিন্তু, দিন যতই যাচ্ছে ততই অনিশ্চিয়তায় পড়ে যাচ্ছি আমরা।

রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা মাস্টার আব্দুর রহিম বলেন, জানিনা আমাদের দেশ মিয়ানমারে কবে ফিরতে পারব। এমনিতেই মিয়ানমারের নানা টালবাহানা, বিশ্ব সম্প্রদায়ের সদিচ্ছার অভাব, তার উপর মরণব্যাধি করোনাভাইরাস ঘোর অন্ধকারের দিকে নিয়ে আসলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। এ কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আদৌ হবে কিনা জানে না কেউ।

একই কথা বলছেন উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি মাহমুদুল করিম, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিনারা বেগম, লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সৈয়দ করিম,আমান উল্লাহ,মুসা মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দিল মোহাম্মদ, বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লালু, সোনালী ও ফয়েজ উল্লাহ মাঝিসহ অনেকেই।

তারা বলেছেন, আমাদের আশ্রয়দাতা দেশ বাংলাদেশ সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করার জন্য। কিন্তু মিয়ানমারের চলছাতুরীর ফাঁদে পুরো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।

এদিকে রোহিঙ্গাদের ভরণ-পোষণ, নিরাপত্তা ও উগ্রপন্থি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়া ঠেকানো নিয়ে বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেও নিজ দেশে তাদের প্রত্যাবাসন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন দেশের আর্থিক সহায়তাও কমে আসছে। ফলে রোহিঙ্গাদের নিয়ে সংকট আরও গভীরতর হচ্ছে। দিন যতই গড়াচ্ছে বিশ্বের বিশাল এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বাড়ছে অস্থিরতা। বাড়ছে খুনখারাবি থেকে শুরু করে নানা অপরাধ। স্থানীয় লোকজনও ধৈর্য হারাচ্ছে।

জানতে চাইলে কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ ও প্রত্যাবাসন কমিটির সভাপতি ও উখিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, এমনিতে নানা কারণে বাংলাদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফেরার বিষয়টি ঝুলে আছে, উপর বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস এর প্রভাব। এতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি চাপা পড়ে আছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ- মিয়ানমারের জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে একাধিক বৈঠকের পরও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখেনি। রোহিঙ্গা ফেরাতে মিয়ানমারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।

প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো দরকার। এভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা না গেলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কোন দিনও হবে না।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিবেশী হিসেবে মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের আগমন শুরু হয় ১৯৭৮ সালে। এরপর থেকে কারণে-অকারণে দলে দলে অনুপ্রবেশ করে রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর ও ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ আগমন ঘটে।

রাখাইনে সহিংস ঘটনায় প্রাণবাঁচাতে পালিয়ে আসে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা। নতুন-পুরাতন মিলিয়ে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৭জন রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে।

Exit mobile version