parbattanews

প্রত্যাবাসনের দাবিতে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা নারীদের সমাবেশ

প্রত্যাবাসনের দাবিতে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অনুষ্ঠিত হয়েছে রোহিঙ্গা নারীদের সমাবেশ। জনগোষ্ঠীটির প্রচলিত প্রথা ভেঙ্গে এই প্রথমবারের মতো একসাথে সমবেত হলো হাজারেরো বেশি বিভিন্ন বয়সী রোহিঙ্গা নারী।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সকালে রিইন্ট্রোডিউসিং উইম্যান’স লিডারশিপ শিরোনামে এই সমাবেশের আয়োজন করে এফডিএমএন রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটি।

উখিয়ার লম্বাশিয়া ১ ইস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আয়োজিত এই সমাবেশে উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অংশ নেন রোহিঙ্গা নারী প্রতিনিধিরা।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিজানুর রহমান চৌধুরী, আরআরআরসি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিথৌপ্রো মারমা, সিআইসি – ক্যাম্প- ১ ইস্ট ও ওয়েস্ট। এছাড়াও রিশমা (রোহিঙ্গা নেত্রী), লায়লা (রোহিঙ্গা নেত্রী), শহিদা (রোহিঙ্গা নেত্রী), মৌলভি ছৈয়দ উল্লাহ (রোহিঙ্গা নেতা) ও হাসিনা বিবি (রোহিঙ্গা নেত্রী) সহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে প্রধান অতিথি বলেন, “রোহিঙ্গাদের মর্যাদার সাথে স্বদেশে ফেরাতে বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।”

রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে  তিনি বলেন, আপনারা গণহত্যার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন কিন্তু ক্যাম্প দীর্ঘস্থায়ী বসবাসের জায়গা নয়। আপনারা আপনাদের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। আপনাদের দেখাতে হবে আপনারা মিয়ানমারের বোঝা নয় মিয়ানমারের সম্পদ।

তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের মধ্যে আপনারাই শুধু রেমিট্যান্স পাঠান। আপনাদের আচার-আচরণ মার্জিত করতে হবে, ক্যাম্পে মারামারি হত্যা বন্ধ করতে হবে। তাহলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আপনাদের ফিরিয়ে নিবে। বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার সরকারকে আপনাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হলে ক্যাম্পে আপনাদের অপরাধের কথা স্মরণ করে দিয়ে আপনাদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করে।

রোহিঙ্গা নারীদের এই সমাবেশের প্রশংসা করে তিনি বলেন, “বিশ্বায়নের এই সময়ে নারীর ক্ষমতায়নের বিকল্প নেই। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও আজকে রোহিঙ্গা নারীরা প্রচলিত প্রথা ভেঙ্গে এখানে জড়ো হয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।”

সমাবেশের বক্তব্যে ২০নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে আসা রোহিঙ্গা নারী নেত্রী রশিদা খাতুন বলেন, “আমরা বাংলাদেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ, তারা আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। তবে এই আশ্রিত জীবন আর চাই না, ফিরতে চাই নিজেদের প্রিয় আরাকানে। আমরা মায়ের জাত, নিজেদের সন্তানদের নিজস্ব সংস্কৃতিতে আমাদের বড় করতে হবে।”

এফডিএমএন রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটির নেতা মোহাম্মদ সৈয়দুল্লাহ বলেন, “রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশই নারী, আমরা চেয়েছি আমাদের বাড়ি ফেরা কর্মসূচিতে তারা যুক্ত হোক এবং আজ সেটাই হলো। ঐক্যবদ্ধ হলে রোহিঙ্গা নারীদের থামানো যাবে না, আজ তারা সেটাই প্রমাণ করেছে।”

২০১৭ সালে নতুন করে মানবিক বিপর্যয়ে পড়ে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাড়ে সাত লাখের বেশি। ৬ বছরে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ লাখে, সব মিলিয়ে ১২ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে বাস করছে বাংলাদেশে।

রোহিঙ্গা বক্তারা তাদের বক্তব্যে তাদের অধিকার সহকারে মিয়ানমারে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন ও নারী নেতৃত্ব সৃষ্টি, ক্যাম্পের শৃঙ্খলা রক্ষায় সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং তাঁদের নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে ক্যাম্পে ক্যাম্পে কাজ বা প্রচারণা করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

পরে মোনাজাতের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সভাটির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

Exit mobile version