প্রত্যাবাসন বিরোধী চক্র সক্রিয়: ৬১ এনজিও’র আপত্তি

fec-image

দু’দেশের সকল প্রস্তুতি থাকার পরও তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে রাজি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। যার ফলে দ্বিতীয় দফায় ব্যর্থ হন সংশ্লিষ্ঠরা। তবে প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্থ করতে সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতারা ছিল তৎপর। এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত ৬১টি এনজিও প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেন, সাক্ষাৎকার দেয়া ২৯৫ রোহিঙ্গা পরিবারের কেউই স্বেচ্ছায় মিয়ানমার ফিরে যেতে রাজি নয়। তাই প্রত্যাবাসন শুরু হবে কিনা তা নিশ্চিত করে এখনি বলা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

দ্বিতীয় বারের মত বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা প্রত্যার্পন উদ্যোগ বাধাগ্রস্থ করতে শেষ মূহুর্তে এসে রোহিঙ্গা সেবায় নিয়োজিত দেশী বিদেশী ৬১ টি এনজিও যৌথ বিবৃতিতে দিয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের একটি অংশ ও কতিপয় এনজিও এ নিয়ে তেমন সন্তুষ্ট হতে পারছে না। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যার্পনের ব্যাপারে যখন দুই দেশসহ সংশ্লিষ্টরা মোটামুটি প্রস্তুত। তখনই মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সঙ্কটের কথিত অবনতির ধূঁয়ো তুলে বিবৃতি দিয়েছে ACTED, Action Against Hunger (ACF), Action Aid Bangladesh, Adventist Development and Relief Agency(ADRA), World Concern, World Vision, Young Power in Social Action (YPSA) সহ ৬১টি এনজিও। তারা নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ায় শরণার্থীদের জড়িত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এতে তারা বলেছে, মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন বিষয়ক সাম্প্রতিক খবরে শঙ্কিত এবং উদ্বিগ্ন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। তারা নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত। এনজিওগুলো মিয়ানমারে পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা ব্যক্ত করে নিরাপদ ও স্বেচ্ছামূলক প্রত্যাবাসন নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে ২২ আগস্ট সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উখিয়ার পাশ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা জুড়ে বিজিপির পক্ষ থেকে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা। অপরদিকে মিয়ানমার বিজিপি ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে রোহিঙ্গাদের বরণে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।

কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি ও কক্সবাজার সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘প্রত্যাবাসন বিরোধী যে কোনো রকম তৎপরতা শক্ত হাতে দমন করা না হলে প্রত্যাবাসন কখনো সম্ভব নয়।

উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, আমরা শুরু থেকে বলে আসছিলাম রোহিঙ্গাদের বেশি পশ্রয় না দিতে। কিন্তু কিছু এনজিও সংস্থা রোহিঙ্গাদের চাকরী দিয়ে, বিপুল পরিমাণ ভাতা দিয়ে, নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে সরকারি সুযোগ সুবিধা দিয়ে মিছিল মিটিং করার অনুমতি দিয়ে তাদের লোভী করে তুলেছে। যার কারণে রোহিঙ্গারা সহসায় ফিরতে রাজি হচ্ছেনা।

এছাড়া তারা যে দাবী করছে সেটা তাদের দেশের নিজস্ব সাংবিধানিক বিষয়। হয়তো সব দাবি একসাথে পূরণ নাও হতে পারে। এখন তারা যদি সব দাবি এখানে থেকে পূরণ করতে চায় সেটা কোন দিনও হবেনা। আর প্রত্যাবাসনও শুরু করা যাবেনা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রোহিঙ্গা নেতা জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হোক এটা রোহিঙ্গাদের একটি অংশ চায়না। এই বিদ্রোহী সংগঠনটি প্রত্যাবাসনকে বাধাগ্রস্থ করতে সক্রিয় ছিল। সে আরো বলেন, অনেক রোহিঙ্গা স্ব ইচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরতে রাজি থাকলেও ওইসব সংগঠনটি কারণে শেষ পর্যন্ত ফিরতে পারেনি।

যে সব দাবী মানলে মিয়ানমারে ফিরতে রাজি রোহিঙ্গারাঃ

নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, বাড়িঘর জমি-জমা ফেরত পাবার নিশ্চয়তা পেলেই ফিরতে রাজি রোহিঙ্গারা। এ সব দাবির কথা তুলে ধরেন রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস সোসাইটি নামের একটি সংগঠনের নেতারা।

এর আগে বাংলাদেশ যে ২২ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে দিয়েছিলো তা থেকে সাড়ে তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গার নাম প্রত্যাবাসনের জন্য নির্বাচন করে বাংলাদেশকে দিয়েছে মিয়ানমার।

তালিকা পাওয়ার পর এ সব রোহিঙ্গাদের মতামত যাচাই করার জন্য জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থাকে অনুরোধ করে বাংলাদেশ এবং ইউএনএইচসিআরের কর্মীরা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৯৫ পরিবারের মতামত নেয়। তাদের কেউ দাবি না মানলে ফিরতে অনাগ্রহ দেখায়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার, রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন