পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:
দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর পর আগামী ১১ নভেম্বর খাগড়াছড়ি সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আগমনের খবর জেলা শহর থেকে তৃণমুলে বসবাসকারী নানা গোত্র ও সম্প্রদায়ের সকল নাগরিককে আন্দোলিত করে তুলেছে। দেশের সরকার প্রধান খাগড়াছড়ি আসবেন তাই জনপ্রত্যাশাও বেড়েছে কয়েকগুণ। সবাই যার যার জায়গা থেকে প্রত্যাশার কথা জানান দিচ্ছে। যদিও তারা জানেন না তাদের প্রত্যাশা আদৌ পুরণ হবে কি না।
সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার খাগড়াছড়িতে এটি দ্বিতীয় সফর। এর আগে ১৯৯৮ সালের ১০ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে শান্তিবাহিনীর অস্ত্র সমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন। তারও আগে সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে ১৯৯২ সালে খাগড়াছড়ি সফরে আসেন শেখ হাসিনা। সরকার প্রধানের খাগড়াছড়ি আগমন উপলক্ষে স্থানীয় পাহাড়ী-বাঙ্গালী সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের প্রত্যাশার কথা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) আইন বিষয়ক সম্পাদক শক্তিমান চাকমা ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, শান্তিচুক্তির এক যুগের বেশী সময় পার হলেও চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর মুখে শান্তিচুক্তির পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের ঘোষণা প্রত্যাশা করেন। খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বাঁশরী মারমা সেমুতাং গ্যাস ফিল্ড থেকে গ্যাস ব্যবহার করার অধিকার প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত পাহাড়ী সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে আলাপকালে তারা প্রথাগত ভুমির অধিকার দাবী করে। তারা নাগরিকত্ব সনদ দেয়ার ক্ষমতা জেলা প্রশাসক থেকে সার্কেল চীফ-কে প্রদানের ঘোষণা দাবী করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য সিএইচটি পুলিশ গঠনের দাবী করে। সামপ্রতিক তাইন্দং সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পূণ:নিরূপণ এবং পাঁচ বছরের রেশন ও এককালীন ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতি-পূরণ দাবী করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
অপরদিকে বাঙ্গালী জনগোষ্ঠির বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার সাথে আলাপকালে তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার অপসারণ দাবী করে, বছরের পর বছর ধরে গুচ্ছগ্রামে বন্দি বাঙ্গালীদের স্ব-স্ব-ভুমিতে পূনর্বাসনসহ যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানের ঘোষণা চান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙ্গালী বিরোধী বিভিন্ন দাতা সংস্থার এক পেশে কর্মকাণ্ড বন্ধসহ তাদেরকে বিচারের আওতায় আনার দাবী জানান প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
প্রত্যাশার পাশাপাশি একটা আশঙ্কার কথা্ও বলেছেন বাঙালী সম্প্রদায়ের লোকজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন বাঙালী পার্বত্যনিউজের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে ভূমি বন্দোবস্তি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা স্থানীয় প্রশাসনের উপর প্রভাব খাটিয়ে বহুদিন ধরে খাস ও বাঙালীদের ৩৫ হাজার একর জমি ৭ হাজার পাহাড়ীদের কাছে বন্দোবস্তী দেবার ষড়যন্ত্র করছে। এর বিরুদ্ধে আদালতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তারা গোপনে ব্যাক ডেট দিয়ে আদালতের নির্দেশ বিরোধী কাজ চালিয়ে যাবার উদ্যোগ নিয়েছিল। ফলে আদালতের নির্দেশ অমান্য করায় তাদের বিরুদ্ধে আদালত সমন জারী করলে অপচেষ্টাটি ব্যর্থ হয়।
সূত্র দাবী করছে, প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে একই গোষ্ঠী পুণরায় সক্রিয় হয়েছে বলে বিভিন্নভাবে খবর পাওয়া যাচ্ছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে তার হাত দিয়ে আদালতের নির্দেশ বিরোধী বিপুল পরিমাণ জমি বিভিন্ন পাহাড়ী ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বন্দোবস্তি দিতে অতি সন্তর্পনে কাজ করে যাচ্ছে। বাঙালী নেতৃবৃন্দ নির্বাচনের আগে এ ধরণের কোনো বিতর্কিত ও আদালতের নির্দেশ বিরোধী কাজের সাথে প্রধানমন্ত্রীকে যেন কোনো কুচক্রিমহল জড়িত করতে না পারে তার জন্য সরকার ও স্থানীয় আওয়ামী নেতৃবৃন্দকে সতর্ক থাকতে বলেন।
এদিকে ব্যাবসায়ী সম্প্রদায়ের সাথে আলাপকালে তারা পার্বত্য খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধসহ তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে মর্মে ঘোষণা চান প্রধানমন্ত্রীর কাছে। ঠিকাদারী কাজের ক্ষেত্রে তারা পাহাড়ীদের ন্যায় বাঙ্গালীদেরও আয়কর মুক্ত কারার ঘোষণা চান প্রধানমন্ত্রীর মুখে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর খাগড়াছড়ি সফর অনেক গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করে জন-আকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হলে তার দলকে আগামীতে খাগড়াছড়ির নির্বাচনী আসনে খেসারত দিতে হতে পারে। সবমিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর খাগড়াছড়ি সফরকে সামনে রেখে নানামুখী হিসাব-নিকাশ চলছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ জেলার রাজনীতি সচেচতন মহলে। সবাই তাকিয়ে আছে ১১ নভেম্বরের সমাবেশের দিকে। সকলের দৃষ্টি আটকে আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণের দিকে।