parbattanews

প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ: স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪৬ বছর পার হলেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি লক্ষীধন ত্রিপুরা

কাপ্তাই প্রতিনিধি:

স্বাধীনতার ৪৬ বছর অতিবাহিত হলেও এখনও পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি কাপ্তাইয়ের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার লক্ষীধন ত্রিপুরা। স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হন্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি।

লিখিত একটি পত্রের মাধ্যমে জানা যায়, কাপ্তাই ইউপির বাসিন্দা ভাইজ্যাতলী মৌজা হরিণ ছড়ার এলাকার বসবাসরত লক্ষীধন ত্রিপুরা(৬০) জানান, ১৯৬৭ সালে তিনি পুলিশে চাকরী নিয়ে রাজশাহী সারদায় ট্রেনিংয়ে যান। ১৯৬৮ সালে ট্রেনিং পাশ করে নোয়াখালী মাইজদীতে বদলী হন। ১৯৭০ সালে নভেম্বরে বিবাহ করে ছুটি শেষে আবার চাকুরীতে যোগদান করেন।

২৬মার্চ পাক বাহিনীর উৎপাত  বেড়ে যাওয়ার কারণে নোয়াখালী পুলিশ লাইনের ইনচার্জ হাবিবুর রহমান বলেন, তোমাদের নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে যে যেদিকে পার চলে যাও। পরে আমি নোয়াখালী হয়ে ফেনী পৌছার পর ভারত বর্ডার পার হয়ে শ্রীনগর বাজার উঠি।

অতঃপর ওইদিন ওখানে রাত কাটিয়ে ভোর হওয়ার সাথে,সাথে সাব্রং চলে যাই। আবার রামগড় পার হয়ে বাড়ি যাওয়ার চেষ্টা করি । কিন্ত পাকবাহিনী চারদিকে কঠোর নিরাপত্তা রক্ষীদের কারণে বাড়ি যাওয়া আর সম্ভব হয়নি।

পরে রামগড় থানায় আবার যোগদান করি । প্রায় এক সপ্তাহ অবস্থান করার পর পাকবাহিনী রামগড় থানা আক্রমন করে। আমি আবার পালিয়ে সাব্রং চলে যাই। ওইখানে থাকা অবস্থায় রেডিওতে সংবাদ শুনি পুলিশ, সেনাবাহিনী, বি,ডি,আর পালিয়ে না থেকে মুক্তি ফোর্সে যোগদান করার ঘোষণা দেয়।

আমি ঘোষণা শুনে হরিনাতে গিয়ে মুক্তিফোর্সে যোগদান করি। এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধ করি।

কিছুদিন পর মেঘালয়ে অরেমে প্রদেশে ট্রেনিং সেন্টারে চলে যাই। সেখানে এক নাগারে ছয় মাস ট্রেনিং দেওয়ার পর প্রথম যুদ্ধ করি রংপুর শীল মারি বন্দরে। আমার সাথে থাকা শলমারি বন্দরের মোজাহিদ আব্দুর রহিম সিপাহী ওই যুদ্ধে শহীদ হন।

পরে আবার ভারত আসা হয়। ভারতে কয়েক দিন থাকার পর ময়মনসিং, জামালপুর গিয়ে একটি মাইন পোড়ানে হয়। সেটা কার্যকর না হওয়ার দরুন আবার ভারত চলে যাই। পরবর্তী সিলেট বড়লেখা পৌছে ওইখানে মুক্তিঘাটি করে যুদ্ধ করি।

এক পর্যায়ে পাকবাহিনী থেকে রাজাকার আমাদের হাতে ধরা পরে। এর কিছুদনি পর ভারতে চলে যাই। কিছুদিন ভারতে অবস্থান করার পর আবার ভারত থেকে সিলেট মৌলবী বাজার গিয়ে ঘাটি করি। ওইখান থেকে আমরা কালিদহ থানায় আক্রমণ করে ওই এলাকাকে আমরা মুক্তি বাহিনীর দখলে নিয়ে আসি।

তার পরের দিন বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। তার পরে আমাকে ১৫ দিনের জন্য জয়েনলিভ ছুটি দেওয়া হয়। ১৫ দিন ছুটি ভোগ করার পর আবার আমি নোয়াখালী মাইজদি পুলিশ লাইনে যোগদান করি।

১৯৭৪ সালে আমার স্ত্রীর ডেলিভারি হওয়ার কারণে ১মাসের ছুটি নিয়ে আসি। এর পর আমাকে বিভিন্ন সমস্যার কারণে চাকুরি হতে বরখান্ত করা হয়।

এর পর হতে আমি আমার এলাকা রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার হরিণছড়া নামক এলাকায় পাহাড়ে স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে অদ্যবতি পর্যন্ত পাহাড়ে জুম চাষ করে মানবতর জীবন যাপন করছি।

দেশের জন্য যুদ্ধ করে আজ দেশ স্বাধীন। কিন্ত আমি পরাধীন রয়ে গেলাম। কেউ আমার  কোন খোঁজ খবর নেয়নি বা নেওয়ার চেষ্ঠা করেনি। মুক্তিযুদ্ধ না করে আজ অনেকেই অনেক কিছু পেয়েছে কিন্তু আমি বঞ্চিত হয়ে পাহাড়ের মধ্যে ধুকে ধুকে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্ট পাচ্ছি।

তাই প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আকুল আবেদন, আমার বিস্তারিত সন্ধান নিয়ে আমাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হোক।

Exit mobile version