প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ‘ক্ষুদে ডাক্তার’

fec-image

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার গ্রামীণ জনপদের অন্যতম প্রাথমিক বিদ্যালয় পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নস্থ সিকদার পাড়া এলাকায় প্রতিষ্ঠিত বড় ভেওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা মেলে একদল ক্ষুদে ডাক্তার।

যে সব ক্ষুদে ডাক্তারগণ চিকিৎসা দিচ্ছেন তাদের বয়স আট থেকে সর্বোচ্চ বারো। এরা সবাই কর্ম নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। কেউ ‘রোগী’দের নাম তালিকাভুক্ত করছে, কেউ গম্ভীর মুখে রোগীদের ওজন মাপছে, আবার কেউ দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করছে।

কোনো শারীরিক সমস্যা চিহ্নিত করতে পারলে সঙ্গে সঙ্গেই তা রোগীকে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রোগী তার অভিভাবকের মাধ্যমে নিজ নিজ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা নেবেন।

পরে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলশাদ আনজুম রুমা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে সেবা নিতে পরামর্শ প্রদান করবেন। সারাদেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও টীম গঠন করে ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী একদল ক্ষুদে ডাক্তার তাদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

দেশব্যাপী প্রতিটি সরকারি বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠানে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি থেকে ক্ষুদে ডাক্তারদের এ কার্যক্রম কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের এহেন কার্যক্রমটি আগামী ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে।

এ কর্মসূচি সফল করতে বড় ভেওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতি ক্লাসে পাঁচজন ক্ষুদে ডাক্তার নির্বাচন করা হয়েছে। প্রতি বিদ্যালয়ে ১৫ জন করে এ ক্ষুদে ডাক্তার শিক্ষার্থী বাছাই করে তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। প্রতি বছর দুই দফায় জানুয়ারি ও জুলাই মাসে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। প্রতি মাসে দু’বার বিদ্যালয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বড় ভেওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ক্ষুদে ডাক্তারদের সেবাদান কর্মসূচির আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। বর্তমান সরকার বিদ্যালয়ে কৃমি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে জোরদার করার লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ২০১১ সাল থেকে উদ্ভাবন করা হয় এই ক্ষুদে ডাক্তার কার্যক্রম। পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কৃমি নিয়ন্ত্রণ, জলাতঙ্ক, ম্যালেরিয়া, পুষ্টিহীনতা, ভিটামিন এ-প্লাস ক্যাম্পেইন, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয়ে স্বাস্থ্য-শিক্ষা প্রদানসহ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হয়।

ক্ষুদে ডাক্তার গঠন, তালিকাভুক্তি ও কার্যক্রম : বড় ভেওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী ফাবিহা তাফান্নুন আফাফ জানায়, বিদ্যালয়ের নতুন এ কার্যক্রমে তারা খুবই আনন্দিত ও উৎফুল্ল। তাদের মাঝে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে এখন থেকে মনের মধ্যে দানা বাঁধছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ‘ক্ষুদে ডাক্তার’ বানাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। প্রতি শ্রেণী বা সেকশনের জন্য ৫ জনের একটি দল হিসেবে ১৫ শিক্ষার্থীর একটি দল বিদ্যালয়ে কাজ করছে। ক্ষুদে ডাক্তারদের ৫ জন মিলে একেকটি দল একজন করে গাইড শিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিদ্যালয়ে উচ্চতা মাপার ফিতা, দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষার চার্ট (আই চার্ট অথবা ই-চার্ট) এবং ওজন মাপার মেশিন সরবরাহ করা হয়েছে।

উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ‘ক্ষুদে ডাক্তার’দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরুর দু’তিনদিন আগেই প্রত্যেক টিম যার যার নির্ধারিত ক্লাসে উপস্থিত হয়ে আগাম ঘোষণা দেয়। এরপর শ্রেণীভিত্তিক সকল শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তারা শ্রেণীভিত্তিক মোট কতজন শিক্ষার্থী, কতজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে, শ্রেণীভিত্তিক শিক্ষার্থীদের গড় ওজন, উচ্চতা এবং অস্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রণয়ন ও সংখ্যা নির্ণয় করে তা নির্ধারিত ফরমে লিপিবদ্ধ ও বিদ্যালয়ে সংরক্ষণ করছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ক্ষুদে ডাক্তার ও কার্যক্রম বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আক্তার বলেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি মানুষের প্রতি সহমর্মিতা, মমত্ববোধ জাগরিত করে একজন প্রকৃত সমাজ সচেতন, দেশপ্রেমিক ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এ কর্মসূচি।

তিনি আরও বলেন, এই ক্ষুদে ডাক্তার টিম থেকেই অনেকে ভবিষ্যতে প্রকৃত ডাক্তার হয়ে দেশ ও জনগণের সেবায় এগিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি। এজন্য এলাকার জনপ্রতিনিধি, শিক্ষানুরাগী ও প্রতিটি বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ কার্যক্রমে সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন