ফারুয়া আর্য ধুতাঙ্গ বিমুক্তি বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দান উৎসব অনুষ্ঠিত
পঞ্চশীল প্রার্থনাসহ ধর্মীয় আচার পালনের মধ্য দিয়ে রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া আর্য বিমুক্তি বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গণ থেকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু হয়েছে।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) বেলা ২ টায় বৌদ্ধ বিহারের উপসক উপাসিকা সেবক-সেবিকা দায়ক-দায়িকার উদ্যোগে ৬ষ্ঠ দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু হয়।
পঞ্চশীলের মাধ্যমে মঙ্গলাচরনের পর ভিক্ষুসংঘকে চীবর উৎসর্গ করা হয়। ফারুয়া আর্য বিমুক্তি বৌদ্ধ বিহারে সমবেত প্রার্থনায় অংশ নিয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ ভিক্ষুসংঘকে চীবর দান করেন।
এর আগে পার্বত্য ভিক্ষু চীবর দান উৎসবে ধর্মসভায় পূণ্যার্থীদের উদ্দেশে প্রধান ধর্মদেশক ড. এফ দীপংকর মহাথের (ধুতাঙ্গ ভান্তে)
ধর্মসভায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন প্রদান দায়ক হেডম্যান সম্বল্য তনচংগ্যা। । এসময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি কিনারাম তনচংগ্যা ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে পবিত্র পঞ্চশীল প্রাখনায় এতে শত শত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল ভোরে পরিত্রাণ পাঠ, পুস্পপূজা ও ভিক্ষুসংঘের প্রাতঃরাশ, জাতীয় পতাকা ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, বুদ্ধপূজা, শীলগ্রহণ, সংঘদান ও ভিক্ষু সংঘের ধর্ম দেশনা, অনুত্তর পূণ্যক্ষেত্র ভিক্ষু সংঘকে পিন্ডদান। দুপুরে ছিল উদ্বোধনী সংগীত, দানোত্তম কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান, পূজনীয় ভিক্ষু সংঘের ধর্মোপদেশ ও সন্ধ্যায় ফানুস বাতি উত্তোলন।
ধর্মসভা ও পঞ্চশীল গ্রহণের পর চীবর দানের মাধ্যমে ‘মুক্তির অহিংসা বাণী ছড়িয়ে যাক মানুষে মানুষে এবং সামনের দিনগুলোতে শান্তি ফিরে আসুক ধর্মপ্রাণ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের’ এমন প্রার্থনার মধ্যদিয়ে চীবর দানের সমাপ্তি ঘটে। আর বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় প্রদীপ প্রজ্বলন ও ফানুস বাতি উত্তোলন। এর আগে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা তৈরিপূর্বক রং করে বাইন বুননের মাধ্যমে বিভিন্ন মঙ্গলময় কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহা সারম্ভরে উদযাপিত হয় কঠিন চীবর দান।
উল্লেখ্য, মহামতি বুদ্ধের প্রজ্ঞাদীপ্ত শিক্ষা ‘বর্ষাবাস তথা বর্ষাব্রত’ পালনের সমাপনী অনুষ্ঠান শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা এবং দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব হলো বৌদ্ধদের অতি পবিত্র ও মাহাত্ম্যপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এ পূত-পবিত্র অনুষ্ঠান-উৎসবের মধ্যদিয়ে বৌদ্ধরা তথাগত গৌতম বুদ্ধের পরম কল্যাণময় শিক্ষা চর্চার ব্রত হয়। হিংসা ক্রোধ ও মোহের বদলে প্রেম দয়া ও ক্ষমায় মানুষের কল্যাণে তপস্যা ভিক্ষুদের। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় বস্ত্রকে বলা হয় চীবর। তাই এ বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের পরিধেয় বস্ত্রের অভাব দূর করতেই কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান। তাই বৌদ্ধদের কাছে প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান অত্যন্ত গুরুত্ববহ পুণ্যানুষ্ঠান।