ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিটের ৫০ লক্ষ টাকা হাওয়া!

fec-image

মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক কেরুনতলী এলাকার বাসিন্দা শামসুল আলম। কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে অনেক সহায় সম্পদ হারিয়েছেন। তবু ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্ন ছিল বয়োবৃদ্ধ শামসুল আলমের। সেই চিন্তাধারা থেকে ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া টাকার একটি অংশ জমা রাখতে পূবালী ব্যাংকের মহেশখালী শাখা ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলামের পরামর্শ নিলেন। পরামর্শ মতো ব্যাংকে গেলেন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পূরণও করেন। শাখা ব্যবস্থাপকের দেখিয়ে দেয়া মতে সব কাগজপত্রে স্বাক্ষর দেন।নিজের নামে পূর্বের এ্যাকাউন্টে ‘ফিক্সড ডিপোজিট’ করেন ৭০ লাখ টাকা। দিনটি ছিল ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর।

চলতি বছরের (২০২০ সাল) ৪ অক্টোবর ব্যাংকের স্ট্যাটমেন্ট নিয়ে দেখেন, এ্যাকাউন্ট থেকে ৫০ লক্ষ টাকা হাওয়া। ‘নিজের হাতে জমা করা টাকা নাই’ দেখে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা। আশি বছরের উর্ধ্ব বয়স্ক শামসুল আলম পড়ে গেলেন মহাটেনশনে। এরপর ঘটনার কারণ খোঁজ নিতে গেলেন ব্যাংকে। কথা বলেন ব্যাংক ব্যবস্থাপকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে। তাতে ধরা পড়ে ভয়ানক কাহিনী। একেএকে বেরিয়ে আসে অনেক অজানা তথ্য। ভুক্তভোগি শামসুল আলম কেরুনতলী এলাকার মৃত হাজী মোজাহার মিয়ার ছেলে।

অবশ্যই এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখে বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগ করেছেন শামসুল আলম। সেখানে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।

অভিযুক্তরা হলেন, পূবালী ব্যাংক মহেশখালী শাখার ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম (৫০), মহেশখালী পৌরসভার গোরকঘাটা সিকদারপাড়ার বাসিন্দা মৃত মোহাম্মদ রশিদের ছেলে মিজানুর রহমান (২৮), তার ভাই জিয়াউর রহমান (২৩) ও তাদের মা আজিজুন্নাহার (৫৫)।

শামসুল আলম বলেন, আমার ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত ও স্বত্ব দখলীয় মহেশখালী আমাবশ্যাখালী ও হোয়ানক মৌজার জমি থেকে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করে সরকার। ক্ষতিপূরণের টাকা কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এল.এ) অফিসে গিয়া বিভিন্ন চেষ্টা তদবিরের মাধ্যমে উত্তোলনের ব্যবস্থা করি। ক্ষতিপূরণের টাকার বিপরীতে আমাকে পৃথক ২টি চেক প্রদান করেন। ২০১৯ সালের ২৭ জুন ৭৪,৫৯,৫৯১ টাকা এবং ৪ সেপ্টেম্বর ১১,৩৭,২০৪ পূবালী ব্যাংক মহেশখালী শাখায় ২টি চেকমূলে আমার ব্যাংক হিসাবে জমা প্রদান করি।

শামসুল আলম আরও বলেন, ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর আমার ব্যাংক হিসাবে ৭০ লক্ষ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করি।

ভাতিজা মিজানুর রহমান ও ব্যাংক ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলামের পরামর্শে ৫দিন পরে আবার ব্যাংকে যায়। গিয়ে ম্যানেজারের দেখিয়ে দেয়া ফরমসমূহে আমি দস্তখত করি। ম্যানেজার বলেন যে, আমার ‘ফিক্সড ডিপোজিটের’ ৭০ লক্ষ টাকার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

ব্যাংক হিসেব অনুযায়ী বছর শেষে জমাকৃত ৭০ লক্ষ টাকায় প্রায় ৭/৮ লক্ষ মতো লাভ পাওয়ার কথা। সে হিসেবে গত ৪ অক্টোবর ‘ব্যাংক স্টেটমেন্ট’ সংগ্রহ করি। তাতে দেখি, আমার হিসাবে জমা আছে মাত্র ২০ লক্ষ টাকা। ৫০ লক্ষ টাকা হাওয়া হয়ে গেছে। কারণ জানতে চাইলে ব্যাংক ব্যাবস্থাপক শফিকুল ইসলাম উত্তর দেন, আমি নাকি ৭০ লক্ষ টাকার বিপরীতে ভাতিজা মিজানুর রহমানকে ‘ওডিআই লোন’ প্রদান করি। অথচ এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংক মহেশখালী শাখার ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, দুই পক্ষের সাথে আমার কথা হয়েছে। যারা টাকা নিয়েছে তারা টাকা ফেরত দেবে বলে জানিয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে মিটমাট হচ্ছে।

উল্লেখ্য, মিজানুর রহমান এলাকায় একজন বখাটে ও মাদকাসক্ত ছেলে হিসেবে পরিচিত। ইতোপূর্বে সে ইয়াবাসহ ধরা পড়ে। অনেক দিন কারাভোগ করার পর মুক্ত হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন