ফুরফুরে মেজাজে আ’লীগ, অভিযোগ নিয়েই মাঠে বিএনপি-জাতীয় পার্টি
দ্বিতীয়ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বান্দরবানের চতুর্থ লামা পৌরসভা নির্বাচন। ভোটের দিন ঘনিয়ে আসায় জমে উঠছে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা। ভোটারদের মন জয় করতে এরই মধ্যে দিনরাত মাঠে ময়দানে চষে বেড়াচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। দিচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। তবে বরাবরের মতো সাধারণ ভোটার নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ পেলে উন্নয়নমুখী, সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে চান।
গত ৫ জানুয়ারি সরেজমিনে লামা পৌর এলাকার ছাগলখাইয়া, লাইনঝিরি, চেয়ারম্যানপাড়া, কলিংগা বিল, চম্পাতলী, লাইনঝিরি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে নির্বাচনকে ঘিরে সরব হয়ে উঠেছে এসব এলাকা। প্রতিটি পাড়ার অলিগলিতে ঝুলছে প্রার্থীদের পোস্টার। বাজার এলাকা ব্যানার, পোস্টারে ছেয়ে গেছে। কিন্তু নির্বাচনী আমেজ চোখে পড়েনি কোথাও। এরপরও প্রার্থীরা করোনা মহামারী ও শীত উপেক্ষা করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। দিচ্ছেন নানা প্রুতিশ্রুতি। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জনগণের ভোটে দ্বিতীয়বারের মতো জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হলেও বিএনপি ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীদের মাঝে রয়েছে শঙ্কা। এরপরও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয় পাবেন এমন প্রত্যাশা তাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, লাইনঝিরি ও বাজার এলাকায় ৪০-৫০ জন দলীয় নেতা ও কর্মী নিয়ে প্রচারণা করছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জহিরুল ইসলাম। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছে। প্রচারণায় অংশ নেওয়া কর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যায়। প্রার্থী ভোট চাওয়ার সময় কর্মীরা নৌকার শ্লোগানে মুখরিত করে তোলছেন অলিগলি। প্রচারণাকালে কথা হয় প্রার্থী জহিরুল ইসলামের সঙ্গে।
তিনি প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, গতবারে নির্বাচিত হওয়ার পর বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে অন্তত ১শত কোটি টাকার কাজ সম্পাদন এবং চলমান রয়েছে লামা পৌর এলাকায়। তার মতে প্রত্যেক ওয়ার্ডে উন্নয়ন হয়েছে। আগামী ১৬জানুয়ারীর নির্বাচনের জন্য অন্তত নব্বইভাগ মানুষ দলমত নির্বিশেষে তাকে ভোট দেওয়ার প্রত্যয়ব্যক্ত করেছেন।
পুনরায় নির্বাচিত হলে তিনি অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার পাশাপাশি নতুন কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন বলে জানান। প্রতিপক্ষের শঙ্কার বিষয়ে তিনি আরও বলেন- ২০১৫সালে বিএনপির যে প্রার্থী ছিলেন তিনি অনেকটা জনপ্রিয়। ওই প্রার্থীর সাথে হয়তো প্রতিযোগিতা ভালো হতো। কিন্তু বর্তমান বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জনবিচ্ছিন্ন যার কারণে তাদের অনেক নেতাকর্মী আমার জন্য পরোক্ষভাবে কাজ করছেন।
কলিঙ্গাবিল এলাকায় ১০-১২ জন যুবক নিয়ে প্রচারণাকালে কথা হয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র ধানের শীষ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ শাহীন এর সঙ্গে। তিনি পার্বত্যনিউজকে বলেন- বিএনপি একটি জনপ্রিয় দল। যার কারণে ক্যাম্পিংকালে ভোটারদের যথেষ্ট সাড়া পাচ্ছি। কিন্তু ভোটারদের একটাই দাবি ‘রাতের ভোট’ না হয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ পেলে ধানের শীষ প্রতীককে তারা বিজয়ী করবেন। এই প্রার্থীর মতে, পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডই ঝুঁকিপূর্ণ। নির্বাচিত হলে তিনি- পৌর এলাকার মানুষের সকল দুর্দশা লাঘবে কাজ করার পাশাপাশি, মাদক, সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠন, শিক্ষা ও যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন করতে চান।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে লড়ছেন এটিএম শহীদুল ইসলাম। রাজবাড়ি এলাকায় একটি গাড়িতে চড়ে একাই প্রচারণা করছিলেন তিনি। এসময় কথা হলে বিএনপির প্রার্থীর বক্তব্যের সাথে অনেকটা তাল মিলিয়ে বলেন- গত ১৪ বছর ধরে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ হারিয়ে গেছে। সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য তিনি প্রশাসনকে অবহিত করেছেন। নির্বাচিত হলে প্রত্যন্ত লামায় পাহাড়ি-বাঙ্গালীর মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ অটুট রাখা, লামাকে জেলা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে চান তিনি।
মেয়র প্রার্থীদের সাথে তাল মিলিয়ে প্রচারণায় পিছিয়ে নেই সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা। জয়ের আশায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছুঁটছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। হাউস ক্যাম্পিং, উঠান বৈঠকের মাধ্যমে চাইছেন ভোট। দল ও পরিবারের লোকজন নিয়ে মাঠে নেমেছেন প্রার্থীরা। নিজ পরিচয় তুলে ধরে মেয়রদের মতো তারাও দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি।
চম্পাতলী এলাকায় ক্যাম্পিংকালে ১,২,৩নং সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী রোকেয়া খানম কেয়া বলেন, নির্বাচিত হলে মেয়রের সহায়তা নিয়ে এলাকার পানির সমস্যার সমাধানের পাশাপাশি রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করে গরীব দুখী মানুষের সাথে থাকতে চান।
নির্বাচিত হলে একইভাবে মানুষের উন্নয়নে কাজ করার আগ্রহ রয়েছে বলে পার্বত্যনিউজকে জানান ৭, ৮, ৯নং ওয়ার্ডের প্রার্থী জামিনা আক্তার, ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আলাউদ্দিন।
এদিকে লামা পৌর নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আর মাত্র কয়েকদিন। তবে নির্বাচন নিয়ে এখানকার ভোটারদের মধ্যে খুব একটা আগ্রহ নেই। ভোটের বিষয়ে কোন প্রশ্ন করলেই পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েন ‘ভোট দিনে নাকি রাতে হবে’। কিছু ভোটারের মাঝে আগ্রহ দেখা গেলেও তা মূল কেন্দ্রবিন্দু কাউন্সিলর নির্বাচন নিয়ে। তবে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক ও নেতাকর্মীদের মাঝে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গেছে। সাধারণ ভোটারদের মতে নির্বাচনের সুন্দর পরিবেশ পেলে উন্নয়নের পাশাপাশি সৎ ও যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীদের জয়ী করতে চান তারা।
তফসীল ঘোষণার পর থেকে এখনো শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম চলছে লামা পৌর এলাকায়। ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি প্রার্থীদের সবধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। ভোটের দিন ৩৯টি বুথে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের সবধরনের ব্যবস্থার কথা জানান উপজেলা নির্বাচন অফিসার আলমগীর হোসেন।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, লামা পৌর নির্বাচনে ৩জন মেয়র, ৯ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর এবং ২৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে ২ ও ৪নং ওয়ার্ডের প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। পৌর এলাকায় মোট ১৩ হাজার ৩শ ৮৯ জন ভোটার। যারমধ্যে মহিলা ভোটার ৬ হাজার ৩৮৬ জন এবং পুরুষ ভোটার ৭ হাজার ৩০৩ জন। ৯টি কেন্দ্রের ৩৯টি বুথে ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা রয়েছে আগামী ১৬জানুয়ারি।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর লামা পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. জহিরুল ইসলাম নৌকা প্রতীকে ৬ হাজার ৬০৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রার্থী ছিলেন বিএনপির মো. আমির হোসেন।