parbattanews

ফুলকুমারি চাকমার ৪ বছরের ঘরবন্দী জীবনের অবসান

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার খেদারমারা ইউনিয়নের ঢেবাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষিকা ফুলকুমারি চাকমা। তিনি সাজেক ইউনিয়নের বেটলিং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে সাজেক থেকে ফেরার পথে উপজেলার বাঘাইহাট মারিশ্যা সড়কের ৯ কিলো এলাকায় সন্ত্রাসীদের ব্রাশ ফায়ারে পরেন। এই ঘটনায় ৮ জন নিহত ও ৩৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়েও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদেরই একজন এই স্কুল শিক্ষক ফুলকুমারি চাকমা। গুলিতে সেদিন তার মেরুদণ্ড দুই ভাগ হয়ে গিয়েছে। ঢাকা সিএমএইচে ৩ মাস চিকিৎসা নিয়ে সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

তার পর থেকে এই শিক্ষিকার স্থান হয়েছে হুইল চেয়ারে। স্বামী, দুই সন্তান ও প্রতিবেশীদের সহায়তা নিয়ে কোমড়ে বেইল্ট বেধে হুইল চেয়ারে চলাচল করেন তিনি। দীর্ঘ ৪ বছর হুইল চেয়ারে বন্দী তার শিক্ষকতার জীবন। এই শিক্ষিকা এখনো সাজেকের দুর্গম বেটলিং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত হলেও পঙ্গুত্বের কারণে তিনি স্কুলে যেতে পারেন না। এ প্রতিবেদকের কাছে শিক্ষিকার দাবি ছিলো তার বাড়িতে যাওয়ার সড়কটি হুইল চেয়ার চলার উপযোগী করে তৈরি করে দিলে পার্শ্ববর্তী উলুছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি শিক্ষকতা চালিয়ে নিতে পারতেন। তার সেই দাবি বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন ও পরিষদকে জানালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুদর্সন চাকমা দ্রুত সড়ক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং খেদারমারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিল্টু চাকমার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেন।

সড়ক তৈরির ফলে এক জনের সহায়তায় হুইল চেয়ারে চেপে স্কুলে গিয়ে এখন নিয়মিত পাঠদান করতে পারছেন এই শিক্ষিকা। উলুছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রিয়াজুল ইসলাম হিরা বলেন ফুলকুমারি চাকমার জন্য আমরা গর্বিত। তিনি সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করেও থেমে যাননি। তিনি আমাদের শিক্ষক সমাজের গর্ব।

বাঘাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্সন চাকমা বলেন, তিনি সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পঙ্গু হয়েছেন। তাই তার দাবির প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ সম্মান রয়েছে। এ জন্য দ্রুত তার বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার সড়কটি নতুন করে তৈরি করা হয়েছে।

Exit mobile version