parbattanews

ফেনীনদীতে হয়নি বারুণীর মিলন মেলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রামগড়:

বাংলাদেশ থেকে দলে দলে রোহিঙ্গা ভারতে অনুপ্রবেশের কথিত আশঙ্কায় বিএসএফের অতি কড়াকড়িতে মঙ্গলবার ফেনীনদীতে হয়নি ঐতিহ্যবাহী বারুণীর মিলন মেলা। কড়াকড়ির কারণে নদীতে নেমে স্বাচ্ছন্দে স্নান ও পূজা অর্চণাও করতে পারেননি পুন্যার্থীরা।

বহুকাল থেকেই চৈত্রের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশি তিথিতে প্রতিবছর ফেনী নদীতে বারুণী স্নানে মিলিত হতেন  দুই দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষ। এদিনে তারা পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য তর্পন করেন এখানে। নদীর দুই তীরে দুই দেশের পৌরহিতরা সকালেই বসেন পূজা অর্চণার জন্য। পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা ছাড়াও নিজের পুণ্যলাভ ও সকল প্রকার পাপ, পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্যে ফেনী নদীর বারুণী স্নানে ছুটে আসেন সনাতন ধর্মাবলম্বী আবালবৃদ্ধবণিতা। দুই দেশে অবস্থানকারী আত্মীয়- স্বজনদের দেখা সাক্ষাৎ করার জন্যও অনেকে দূর দূরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসেন। কিন্তু এবার সব ভেস্তে গেছে।

সীমান্তের ওপারের বিভিন্ন সূত্র জানায়, বারুণী স্নানের সুযোগে রোহিঙ্গারা ত্রিপুরায় ঢুকে যাবে- এমন গোয়েন্দা তথ্যের কারণে ভারতের বিএসএফ রামগড় সাব্রুম সীমান্ত এলাকায় সর্বোচ্চ সর্তকতা জারী করে। গত ২-৩দিন ধরে তারা কড়া প্রহরা বসায় সীমান্তে। জোরদার করা হয় টহল। বারুণী স্নানোৎসবে ফেনীনদীতে পুন্যার্থীদের অধিক সমগমেও নিষেধাজ্ঞাজারী করে তারা। ফেনীনদীতে স্থাপন করা হয় তারের বিশেষ বেড়া।

মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তিথি শুরু হওয়ার পর দুই দেশের কয়েকজন পুন্যার্থী নদীতে নেমে ভয় আতংকের মধ্যে কোন রকমে স্নান সেরে দ্রুত চলে যান।

সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, সকাল ১১টার দিকে  রামগড় বাজার ঘাটের ওপারে সাব্রুমের মেলা ঘাটে নদীতে স্থাপিত তারের বেড়ার মধ্যে বিএসএফের কড়া প্রহরায় সেদেশের  ৮-৯জন পুন্যার্থী স্নান ও পূজা অর্চনা করছেন।

জানাযায়, তারের বেস্টনীর মধ্যেই তাদেরকে স্নান ও পূজা করার স্থান নির্ধারণ করে দেয় বিএসএফ। অন্যদিকে, রামগড় পৌর সভার দারোগাপাড়া এলাকায় নদীতে স্নান ও পূজার জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয় বাংলাদেশী পুন্যার্থীদের জন্য। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বাংলাদেশী পুন্যার্থীরা এখানে স্নান করেন।

বাংলাদেশ অংশে জনসমাগম কিছুটা বেশি হলেও ভারতের অংশ দেখা যায় হাতে গুনা কয়েকজন। ওপারে পুন্যার্থী বা সাধারণ মানুষের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দেখা যায় বিএসএফ। বাংলাদেশ অংশেও মোতায়েন ছিল অসংখ্য বিজিবি ও পুলিশ। দুদেশের অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশের কারণে সীমান্ত পারাপার তো দূরের কথা, এপার ওপারের স্বজনরা কোন কথাবার্তাও বলার সুযোগ পাননি।

সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, নদীর দুই তীরে বাংলাদেশী ও ভারতের পুরোহিতরা বসে থাকলেও পুন্যার্থী না থাকায় তারা অলস সময় কাটান। চট্টগ্রাম থেকে স্বপরিবারে আসা পুন্যার্থী মল্লিক দাশ বলেন, ‘সীমান্তে এমন কঠোর অবস্থা থাকবে জানলে এতদূর থেকে আসতাম না।’

তিনি বলেন, ‘সীমান্ত পারাপারের সুযোগ না দিক, নদীতে  দুদেশের মানুষের মধ্যে ভাব বিনিময় ও স্বজনদের মধ্যে একটু দেখা সাক্ষাতের সুযোগ দিলে তো মহাভারত অশুদ্ধ হত না।’

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ভারতের আশঙ্কার ব্যাপারে রামগড়ের স্থানীয় বাসিন্দা বিপ্লব ত্রিপুরা বলেন, এটা আজগবি তথ্য।  রামগড়ের আশেপাশেও তো রোহিঙ্গার কোন অস্তিত্ব নেই। ২-৩ শ কিলোমিটার দূর থেকে এখানে রোহিঙ্গারা  এসে নদী পার হয়ে ভারতে যাবে এটা হাস্যকর কথা। সীমান্ত পারাপারের সুযোগ না দেয়ার আগাম খবর পেয়ে এবার বাহির থেকে তেমন লোকজনও এখানে আসেনি।

Exit mobile version