ফেনীর রামগড়ে কাজ শেষ করার প্রথম সপ্তাহে ধসে গেছে অর্ধকোটি টাকার উন্নয়ন কাজ
আবু তাহের মুহম্মদ, খাগড়াছড়ি:
ফেনী রামগড় জালিয়াপাড়া খাগড়াছড়ি সড়কের ঢাকা কলোনী নামক এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণের কারণে কাজ শেষ করার এক সপ্তাহ শেষ না হতেই বৃষ্টির পানির প্রথম তোড়েই ধসে গেছে অর্ধ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ। ফলে বিপজ্জনক অবস্থায় মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন চলাচল করছে সড়কের ঐ অংশ দিয়ে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেখানে লাল পতাকা ঝুলিয়ে যেন তাদের দায় দায়িত্ব শেষ করেছে ! এদিকে রাস্তার পাড় ভরাটের জন্য অবৈধভাবে এলোপাতারী মাটি কাটার ফলে সড়কের পাশের বিশাল পাহাড়টিও এখন ধসে পড়ছে।
সওজ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খাগড়ছড়ি সড়ক বিভাগ রামগড় জালিয়াপাড়া খাগড়াছড়ি সড়কের ঢাকা কলোনী এলাকায় রাস্তার দু ’পাশের ভাঙন ঠেকাতে প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। গত এপ্রিল মাসে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। রাস্তার পাশের বিশাল পাহাড় কেটে দেড়শ -২শ ফুট গভীর ঐ ভাঙন কবলিত স্থানে মে মাসের মাঝামাঝি মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়। এর মাত্র কয়েকদিনের মাথায় বৃষ্টির পানির প্রথম তোড়েই ভেসে যায় ভরাটকৃত মাটি ।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, ভাঙনগ্রস্ত রাস্তার পাড়ের গভীর পাদদেশে কোন রকম রির্টানিং ওয়াল বা গাইড ওয়াল নির্মাণ না করে মাটি ভরাট করায় পানি স্রোতে ঐ মাটি ভেসে যায়। ভরাট করা মাটির সাথে রাস্তার একাংশও ধসে গেছে। এখন ধসে পড়া রাস্তার বিপজ্জনক অংশ দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে প্রতিদিন দূর পাল্লার যাত্রীবাহি বাস কোচসহ শত শত যানবাহন চলাচল করছে বাধ্য হয়ে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ এখানে ২/৩টি লাল পতাকা টাঙিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে।
ঢাকা কলোনীর বাসিন্দারা জানান, গত বছরও এখানে কয়েকটি খুঁটি পুঁতে দায়সারা গোচের কাজ করে সওজ বিভাগ। জানাযায়, গত অর্থ বছরে এ কাজে ব্যয় হয় প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। কিন্তু এতে রাস্তার ভাঙন ঠেকানো যায়নি।
এদিকে গত এপ্রিল মাসে রাস্তার দু পাড়ে মাটি ভরাটের জন্য বিশালাকারের দুটি পাহাড়ের একাংশ কেটে ফেলা হয়। পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন পূর্বানুমতি না নিয়েই সম্পূর্ন অবৈধভাবে পাহাড় দুটি কাটা হয়। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সওজ’র বুলডোজার(পেলুডার) ও ড্রাম ট্রাক ব্যবহার করে এলোপাতারীভাবে পাহাড় কেটে মাটি নিয়ে যায়। বৃষ্টির পর থেকে এখন ঐ পাহাড়ে ধস শুরু হয়েছে।
সওজর একটি সূত্র জানায়, সড়ক নির্মাণের জন্য আব্যশিক হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি নিয়ে টেন্ডার আহবান করে ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে পাহাড় কাটতে হয়। কিন্তু ঢাকা কলোনীর কাজে এ নিয়ম মানা হয়নি। সূত্র জানায়, রামগড় উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর সাথে যোগসাজসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বেআইনীভাবে পাহাড় কেটেছে। ঢাকা কলোনীর আবুল হাশেম , কমলা বেগম , রুবেল ও হর কুমার ত্রিপুরাসহ স্থানীয় কয়েকজন অধিবাসি জানান, রাস্তার ভাঙন তো ঠেকানো যায়নি বরং মসজিদের পাহাড়টি কাটার ফলে নতুনভাবে এখন ঐ পাহাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে।
সড়ক বিভাগের রামগড় শাখার উপ সহকারি প্রকৌশলী বিপ্লব বড়ুয়া জানান, প্রকল্পের তদারকিসহ কোন কাজেই তাকে সম্পৃক্ত রাখা হয়নি। প্রকল্পের প্রাক্কলন তৈরী করে পেশ করলেও তা আমলে নেয়নি রামগড় উপবিভাগীয় প্রকৌশলী। তার দেয়া প্লানিং ষ্টীমিটে রাস্তাটির ভাঙন স্থায়ীভাবে ঠেকানোর জন্য রাস্তার দুপাশের পাড়ের পাদদেশে গাইড ওয়ালসহ পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণ কাজ অর্ন্তভুক্ত ছিল বলে তিনি জানান।
একটি সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের নিয়ুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খাগড়াছড়ির রিপ এন্টারপ্রাইজের মালিক রিপ চাকমার কাছ থেকে কাজটি প্রায় ৯ লক্ষ টাকায় রামগড় পৌরসভার কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের সদস্য ঠিকাদার বাদশা মিয়া কিনে নেন। তিনি মূলত: কাজটি করান।
সওজ সূত্রে আরো জানা যায়, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এ পর্যন্ত ১৭ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকার বিল উত্তোলন করেছেন। সওজর রামগড় উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নুরুল আলমের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রকল্পের কাজ এখনও শেষ হয়নি। আবহাওয়া ভাল হলে পুনরায় কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের নিযুক্ত ঠিকাদারকে কখনও দেখেননি, এমনকি কোনদিন কথাও হয়নি বলে তিনি জানান। অপরিকল্পিতভাবে মাটি ভরাটের বিষয়ে কোন মন্তব্য না করলেও অবৈধভাবে পাহাড় কাটার ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভাল বলতে পারবেন বলে তিনি জানান।
রামগড় উপজেলা নির্বাহি অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, পানির তোড়ে রাস্তার মাটি ধসে যাওয়ার পর তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সওজর খাগড়াছড়ির নির্বাহি প্রকৌশলীকে জানিয়েছেন।