বিজিবি-বিএসএফের সেক্টর পর্যায়ের ২য় বৈঠকও নিষ্ফল

ফেনী নদীর শূণ্যরেখায় বন্দি ভবঘুরে সেই নারী ৬দিনেও মুক্তি পাননি!

fec-image

রামগড়-সাব্রুম সীমান্তবর্তী ফেনী নদীর শূণ্য রেখায় বিজিবি-বিএসএফের অস্ত্রের মুখে বন্দি মানসিক ভারসাম্যহীন সেই ভবঘুরে নারীর(৩২) মুক্তি মেলেনি ৬দিনেও । দুই দেশের কেউই তার নাগরিকত্ব স্বীকার করছে না। মঙ্গলবার(৭ এপ্রিল) বিজিবি ও বিএসএফের সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার বৈঠকেও কোন পক্ষই ওই নারীর দায়ভার নিতে রাজী হয়নি। ফলে এ বৈঠকও নিষ্ফল হয়। এদিকে প্রচণ্ড রোদ, ঝড়বৃষ্টিতে ও অনাহারে অত্যন্ত অমানবিক অবস্থায় অজ্ঞাত পরিচয়ের ওই নারী এখন নদীর মধ্যবর্তী বালুচরে মৃত্যুর মুখোমুখি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে বৃহস্পতিবার(২ এপ্রিল) দুপুরের দিকে বিজিবির রামগড় বিওপি সংলগ্ন এলাকার দিকে বিএসএফ জোরপূর্বক রামগড়ে ঠেলে পাঠায়। এসময় সাব্রুমের কাঠাঁলছড়ি ক্যাম্পের বিএসএফকে সেখানকার গ্রামবাসিরাও সহায়তা করে। খবর পেয়ে বিজিবি ওই নারীকে আটক করে পুনরায় ভারতে পুশব্যাক করে। কিন্তু বিএসএফের বাধায় সে ফেনীনদী অতিক্রম করতে পারেনি। নদীর মধ্যবর্তী স্থানে বালুচরে ঠাঁই হয় তার।

গত বৃহস্পতিবার থেকে নদীর ওপারে বিএসএফ এবং এপারে বিজিবি সশস্ত্র প্রহরা বসায় । দু’দেশের সীমান্তরক্ষীবাহিনীর অস্ত্রেরমুখে নদীর শূণ্যরেখায় বন্দি হয়ে পড়েন ভবঘুরে নারীটি। নদীর বাংলাদেশের তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দরা কিছু খাবার দিচ্ছে তাকে। দিনের বেলায় কাঠফাটা রোদে তপ্ত বালুচরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে সে। গত ২-৩ দিন রাতের বৃষ্টিতেও ভিজেছে। প্রবল বৃষ্টিপাত হলে তার পরিণামের কথা ভেবে উৎকন্ঠায় আছে তীরবর্তী বাসিন্দারা।

এদিকে, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীর ইস্যু নিয়ে মঙ্গলবার(৭ এপ্রিল) দুপুরে বিজিবির গুইমারা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জি এইচ এম সেলিম হাছান ও বিএসএফের উদয়পুরের ডিআইজি জামিল আহমেদ দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে মিলিত হন । ফেনী নদীতে মৈত্রীসেতুর নির্মাণকাজের জন্য স্থাপিত অস্থায়ী সেতুর উপর দাঁড়িয়ে তারা বৈঠক করেন। বৈঠকে অজ্ঞাত পরিচয়ের ওই নারীর ‘পুশব্যাক’ নিয়ে বিজিবি-বিএসএফ একে অপরকে দায়ী করেন এবং তার নাগরিকত্ব দুই পক্ষই অস্বীকার করেন।

এ অবস্থায় কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠকটি শেষ হয়। বৈঠকে রামগড়ের ৪৩ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. তারিকুল হাকিম ও সাব্রুমের ৬৬ বিএসএফের কমান্ডিং অফিসার রাজীব কুমার সিং উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে বিজিবির গুইমারা সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জি এইচ এম সেলিম হাছান পার্বত্যনিউজকে বলেন, ওই নারীর পরিচয় খুঁজে বের করতে বিজিবি সারা দেশে প্রচার প্রচারণা করে। কিন্তু কোন হদিসই মেলেনি। সে বাংলাদেশে নাগরিক বলে মনে হচ্ছে না।

তিনি বলেন, বিএসএফ যে তাকে জোরপূর্বক পুশব্যাক করেছে তার প্রমাণ হিসেবে ছবিও বৈঠকে দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন, আজকের বৈঠকেও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত চাইবেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ওই ভবঘুরে নারীর ইস্যূ নিয়ে বিজিবি ও বিএসএফের ব্যাটালিয়ন কমান্ডার ও সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে প্রথম বৈঠক হয়েছিল। কিন্তু দুই পক্ষের অনড় মনোভাবের কারণে ওই বৈঠকটিও নিষ্ফল হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন