parbattanews

ফের সীমান্তে গুলি বর্ষণ, ৪ দিনে ১২ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ: আটক ৭৫

ঘুমধুম প্রতিনিধি:

মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীদের অত্যাচার জুলুম নির্যাতনের ভয়ে কক্সবাজার বান্দরবান সীমান্তে জড়ো হয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম নারী-শিশু। এবারে শতকরা ৯০জন নারী শিশু প্রাণের ভয়ে পালিয়ে এসেছে। উখিয়ার রহমতের বিল, ধামনখালী, পালংখালী, ঘুমধুম, তুমব্র“, জলপাইতলী, উত্তর পাড়া, কলাবাগান, রেজু আমতলী পয়েন্ট দিয়ে গত ৩ দিনে বালুখালী ও কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১২ হাজার রোহিঙ্গা।

মিয়ানমার ফকিরা বাজার থেকে আজিজুল হক, হাফেজ আনোয়ার, মোহাম্মদ রফিক, আলমাছিয়া, খালেদা বেগম, শাহ জাহান, আয়াজ, জিয়াউর রহমান, আবদুর রহমান, সব্বির আহমদ, ছৈয়দ আলম, ইছহাক, মুসা, মির আহমদ, খলিলুর রহমান ও বাগু মিয়া, রশিদ আহমদ, রোকিয়া বেগম, ছৈয়দা, জয়নাল উদ্দিন, লায়লা বেগম, আবুল কালাম, সেতারা বেগম, মরিয়ম খাতুন, রশিদা বেগম, ছুমাইয়া, তসলিম ফাতেমা, ছৈয়দুল হক, জালাল আহমদ, জরিনা বেগম, এনায়তুর রহমান, আবুল হোছন, গোলাপ জান, রশিদা বেগম, জকির আহমদ, মোঃ আরফাত, আমির হোছন, তসলিম ফাতেমা, আবুল হোছন, আবুল কাশেম সহ শত শত রোহিঙ্গা সোমবার(২৮ আগস্ট ) কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি এলাকায় ঢুকে পড়েছে।

তারা জানান, মিয়ানমার আরকান রাজ্যে মুসলিম শূন্য করার লক্ষ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীরা একের পর এক গ্রামের পর গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। পুরুষদের ধরে নিয়ে প্রকাশ্যে গুলি করে মারছে এবং নারীদের ইজ্জত লুণ্ঠন করছে। মিয়ানমার সেনারা মুসলমানদের উপর এত অত্যচার নিপীড়ন করার কারণে বহির্বিশ্ব চাপ প্রয়োগ করার জন্য রোহিঙ্গারা দাবি জানিয়েছেন।

এসব রোহিঙ্গারা কোন পথ দিয়ে মিয়ানমার ফকিরা বাজার থেকে চলে আসছে জানতে চাইলে বশির আহমদ জানান, তারা নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের রেজু আমতলী পয়েন্ট দিয়ে ক্যাম্পে চলে এসেছে। ফকিরা বাজারের ৭০ বছর বয়সের আবুল কাশেম বলেন, শনিবার সকাল ১০ টায় ২৫জন সেনাবাহিনী ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীদের উপর গুলি বর্ষণ করে ধাওয়া করে এবং ঘর বাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। পাশ্ববর্তী গ্রাম মিজ্জিজালি পাড়া গ্রামের ছালামত আহমদ এর ছেলে সিরাজুল মোস্তাফাকে বোমা নিক্ষেপ করে মেরে ফেলেছে।

মংডুর কুমিরখালী এলাকার মৃত ছৈয়দ আহমদের ছেলে মীর আহমদ বলেন, গুলি ও বর্বর নির্যাতনের ভয়ে আমরা নিরাপদ আশ্রয়ের খুঁজে এদেশে পালিয়ে এসেছি। তারা টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়ন উলুবনিয়া সীমান্ত দিয়ে এপারে চলে এসেছে। মংডু ঢেকুবনিয়া এলাকার মৃত রশিদ আহমদের ছেলে ইমাম হোছন (৩৫) বলেন, আমরা ১৪জনের একটি রোহিঙ্গা দল নাফ নদীর সীমান্ত পেরিয়ে মিনারা, সেফা, রুমানা, মারুয়া, দিলারা, সাদেকা বেগম, মোবাশ্বিরা, জান্নাত আরা সহ তারা আকিয়াব জেলার মংডু এলাকার বাসিন্দা। তুমব্র“ সীমান্ত দিয়ে গতকাল ভোরে চলে এসেছে।

তারা জানান, ১৮জনের মধ্যে ৮জনকে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে গেছে। তারা কোথায় খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি। এপারে এসে শুনি তাদের ২জনকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। সাদিকা বেগমের আপন খালাতো বোন শরিফাকে এবং তার চাচাত ভাই ফারুফকে জবাই করে হত্যা করেছে বলে কিছুক্ষণ আগে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, ঢেকিবনিয়া ও তুমব্র“ সীমান্তে মিয়ানমার বিজিপি সদস্যরা থেমে থেমে প্রচণ্ড গুলি বর্ষণ করছে। ওখান থেকে ২টি গুলির খোসা তুমব্র বাজার ও তুমব্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেওয়ালে পড়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

এদিকে উখিয়া থানা পুলিশ রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে থাইংখালী এলাকা থেকে ৭৫জন রোহিঙ্গাকে আটকের পর কক্সবাজার ৩৪ বিজিবিকে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের জানিয়েছেন।

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যান্তরে গুলির শব্দ শুনেছি। স্থানীয় শাহনেওয়াজ চৌধুরী দুপুর ১টায় ঘুমধুম সীমান্তে মিয়ানমার বিজিপির প্রচণ্ড গুলির শব্দ শুনে এলাকাবাসীর মত আমিও আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।

Exit mobile version