ফ্রান্সে পার্বত্য সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার

fec-image

ফ্রান্সের মাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর একটি প্রবাসী গ্রুপ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার চালিয়েছে। তারা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদে একই ভাষায় কথা বলছে এবং মাঝে মধ্যে সভা-সমাবেশ করে দেশদ্রোহী বার্তা ছড়াচ্ছে। খুব স্বাভাবিক বিষয়গুলোকে অতিরঞ্জিত করে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে।

গত রোববার ১ জুন প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের পাদদেশে লা ভোয়া দে জুম্ম (জুম্মদের কণ্ঠ) নামে একটি সংগঠন এমনই একটি কর্মসূচির আয়োজন করে। মূলত বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাবাপন্ন একটি গোষ্ঠীর অংশ হয়ে এই দেশদ্রোহী কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করে প্রতিবাদ সভার আয়োজন বলা হলেও মূলত তারা ফ্রান্সে বসবাসরত পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রকারীদের একটি অংশ। তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মূলধারার কোনো বড় অংশ নয়। মূলধারার বড় অংশ সবাই শান্তিপ্রিয় জনগণ, যাদের সঙ্গে এদের ন্যুনতম যোগাযোগ নেই। বরং এরা চাঁদাবাজি, খুন, রাহাজানি করে মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলা গোষ্ঠীর সমর্থনে কথা বলছে।

এই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য এলাকার চাকমা সার্কেল চিফের স্ত্রী ইয়ান ইয়ান। ‘লা ভোয়া দে জুম্ম’ নামের ভুঁইফোড় কথিত ওই সংগঠনটি আয়োজন করে এ কর্মসূচির। উপস্থিত ছিলেন সমাপ্তি চাকমা, দেওয়ান, রেমি চাকমা।

‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ হিসেবে বসবাসকারী এই জনগোষ্ঠী নিজেদের আদিবাসী হিসাবে সরকারের কাছে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবী করে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় যা একবারে অকল্পনীয়। অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকার ন্যায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ এ জনগোষ্ঠীর হাজার বছর ধরে বসবাসের ইতিহাস নেই। অথচ নিজেদের আদিবাসী দাবি করে দেশের মাটিতে গোপন সশস্ত্র সংগঠন তৈরির পাশাপাশি তারা বিদেশের মাটিতেও একই ধারায় অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। তারই অংশ হিসেবে ফ্রান্সে তাদের এই আয়োজন।

ওই সমাবেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চিংমা খিয়াং-এর ধর্ষণ ও নির্মম হত্যাকাণ্ডকে অতিরঞ্জিত করে সরকারকে বিব্রত করার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে- যা অন্যান্য আর পাঁচটি দেশীয় ঘটনার মতোই স্বাভাবিক। দেশের প্রচলিত আইনে যার তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

ওই কর্মসূচিতে নৃ-গোষ্ঠীদের উচ্ছেদ এবং সামরিক নিপীড়নের মতো একাধিক অভিযোগ তুলে ধরা হলেও প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে। বান্দরবানের বম নৃ-গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, জেলে বন্দী রাখা, কথিত ভূমি আন্দোলনের নেতাদের গ্রেফতারের যে অভিযোগের কথা বলা হয়েছে, আসলে তারা ওই সব দেশদ্রোহী, যারা নিজস্ব সামরিক পোশাকে অস্ত্র নিয়ে চাঁদাবাজি, অপহরণ, সন্ত্রাস করছে। এবং এই সব অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে তারা উল্টো সেনাবাহিনী ও সরকারকে দোষারোপ করে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আসছে।

ওই সমাবেশ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, ফ্রান্স সরকার ও জাতিসংঘের প্রতি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে তারা যে দাবিগুলো তুলে ধরে সেগুলো হলো- জুম্ম জনগণকে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অবাস্তব, সেনাদের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ বন্ধ করা- যা সরাসরি দেশবিরোধী।

এর সঙ্গে কিছু সাধারণ দাবি মেশানোর চেষ্টা করা হয়েছে, অন্য দাবিগুলোকে আড়াল করতে সেগুলো হলো- চিংমা খি য়াং-এর সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার, জুম্ম নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন, জমি ফেরত দেওয়া ও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি।

এই সব দাবি প্রচলিত আইনে নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অপারেশন উত্তরণ বন্ধ করে বেসামরিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার যে দাবিটি জানানো হয়েছে, যে দাবিটিতে আসলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর আধিপত্য প্রসারিত করার অশুভ ইচ্ছার কথা নিহিত রয়েছে।

এদিকে চাকমা সার্কেল চিফের স্ত্রীর একের পর এক দেশ ভ্রমনের অর্থের উৎস কি তা তদন্ত করে দেখার জন্য পার্বত্য বাসীরা দীর্ঘ দিন ধরে দাবী জানিয়ে আসছে। অন্যদিকে তার স্বামী সম্প্রতি থাইল্যান্ড সফর করে আসার পর বাংলাদেশস্থ অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ড সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রদূতদের সাথে ঘনঘন বৈঠক করছেন। ফলে এই পরিবারের কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য শান্তিপ্রিয় পার্বত্যবাসী দাবী জানিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্য চট্টগ্রাম
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন