‘বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ’ হালদাচরে কৃষি বিপ্লব পরিদর্শনে আইডিএফ ও হালদা গবেষক দল

fec-image

এশিয়া মহাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ ও উন্নয়ন নিরাপদ করতে হালদাকে “বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ” ঘোষণা করেছে সরকার। হালদা চরের উজান মানিকছড়িতে কৃষকরা তামাক ছেড়ে শাক-সবজি ও ফল-ফলাদি’র চাষাবাদে বিপ্লব ঘটিয়েছে। ফলে হালদা চরের পরিবর্তীত চিত্র প্রত্যক্ষ করতে তৃণমূলে ছুঁটে এসেছেন আইডিএফ ও হালদা নদী গবেষক দল।

হালদা নদীর ঐতিহ্য রক্ষায় বিশেষজ্ঞ দল ও সাংবাদিকদের লেখনির ফলে আজ হালদাচরে নতুন উদ্যমে জেগে ওঠা কৃষকের কৃষিবিপ্লবের চিত্র দেখে অভিভূত হয়েছেন ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ) ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা গবেষক এবং পরিবেশবিদরা।

এশিয়া মহাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী। এই নদীর দু’পাশ জুড়ে গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিত শিল্পকারখানা। আর উজানে মানিকছড়ি উপজেলার বিভিন্ন অংশে হালদার চরে অবাধে চাষাবাদ হচ্ছিল তামাক! হালদা নদীর গবেষকদের গবেষণায় হালদা নদীর বেহাল দশায় উঠে আসে দশটি কারণ। যার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো উজানে তামাক চাষ! যার ফলে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা সংরক্ষণ ও উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সরকার। এছাড়া এই হালদা নদী আজ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্পদে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি সরকার এটিকে ঘোষণা করেছে ‘বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ’। যার ফলে হালদার পরিবেশ উন্নয়নে হালদাচরে তামাকচাষ বিকল্প জীবিকায়ণে কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী বিকল্প চাষাবাদে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর এর পাশাপাশি ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে কাজ করছে পল্লী কর্ম-সহায়তা ফাউন্ডেশন(পিকেএসএফ)। তাতে অর্থায়ণ করছে ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আইডিএফ)।

এতে করে সম্প্রতিকালে পাল্টে গেছে হালদাচরের পরিবেশ। দৃশ্যমান হচ্ছে সবুজ শাক-সবজি ক্ষেতে কৃষকের গড়াগড়ি ও ফসলের সমারোহ। ফলে ৩০ ডিসেম্বর সকালে হালদাচরের বাস্তবচিত্র অবলোপন করতে ছুঁটে আসেন আইডিএফ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য প্রফেসর শহীদুল আমিন চৌধুরী, চট্গ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর মঞ্জুরুল কিবরীয়া, ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, লেকচারার তাসলিমা দিলশাদ প্রমুখ।

এ সময় বিশেষজ্ঞ দলের সফর সঙ্গী ছিলেন, হালদাচরে তামাক চাষ বিরোধী লেখক উপজেলা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান ও আইডিএফ’র হালদা প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. সজীব হোসেন ও জুনিয়র কৃষি কর্মকর্তা থুইঅংপ্রু মারমা ।

প্রথমে গবেষক ও বিশেষজ্ঞ দল বিগত ২০০৮-২০১৬ সাল পর্যন্ত হালদার উজার খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ির গোরখানা, ছদুরখিল এলাকার তামাকচাষ ছেড়ে কৃষি বিপ্লবে আসা অর্ধশত কৃষকের সাথে মতবিনিময় করেন। এ সময় কৃষকদের অনুভূতি ও ভবিষৎ কর্মপরিকল্পনা জানতে চান তাঁরা।

কৃষকরা বলেন, তামাক চাষের কূফল ও ক্ষতিকর দিক সর্ম্পকে আমরা আগে অবগত ছিলাম না। ফলে এলাকার শতাধিক কৃষক বিগত সময়ে অবাধে তামাক চাষ করেছি! ওই সময় সাংবাদিক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হালদা গবেষকরা সময়ে-অসময়ে এসে আমাদেরকে পূর্বের কৃষি পেশায় এনে দিয়েছে। আর এতে সরকারের পাশাপাশি আইডিএফ’র অর্থায়ণে কাজ করছে পিকেএসএফ।

ইতোমধ্যে রামবুটান, আম, কাঁঠাল, বাতাবি লেবু, মাল্টা, পেঁপে, ড্রাগন, লিচু’র চারা, শাক-সবজি, চীনা বাদাম বীজ, সার-ওষধ এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ নানা বিষয়ে উপজেলা কৃষি, মৎস্য, প্রাণী সম্পদ বিভাগ ও পিকেএসএফ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে হালদা চরের পরিবেশ। এখন উৎপাদিত ফসল দ্রুত বাজারজাতকরণে রাস্তা-ঘাট সংস্কার জরুরী।

পরে হালদা গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা বলেন, এশিয়া মহাদেশের একমাত্র অমূল্য সম্পদ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র আমাদের হালদা নদী। এ নদীতে যেভাবে অনায়াসে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন হয় বিশ্বে তা বিরল। এছাড়া এ নদীতে পানি বিশুদ্ধকরণ করে চট্টগ্রাম শহরের ৭০-৮০লক্ষ মানুষের চাহিদা পূরণ করা হয় । আজ এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে “বঙ্গবন্ধু হেরিটেজ” স্বীকৃতি দিয়ে সরকার আমাদের দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে এর ঐতিহ্য রক্ষায় এবং প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন স্বাভাবিক রাখতে হালদা চরে কৃষিবিপ্লব ঘটিয়ে আপনারা নিজে লাভবান এবং পরিবেশ উন্নয়ন করে অবদান রাখতে পারেন। আপনাদের চাহিদাকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকারের পাশাপাশি আইডিএফ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা করতে পারে। কিন্তু ভাগ্য পরিবর্তনে আপনাকে আগে এগিয়ে আসতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন