parbattanews

বছরজুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যা কিছু ভাইরাল

ঘনিয়ে এলো ২০২১ সালের প্রান্ত। বছরজুড়েই নানা আলোচিত সমালোচিত ঘটনার দরুন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো ছিলো সরগরম। এমন কিছু বিষয়ই তুলে ধরা হলো –

নাসির-তামিমার বিয়ে থেকে শুরু করে হালের ভুবন বাদ্যকারের ‘কাঁচা বাদাম’ গান – এমন বেশকিছু ট্রেন্ড এবছর মাতিয়ে রেখেছিল নেট দুনিয়াকে। একবার ঘুরে আসা যাক এবছর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হওয়া এমন কিছু মজার ঘটনা থেকে।

নাসির-তামিমার বিয়ে:
২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা সুলতানা। বিয়ের পর থেকে সামাজিক মাধ্যমে তুমুল বিতর্ক উঠে দুজনকে নিয়ে। নাসিরের স্ত্রী তামিমা সুলতানা তার আগের স্বামীকে ডিভোর্স না দিয়েই নাকি বিয়ে করেছেন।আগের ঘরে একটি সন্তানও নাকি রয়েছে তাদের। এমন অভিযোগ তুলে মামলাও করেন তামিমার আগের স্বামী দাবিদার রাকিব হাসান। সে বিতর্ক এখনও শেষ হয়নি। আদালতে মামলা রয়েছে বিচারাধীন।

‘সি ইউ নট ফর মাইন্ড’
সামাজিক মাধ্যমে বিচরণ থাকলে এবছর একবার হলেও শোনা গেছে ‘হ্যাভ আ রিল্যাক্স’ আর ‘সি ইউ নট ফর মাইন্ড’ এই বাক্য দুটি। ব্যাকরণিক দিক থেকে দুটো বাক্যই ভুল হলেও এ দুটি বাক্যের জন্য বছরের শুরুর দিকে রীতিমতো সোশ্যাল মিডিয়া তারকায় পরিণত হয়েছিলেন গাইবান্ধার বামনডাঙা গ্রামের রেলকর্মচারী শ্যামল।

স্বল্পশিক্ষিত শ্যামলের একটি নিউজ চ্যানেলে দেওয়া ইন্টারভিউ লাখো মানুষের বিনোদনের খোরাক যুগিয়েছে। ব্যাকরণের মারপ্যাচে না গিয়ে হ্যাভ আ রিল্যাক্স বাক্যটি হয়তো জীবনকে সহজভাবে নেওয়ার বিষয়টিই জানান দেয়। একারণেই এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শ্যামলের বলা এই বাক্যগুলো তুমুল জনপ্রিয়।

অশ্লীল কর্মকাণ্ডে ভাইরাল নায়িকা পরীমণি
এবছরের প্রায় পুরো সময় জুড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন বাংলা সিনেমার চিত্রনায়িকা পরীমণি। মূলত গভীর রাতে এক ক্লাবে ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন প্রকাশ্যে এমন গুরুতর অভিযোগ তোলার মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। যদিও তা পরে ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। এরপর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন মামলায় কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিন নিয়ে বের হওয়ার সময় তার হাতে মেহেদি দিয়ে লেখা ছিলো “Don’t love me,” যার বাংলা ভাবার্থ দাঁড়ায়, তোমার ভালবাসার পরোয়া করি না। একই ভাবে হাতে অশ্লীল লেখা বাক্য প্রদর্শন করে তোপের মুখে পড়েন পরীমণি। এই অশ্লীল চিত্র রাতারাতি সোশ্যাল মিডিয়া ভাইরাল হয়।

চিকিৎসক-ম্যাজিস্ট্রেটের বাকবিতণ্ডার ভিডিও ভাইরাল
এবছরের এপ্রিলে কঠোর লকডাউনের সময়ে এলিফ্যান্ট রোডে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ায় এক ডাক্তারের সাথে কর্তব্যরত ম্যাজিস্ট্রেটের বাকবিতন্ডার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে তা নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে ফেসবুকের নীল দুনিয়ায়। কে সঠিক? ডাক্তার না কর্তব্যরত পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেট? এই নিয়ে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যায় ফেসবুকবাসী, বেশ কয়েকদিন ধরে চলে তুমুল আলোচনা আর চুলচেরা বিশ্লেষণ। কে বড়? ডাক্তার না পুলিশ সেই বিতর্কও চলে বেশ কিছু দিন ধরে।

‘আয়না তত্ত্ব,’ ও ‘পেইনকিলার তত্ত্ব’
ভাইরাল হওয়া থেকে বাদ যাননি এদেশের ক্রিকেটাররাও। বছরের শেষদিকে ক্রমাগত খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য অনলাইন দুনিয়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে টাইগারদের নিয়ে। এর মধ্যে মুশফিকের ‘আয়না তত্ত্ব,’ মাহমুদউল্লাহর ‘পেইনকিলার তত্ত্ব’ কিংবা একদম শেষের দিকে সাকিবের পঞ্চপান্ডব নিয়ে মন্তব্য – সবকিছুই ছিলো সোশ্যাল মিডিয়ার ‘টক অব দ্যা মোমেন্ট।’ মাঝখানে সাকিবের লাথি মেরে স্ট্যাম্প ভাঙা ‘বিপ্লবী’ নাকি ‘উদ্ধ্বত’ আচরণ, তা নিয়ে হয়েছে জলঘোলা।

বিদেশে ভাইরাল হওয়া কিছু ঘটনাও সেসব দেশের গন্ডি পেরিয়ে বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়েছিলো এবছর।

‘পাওরি হো রাহি হ্যা’
বছরের শুরুর দিকে পাকিস্তানের ১৯ বছর বয়সী দানানীর মুবিনের ‘পাওরি হো রাহি হ্যা’ অন্যতম। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়ে অনেকটাই মজার বশবর্তী হয়ে দানানীর ভিডিওটি করেছিলেন, যা পরবর্তীতে সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ডে পরিণত হয়; পাকিস্তানসহ, ভারত ও বাংলাদেশের বহু সেলিব্রেটি ও আমজনতা এই ভিডিওটি শেয়ার করেছেন, টিকটক বানিয়েছেন।

“মানিকে মাগে হিতে”
শ্রীলঙ্কান র‍্যাপার ইয়োহানি। দিনটি ছিল ২২ মে। নিজের গাওয়া “মানিকে মাগে হিতে” গানটির লিংক ফেসবুকে শেয়ার করে লেখেন, ‘হোয়াট ডু ইউ থিঙ্ক (আপনার কী মনে হয়)।’ গানের তেমন ভিউ নেই। সপ্তাহখানেক পরেই ৩০ জুন ফেসবুকে লিখলেন, ‘উই রিচ ওয়ান মিলিয়ন ভিউ (আমরা ১০ লাখ ভিউ ছুঁয়েছি)।’

তখনো জানতেন না তাঁর গানটি বিশ্বব্যাপী ভাইরাল হতে যাচ্ছে। তার কিছুদিন পরেই সিদ্ধান্ত নেন গানটি তামিল ও মালয়ালম ভাষায় কাভার করবেন। তার পর থেকে হঠাৎ করেই বাড়তে থাকে ভিউ। একসময় শ্রীলঙ্কার গানের ভিউয়ে রেকর্ড গড়ে। শ্রীলঙ্কার কোনো গান আগে এতবার শোনা হয়নি। আর শুধুশ্রীলঙ্কাই–বা বলি কেন, এর মধ্যেই গানটি ভারতের ৫০ ভাইরাল গানের মধ্যে শীর্ষ ৬ নম্বরে উঠে গেছে, ১ নম্বরে উঠে গেলেও অবাক হব না। বাংলাদেশেও গানটির সুর নকল করে অসংখ্য গান ভাইরাল হয়।

‘কাঁচা বাদাম’
বর্তমান সময়ে বিশেষ কোনো ঘটনা ঘটলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুহূর্তে ভাইরাল হয়। সম্প্রতি ইউটিউব, টিকটক, ফেসবুকে ঢুঁ মারলেই সামনে আসে ‘কাঁচা বাদাম’ শিরোনামের একটি গান। গানটি গেয়েছেন একজন ফেরিওয়ালা। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে এই গান।

ইতোমধ্যেই লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখেছেন গানটি। গানটি যার কণ্ঠে গাওয়া হয়েছে সম্প্রতি তার পরিচয় পাওয়া গিয়েছে। তার নাম ভুবনবাবু। তিনি ভারতের পশ্চিম বঙ্গের বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের অন্তর্গত লক্ষ্মীনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম কুড়ালজুড়ির গ্রামের বাসিন্দা। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে যাওয়া ভুবন সোশ্যাল মিডিয়ায় এখনও কমবেশি আলোচনায় রয়েছেন।

Exit mobile version