বালুুকাময় জমিতে ধান চাষে আশানুরুপ ফলন না পেয়ে বাণিজ্যিক পরিকল্পনায় বৃহদাকারে মৎস্য খামার গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন রামগড় উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও তরুণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুল কাদের। রামগড়ের বলিপাড়া এলাকায় প্রায় ৯শ শতক জমিতে পুকুর খনন করে মৎস্য খামার তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। তার এ উদ্যোগ সফল হলে এ মৎস্য খামারে বছরে প্রায় ২০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ। এতে মাছের স্থানীয় চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ হবে । উপজেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে সবচেয়ে বৃহদাকারের মৎস্য খামার হবে এটিই।
সম্প্রতি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাসহ সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ১নং রামগড় ইউনিয়নের পশ্চিম বলিপাড়া ও দক্ষিণ লামকুপাড়া গ্রামের সীমান্তবর্তী লামকু খালের কূল ঘেঁষে প্রায় ৯শ শতক (২২ কানি) জমিতে বিশালাকারের ৪টি পুকুর খনন করা হয়েছে। এ বছরেই মাছের পোনা ছাড়া হবে পুকুরগুলোতে।
প্রকল্পের উদ্যোক্তা সাবেক রামগড় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের জানান, এখানে তার পৈতৃক প্রায় ৩০ কানি জমি আছে। বালুকাময় এ জমিতে ভাল ফসল না হওয়ায় দীর্ঘদিন অনাবাদি পড়ে ছিল। নিজের আয় ও এলাকার বেকারদের কর্মসংস্থান সৃস্টি এবং স্থানীয় মাছের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এখানে বাণিজ্যিক পরিকল্পনায় মৎস্য খামার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন তিনি। ২০১৮’র শেষ দিকে খামারের কাজ শুরু করা হয়। এরই মধ্যে বৃহদাকারের ৪টি পুকুর খননের কাজও প্রায় শেষ। এ বছরই পোনা ছাড়ার পরিকল্পনা তার।
তিনি আরও বলেন, বালুকাময় হওয়ায় একটু বেশি গভীর করতে হয়েছে পুকুরগুলো। মেশিনের মাধ্যমে বালু অপসারণ করে কর্দমাক্ত মাটির স্তর পর্যন্ত গভীরতা করতে হয়েছে। জলাশয়ের চারিদিকে সুপ্রশস্ত ও উচুঁ বাধঁ তৈরি করা হয়েছে। তিনি জানান, মাছ চাষের পাশাাপশি এ খামারে মহিষ ও হাঁস পালনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
দক্ষিণ লামকুপাড়ার বাসিন্দাা মো. শহিদুল্লাহ (৬৭) বলেন, খামারের কাজ শুরুর পর থেকে এখানে প্রতিদিন স্থানীয় ৯-১০জন লোক কাজ করছে। ভবিষ্যতে এ খামারে স্থানীয় অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হবে। এ কারণে এলাকার সবাই খুশি।
একই এলাকার আরেক বাসিন্দা আমান উল্লাহ বলেন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের এখানে মৎস্য খামারের কাজ শুরুর আগেই ব্যক্তিগত টাকায় পশ্চিম বলিপাড়া রাস্তা হতে দক্ষিণ লামকুপাড়া গ্রামে যাতায়াতের ইটের সলিং রাস্তা নির্মাণ করেছেন। তার প্রচেষ্টায় লামকুপাড়া খালের উপর একটি পাকা সেতুও তৈরি হয়েছে। ফলে দুই গ্রামের মানুষ বর্ষাকালেও নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে।
তিনি বলেন, সেতু হওয়ার আগে পানিতে হেঁটে খাল পার হতো মানুষ, আর বর্ষাকালে যাতায়াত বন্ধ থাকতো। তিনি আরও জানান, রাস্তা ও সেতুটি র্নিমাণের পর দক্ষিণ লামকুপাড়ার জায়গার দামও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।
পশ্চিম বলিপাড়ার বাসিন্দা মো. শাহেদ উল্লাহ বলেন, মৎস্য খামরটি পুরো এলাকার চিত্র পাল্টে দেবে। এক সময় এ খামারের মাধ্যমে পুরো এলাকা পরিচিতি লাভ করবে সর্বত্র।
এদিকে সরেজমিনে পরিদর্শনকালে এ উদ্যোগের প্রশংসা করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাশ বলেন, এখানে যে কোন মিঠাপানির মাছ চাষ করা যাবে। বৈঞ্জানিক পদ্ধতিতে চাষ করলে এখানে বছরে প্রায় ২০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন সম্ভব। তিনি বলেন, উদ্যোক্তা চাইলে মৎস্য বিভাগ সব ধরণের সহযোগিতা দেবে।
সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময়েই উদ্যাক্তা হওয়ার আহ্বান জানান। তার এ আহবানে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি নিজেই একজন উদ্যোক্তা হয়ে মৎস্য খামারের এ পরিকল্পনা নিয়েছি।