বজ্রপাত: উদাসিনতা, অবহেলা আর উপেক্ষার কারণে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা

fec-image

বাংলাদেশে বজ্রপাত নিয়ে যারা গবেষণা করছেন তাঁদের মতে, ভৌগলিক অবস্থান, বাযুমন্ডলে কার্বন নিঃসরণ বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, বৃক্ষ নিধন, গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে বজ্রপাতের সংখ্যা দিনে দিনে অপ্রত্যশিত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনায় সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, এর পরই ভারত মহাসাগর। সেখান থেকে উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাস আসে এবং উত্তরের পাহাড়ি এলাকা হিমালয় থেকে আসে ঠান্ডা বাতাস। আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেড়ে যায় ১২ শতাংশ।

একদিকে গরম আবহাওয়া, অন্যদিকে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকলে ভূপৃষ্ঠের গরম বাতাস ওই জলীয় বাষ্পকে উপরে ঠেলে দেয়। তখন এটি উপরের শীতল বাতাসের সঙ্গে মিশে সঞ্চালিত মেঘমালা তৈরি করে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে অনেক জলীয় বাষ্প তৈরি হয়। ভূ-পৃষ্ঠের পানি যখন বাষ্প হয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকে তখন মেঘের নিচের দিকে ভারী অংশের সাথে জলীয় বাষ্পের সংঘর্ষ হয়। এর ফলে অনেক জলকণা ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধনাত্মক চার্জে পরিণত হয় এবং অনেক জলকণা সে ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক চার্জে পরিণত হয়। এ চার্জিত জলীয় বাষ্প মেঘে পরিণত হলে মেঘে বিপুল পরিমাণ স্থির তড়িৎ উৎপন্ন হয়। এ সময় অপেক্ষাকৃত হালকা ধনাত্মক আধান মেঘের উপরে এবং অপেক্ষাকৃত ভারী ঋণাত্মক চার্জ নিচে অবস্থান করে। মেঘে এই ২ বিপরীত চার্জের পরিমাণ যথেষ্ট হলে ডিসচার্জ প্রক্রিয়া শুরু হয়। আয়নিত পরমাণু থেকে বিকীর্ণ শক্তির সরু, আয়নিত ও বিদ্যুৎ পরিবাহী চ্যানেলের মাধ্যমে কয়েকভাবে ডিসচার্জিং প্রক্রিয়া হয়ে থাকে। তার মধ্যে একটি হল মেঘের পজিটিভ আধান এবং ভূমির মধ্যে যাকে ক্লাউড টু গ্রাউন্ড ডিসচার্জিং বলে। এ অবস্থায় বায়ুর তাপমাত্রা প্রায় ২৭০০০ ডিগ্রি সে. এবং চাপ ১০-১০০ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যায়। যা খুব দ্রুত (এক সেকেন্ডের কয়েক হাজার ভাগের একভাগ সময়ে) বাতাসকে প্রচন্ড গতিতে বিস্ফোরণের মতো সম্প্রসারিত করে। বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগের ক্ষেত্রে কিছু প্রস্তুতি নেবার সুযোগ থাকলেও বজ্রপাতের বিষয়টি অনেকটা ভূমিকম্পের মতোই আকস্মিক। যার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হয়। এটিই হচ্ছে বজ্রপাত সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

মার্চ মাস থেকেই আমাদের দেশে শীত শেষে গরম শুরু হতে থাকে। তাই মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাত বা বজ্র বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এপ্রিল-মে বোরো ধান কাটার মৌসুম। এসময় বাংলাদেশের আবহাওয়া বেশি উত্তপ্ত থাকে। কৃষকরা তখন ধান কাটা নিয়ে মাঠে ব্যস্ত থাকে। তাই বজ্রপাতে দুর্ঘটনার শিকারের মধ্যে কৃষক, মৎসজীবী, খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা বেশি। তারা অনেকেই জানেন না বজ্রপাতে কিভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হয়। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি। সেইসঙ্গে অনেক গবাদি পশুও মারা যায়। দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ অসচেতন, উদাসিনতা, অবহেলা, উপেক্ষা।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি সংগঠন ‘ডিজাস্টার ফোরাম’-এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে ২০১১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে বজ্রাঘাতে মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজার ১৬২। এ হিসেব অনুযায়ী বছরে গড়ে ২৬৫.৫ জনের মৃত্যু হয় বজ্রপাতে। এ মৃত্যুর হার ২০১১ সাল থেকে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বশেষ এ বছরের ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ছয়টি উপজেলায় বজ্রপাতে একদিনে নয় (৯) জনের মৃত্যু হয়। আহত হয়েছে আরও তিনজন।

পদ্মা নদীর ঘাটে হঠাৎ বজ্রসহ বৃষ্টি শুরু হলে নদীরঘাটে টিনের দোচালা ঘরে আশ্রয় নেন ১৭ জন মানুষ। সেখানে বজ্রপাতে ১৭ জন মানুষই মারা যায়। ঘটনাটি ২০২১ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জে ঘটে, যেটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। টিনের ঘরে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলো জানতো না তারা টিনের চালার নিচে আশ্রয় নেওয়া ঠিক হবে কি-না? তারা এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন না নিশ্চয়ই।

অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে এই প্রাকৃতিক ঘটনার ওপর গবেষণা চালিয়েছে। তারা বলছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৮৪ লাখ বজ্রপাত হয় যার ৭০ শতাংশই হয় এপ্রিল থেকে জুন মাসে। ২০১৩ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বজ্রপাতে মারা গেছে ১৮৭৮ জন এবং তাদের ৭২ শতাংশই কৃষক।

ভারতের আবহাওয়া অফিসের রাডার থেকে প্রাপ্ত ও জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিবছর ২৫০০টির মতো বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর এর থেকে শতগুণ বেশি বজ্রপাত হয়, অথচ সেখানে মৃত্যু হয় ৪০-৫০ জনের। ভারতের কর্ণাটকে বজ্রপাতের ৩০-৪৫ মিনিট আগে সতর্কতামূলক এসএমএস দেওয়া হয়। ভিয়েতনামে মোবাইল টাওয়ার এর আর্থিং সিস্টেমের মাধ্যমে ও যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন প্রদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বজ্রপাতের মৃত্যুর হার ৯০ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে তাদের নাগরিক আমাদের দেশের নাগরিকের চেয়ে বেশি সচেতন। উন্নত দেশগুলো মৃত্যু ৩০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে শুধুমাত্র মানুষকে সচেতন করে। তাই সচেতনতার বিকল্প নেই।

ইউনাইটেড নেশনস ক্যাপিটাল ফান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইউএনসিএফডি) এর ওয়েবসাইটে চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষ দেশগুলোর একটি, যেখানে প্রতিবছর গড়ে তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। আরও বলা হয় নিকটবর্তী নেপালে শক্তিশালী ঝড়ের ফ্রিকোয়েন্সি এবং তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে, ব্যাপকমাত্রায় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে।

২০১৯ সাল থেকে বজ্রপাতে হতাহতের পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি খোলা আকাশের নিচে কাজ করা কৃষকদের মাঝে বজ্রপাত সম্পর্কে সচেতনমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের (এসএসটিএফ) পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (৪ মে, ২০২৩) প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ৩ মে পর্যন্ত বজ্রপাতে মোট ৩৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতে ২৩৯ জন পুরুষ ও ৩৫ জন নারীসহ ২৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বার্ষিক প্রাণহানির সংখ্যার বিচারে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম।

বজ্রপাত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান ফাউন্ডেশন ফর ডিজাস্টার ফোরামের মতে, বিষয়টি উপেক্ষার কারণে বজ্রপাতে মারা যায় সাধারণ মানুষ। এক সময় আমাদের গ্রামে-গঞ্জে মাঠের মধ্যে গাছ থাকতো। কিন্তু আমরা এসব গাছ কেটে ফেলেছি। সেটা তাল গাছই হোক বা অন্য গাছ। এসব গাছ আবার লাগাতে হবে। তাল গাছ বা অন্য যেকোন বর্ধনশীল গাছ লাগানোর জায়গাটা হতে হবে বিলের মাঝখানে অথবা খোলা জায়গার মাঝখানে। তাহলেই সেটা বজ্রপাতে মৃত্যু কমাতে পারবে।

বৃক্ষনিধন রোধ, বজ্রপাতের সতর্ক বার্তা সুনির্দিষ্ট করা, ঝড়-বৃষ্টির সময় খোলা জায়গায় না থাকা, পাঠ্যপুস্তকে বজ্রপাতসংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্তি—বজ্রপাতে ক্ষতি রোধে এমন একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছেন বিশেজ্ঞরা। এ বছর বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা ঘটেছে সিলেটের সুনামগঞ্জে। এ জেলায় মারা গেছে ৭ জন। সিলেট জেলায় মারা গেছে ৫ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন তালগাছসহ উঁচু গাছের সংখ্যা কমে যাওয়াও বজ্রপাতের মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ।

ঘূর্ণিঝড় ও বন্যা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরীক্ষিত মডেল হলেও, বজ্রপাতের ব্যবস্থাপনায় এখনও তা সম্ভব হয়নি। বজ্রপাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বেশ কয়েকটি অঞ্চলকে শনাক্ত করেছেন আবহাওয়াবিদরা। বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটে হাওড় অঞ্চলে। কেননা এসব অঞ্চলে জলীয় বাষ্প বেশি থাকে। সে হিসেবে আবহাওয়াবিদদের মতে নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট এবং সেইসাথে টাঙ্গাইল, জামালপুর, ময়মনসিংহকে বজ্রপাতের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। তবে ইতোমধ্যে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে পার্বত্যাঞ্চলেও বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু বা আহত হচ্ছে। তাই কোন অঞ্চলকেই বজ্রপাতের ঝুঁকির বাইরে বলা যাবে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

গবেষকদের মতে, রাজধানীর ৯০ ভাগ বিল্ডিং এ বজ্রপাত নিরোধক নেই। অথচ বিল্ডিং কোডে বজ্রপাত নিরোধক স্থাপন করা বাধ্যতামূলক। যে ভবনে আর্থিং ব্যবস্থা নেই, সে ভবনে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার ঝুকিপূর্ণ। বজ্রপাতে দুর্ঘটনা কমাতে সরকার কর্তৃক ৩৮ লাখ তালগাছের চারা রোপন করা হয়েছে। তবে পরিচর্যা, যত্নের জন্য জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করলে সে কার্যক্রম আরও বেশি ফলপ্রসূ হতো। এছাড়া তালগাছ বড় হতে ৩০-৪০ বছর প্রয়োজন। তাই এ মুহূর্তে বজ্রপাত থেকে বাঁচতে জনসচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে বজ্র নিরাপত্তা টাওয়ার ও হাওড় অঞ্চলে একতলা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে কার্যক্রম করছে সরকার। সরকার টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকার মাধ্যমে জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন করছে এবং তার সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। তথ্য অফিসের মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। যেহেতু তথ্য অফিসসমূহ তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের মাঝে সরকারি বিভিন্ন বিষয়ে সরাসরি যোগাযোগ সৃষ্টি করে, তাই বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করে তথ্য অফিসের মাধ্যমে তৃণমূলের সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো সম্ভব। এছাড়াও বজ্রপাত থেকে মানুষের জীবন রক্ষায় বর্তমান সরকার উন্নত প্রযুক্তির বজ্র প্রতিরোধক ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি ও প্রদর্শন, জনসচেতনতামূলক গান, বিল্ডিং কোডে বজ্রপাত নিরোধক বজ্রদন্ড বা আর্থিং কাঠি বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

বজ্রপাত বা বজ্রঝড় সাধারণত ৩০-৩৫ মিনিট স্থায়ী হয়, এসময় ঘরে থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচতে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ১৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে। এদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে-
১. আকাশে কালো মেঘ দেখা দিলে বা বজ্রপাত শুরু হলে খোলা স্থান বা ধান ক্ষেতে না থেকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া। যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেওয়া এবং টিনের চালা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
২. বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছপালার নিচে আশ্রয় না নেওয়া।
৩. খোলা স্থানে থাকা অবস্থায় বজ্রপাত শুরু হলে চোখবন্ধ করে এবং কানে আঙ্গুল দিয়ে নিচু হয়ে পায়ের আঙ্গুলে ভর দিয়ে বসতে হবে।
৪. মাটির ঘর বা টিনের ঘরে অবস্থান করলে খালি পায়ে না থেকে জুতা পরতে হবে অথবা বিছানায় পা উঠিয়ে বসতে হবে।
৫. বজ্রপাতের সময় সকল ইলেকট্রিক ডিভাইস বন্ধ রাখতে হবে।
৬. বজ্রপাতের সময় জানালার পাশে না থেকে দরজা, জানালা বন্ধ করতে হবে।
৭. বিদ্যুৎ পরিবাহী এমন কিছুর সংস্পর্শে না আসা।
৮. বজ্রপাতের সময় শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখা এবং নিজেরাও বিরত থাকা।
৯. বজ্রপাতে কেউ আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে।

আবহাওয়া অফিসের সূত্রমতে, বজ্রপাতের সময় কোন উপজেলায় বজ্রপাত হতে পারে তার পূর্বাভাস জানাতে ৩০-৪০ মিনিট পূর্বে সতর্ক সংকেত দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ক্রয় এবং সংযোগ নিয়ে কাজ করছে সরকার। তবে সেটির বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ, কারণ এক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ইলেকট্রিক ডিভাইস প্রয়োজন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই তাদেরকে কাজে লাগিয়েও মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়। স্কুলগুলোতে পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে অন্তর্ভুক্তির পাশাপাশি বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সচেতনতার কাজটি করলে সেটি আরও ফলপ্রসূ হবে। যেসব কার্যক্রমের মাধ্যমে এখনি আমরা বজ্রপাতের মতো দুর্যোগের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে পারি সে সম্পর্কে নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি অন্যদের সচেতন করা নাগরিক দায়িত্ব।

রামগড়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: বজ্রপাত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন