বন্যা ও খরায় জুম ফসলের ফলন বিপর্যয়
পাহাড়ে জুমের পাকা ধানের গন্ধ ছড়ালেও এ বছরে ফলন ভালো হয়নি। চলতি বছরে অনাবরত বৃষ্টি ও প্রখর রোদের কারণে জুমের ফসল ভালো হয়নি। জুমে সাথী ফসল হিসেবে মারফা, মরিচ, তিল ভুট্টারও একই চিত্র। যার ফলে বছর জুড়ে খাবার নিয়ে আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের জুমিয়ারা।
এই বছরে জুমের ধান লাগানোর শুরু থেকেই অনাবরত বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। ভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসে জুমের ধানের চারা ভেসে গেছে। জুমের সাথী ফলসও একই চিত্র। সবশেষে যারা জুমের ধান লাগিয়েছিল সেসব জুমিয়াদের একই চিত্র। ভারী বৃষ্টিপাত কারণে ধানগুলো মাটিতে পড়ে নষ্ট গেছে। নির্দিষ্ট সময়ে জুমের ধান রোপনের সময় পরিমাণ বৃষ্টি এবং ধান পরিপক্ক হওয়ার সময় রোদ পায়নি। যার কারণে প্রতিটি জুমে ধান ভালো হয়নি। আর সাথী ফসলও তেমন ভালো ফলন না হওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জুমিয়ারা। ফলে ঘরে ঘরে জুম ধানের নবান্ন উৎসব হবে কিনা এই সংশয় কাটেনি জুমিয়াদের।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য, গেল বছরে ৮ হাজার ৫৪০ হেক্টর জায়গায় জুমের ধান চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছিল ১০ হাজার ৪৮৯ দশমিক ৭১ মেট্রিক টন। চলতি বছরে ৭ হাজার ৪৬০ হেক্টর জায়গায়তে জুম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ২৬৭ হেক্টর জায়গায়। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৭১ মেট্রিক টন। যা গেল বছরে তুলনায় অনেকটাই কম।
এ বছর বৃষ্টির উপেক্ষা করে জুমিয়ারা নির্দিষ্ট সময়ে চেয়ে বেশী জুমের ধান রোপণ করতে হয়েছে। যার কারণে কোন কোন এলাকায় খাবারের অভাবে কাঁচা ধান কাটাতে শুরু করেছে আবার কোথাও জুমের ধান পেঁকেছে। মাস পরে যারা লাগিয়েছিল জুমের ধান এখনো সবুজ। কেউ কাটছে আবার কয়েকটি জুমে চাষিরা ধান কাটার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে। এ বছরে আবাহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় কারণে জুমের ধান ভালো ফলন হয়নি বলে জানিয়েছে জুমিয়ারা।
জুমিয়া মিলন ত্রিপুরা বলেন, এ বছর ৫ একর পাহাড়ে ১২ আড়ি ধানের জুম করতে পেরেছি। এ বছর জুমের ধান তেমন ভালো হয়নি। যখন বৃষ্টির দরকার ছিল, তখন বৃষ্টি হয়নি। যখন রোদ দরকার ছিল, তখন অতিবৃষ্টি হয়েছে।
আরেক জুম চাষী দিমুল কুমার তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এবার তিন একর জুম চাষ করেছে। জুমের মধ্যে সাথী ফসল হিসেবে ভুট্টা, হলুদ ও মরিচ লাগিয়েছে। পোকামাকড় তেমন ক্ষতি না হলেও বন্যা কারণে জুমের ধানের ক্ষতি হয়েছে। এতে বছর জুড়ে খাবার নিয়ে কপালে চিন্তায় ভাজ পড়েছে।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. হাসান আলী জানান, পার্বত্য অঞ্চল হওয়ার কারণে বৃষ্টির সব জায়গায় সমানভাবে হয় না। ফলে একেক জায়গার ফলন একেক রকম হয়ে থাকে। যে কারণে উৎপাদনে তেমন ভালো হয়নি। বান্দরবানে চলতি বছর প্রায় ৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জায়গায় জুম আবাদ হয়েছে। তবে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে গেল বছরে তুলনায় এবার জুমে ফলন কিছুটা কম হয়েছে।