বহুল প্রতীক্ষিত রামগড় স্থলবন্দর উদ্বোধন আজ
বহু প্রতীক্ষিত রামগড় স্থলবন্দর আজ মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি দেশের ১৫তম এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম এ স্থলবন্দর। এর মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭টি রাজ্যের সাথে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুর দ্বার উন্মোচিত হবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টায় ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যসহ সাতটি রাজ্যে যাবে। ভারতের পণ্য সহজেই বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে। আবার বাংলাদেশের পণ্য ভারতে সহজভাবে প্রবেশ করতে পারবে। তাছাড়া আগরতলা বিমানবন্দর ব্যবহার করে কম খরচে ও কম সময়ে ব্যবসা ও চিকিৎসার জন্য ভারতের অন্যান্য রাজ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের মানুষ যেতে পারবে। কক্সবাজার ও পাবর্ত্য চট্টগ্রামে পযর্টন শিল্পও অনেক সমৃদ্ধ হবে।
রামগড় স্থলবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. সরওয়ার আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার ভার্চুয়ালি এ স্থলবন্দর উদ্বোধন করবেন।
ভারতের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্য ত্রিপুরা, মেঘালয়, আসাম, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে রামগড় ও ত্রিপুরার সাব্রুম স্থলবন্দর চালুর উদ্যোগ নেয় দুই দেশের সরকার। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে সে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে এ স্থলবন্দর চালুর যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে এ স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়ার কাজ চলবে। স্থলবন্দর চালুর লক্ষ্যে রামগড়ে মহামুনি এলাকায় ৪১২ মিটার দৈর্ঘ এবং ১৪.৮০ মিটার প্রস্থের বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নামে একটি আন্তর্জাতিকমানের সেতু নির্মাণ করেছে ভারত।
১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নিমির্ত এ সেতুটি ২০২১ সালের ৯ মার্চ দুদেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। এর আগে ২০১৫ সালের ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ মৈত্রী সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে সংযোগকারী নদীর ওপর নির্মিত এটিই প্রথম মৈত্রী সেতু। ভারতের সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) সেতুটি নির্মাণ করে। সেতুর পূর্ব প্রান্তে রামগড় পৌরসভার মহামুনি এলাকায় স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন ও বিজিবি আইসিপি ভবন এবং অন্যপ্রান্তে দক্ষিণ ত্রিপুরার সাবরুম মহকুমার নবীনপাড়ায় সাব্রুম স্থলবন্দরের আইসিপি ভবন। মৈত্রী সেতুকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সাথে ত্রিপুরাসহ সাতটি রাজ্যের সংযুক্তির ‘গেটওয়ে’ হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা ভারতের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রামগড় ইমিগ্রেশন ভবনের পাশে নতুন করে বিজিবির আইসিপি ভবনও তৈরি করা হয়েছে। ঢাকা—চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত বারৈয়ারহাট- হেঁয়াকো- রামগড় সড়কে ইতোমধ্যে জাইকার তত্ত্বাবধানে ৮টি ব্রিজ ও ৮টি কালভার্ট নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। একই প্রকল্পের আওতায় রামগড়ের ফেনীরকূল এলাকায় প্রধান সড়কে রোড লোড স্কেল প্রকল্পের কাজও শেষ হয়েছে । সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১ হাজার ১০৭ কোটি টাকার ৩৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের কাজও দ্রুতগতিতে চলছে।
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ১১২ কিলোমিটার দূরত্বের এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে মাত্র ৩ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য যেতে পারবে ভারতে। একইসঙ্গে রামগড় স্থলবন্দর ব্যবহার করে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে পণ্য পরিবহন করতে পারবেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ থেকে সহজে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় রপ্তানি করা যাবে প্রসাধন সামগ্রী, সিরামিক, মেলামাইন পণ্য, রড, সিমেন্ট, ইটসহ বিভিন্ন নির্মাণ উপকরণ, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, তামাক জাতীয় পণ্য, শুঁটকি মাছ প্রভৃতি। বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ আশপাশ এলাকার মানুষ রামগড় ও সাব্রুম সীমান্ত পথে ভারতে ভ্রমণে যেতে পারবেন। একইভাবে ভারতের ত্রিপুরাসহ উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের মানুষও এ সীমান্ত পথে বাংলদেশে ভ্রমণে আসবেন। সব মিলিযে বাড়বে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটনসহ বিকশিত হবে পাহাড়ের অর্থনীতি।
চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনৈতিক বিবেচনায় রামগড় স্থলবন্দর বেনাপোলের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। চট্টগ্রাম থেকে বেনাপোল যেতে অনেক সময় প্রয়োজন হয়। কিন্তু রামগড় চালু হলে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি রফতানি হয় তা আরও কম সময়ে ও কম খরচে আমদানি করা সম্ভব হবে। যা অর্থনৈতিক বিবেচনায় সারা দেশের জন্য ইতিবাচক। এই স্থলবন্দর ভবিষ্যতে চট্টগ্রামকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
খাগড়াছড়ি চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরি বলেন, এ বন্দরের সরচেয়ে বড় সুবিধাভোগী হবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো। তারা সহজে ও কম খরচে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহনের সুবিধা নেবে। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরাও রপ্তানির একটি নতুন দ্বার পাবেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ সহজে ভারত থেকে পশুসম্পদ, ফল, কাঠ, বীজ, গম, পাথর, কয়লা, সার ইত্যাদি আমদানি করতে পারবে। সর্বোপরি এ বন্দর বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের জন্য নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বয়ে আনবে; বিকশিত হবে পাহাড়ের পর্যটন শিল্প।