বাংলাদেশের ভূগর্ভে গেমচেঞ্জার সম্পদ, যুক্তরাষ্ট্র-চীন শক্তি প্রতিযোগিতায় ঢাকার উত্থান


যুক্তরাষ্ট্র-চীনের চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই বাংলাদেশে এক যুগান্তকারী খনিজ আবিষ্কার বৈশ্বিক শক্তি ভারসাম্যে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নদী অববাহিকা, উপকূলীয় বালুচর, উঁচু চরভূমি ও কয়লাখনি এলাকায় বিরল মাটি উপাদান (Rare Earth মিনেরালস) চিহ্নিত হয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের টারভিয়াম সংকট; বৈশ্বিক প্রযুক্তি যুদ্ধের অদৃশ্য দাবার চাল রেয়ার আর্থে বিদেশি প্রভাব টারভিয়াম নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ কি হারাচ্ছে সার্বভৌমত্ব?
রেয়ার আর্থ দখলযুদ্ধের কেন্দ্রে বাংলাদেশ ইউনুস সরকার কি পশ্চিমা পরিকল্পনার অংশ? যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনে রেয়ার আর্থ বিকল্প উৎস অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছিলেন ধারণা করা হচ্ছে। এবার একই কৌশল তারা ঢাকার সঙ্গে প্রয়োগ করতে পারে। রেয়ার আর্থ সংকট বাংলাদেশ কি পরিণত হচ্ছে পরাশক্তির নতুন যুদ্ধক্ষেত্রে?
টারভিয়াম অক্সাইড
বিশ্বের প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি খাতে নতুন প্রভাব বিস্তারের কেন্দ্রবিন্দুতে এখন রেয়ার আর্থ ম্যাটেরিয়াল, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান টারভিয়াম অক্সাইড। এই বিরল উপাদান ছাড়া আধুনিক ইলেকট্রিক কার, উন্নত ইলেকট্রনিক্স, স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং সামরিক মিসাইল প্রযুক্তি নির্মাণ অসম্ভব। বিশ্বজুড়ে নতুন এক প্রযুক্তি যুদ্ধ শুরু হয়েছে তেলের জায়গা নিচ্ছে রেয়ার আর্থ ম্যাটেরিয়াল। আধুনিক প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি শিল্পের প্রাণভোমরা হিসেবে এখন সবচেয়ে আলোচিত উপাদান টারভিয়াম অক্সাইড, যা ছাড়া ইলেকট্রিক গাড়ি, স্যাটেলাইট, উন্নত ইলেকট্রনিক্স কিংবা মিসাইল প্রযুক্তি নির্মাণ কার্যত অসম্ভব।
বিশ্বে এই রেয়ার আর্থ উপাদানের ৭০ শতাংশেরও বেশি উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে চীন, যা বৈশ্বিক প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খলায় একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার করেছে। এ নিয়ন্ত্রণ ভাঙতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তিগুলো এখন বিকল্প উৎস খুঁজছে আর সেই অনুসন্ধান এসে পৌঁছেছে বাংলাদেশে।
বিবিসি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ‘China has a chokehold on the minerals used in the making of electric cars, electronics and military weapons. It has tightened its grip over rare earth exports in recent months.’
চীনের রপ্তানী নিয়ন্ত্রণের কারণে পশ্চিমা শিল্পে কাঁচামালের সংকট দেখা দেওয়ায় দক্ষিণ এশিয়াকে নতুন খনিজ উৎস হিসেবে বিবেচনা করছে ওয়াশিংটন ও তার মিত্ররা। বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে টারভিয়াম অক্সাইড খনি শনাক্তের পর দেশটি এখন নতুন ভূরাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বর্তমান সরকারের ক্ষমতা দখলের পেছনে কেবল রাজনৈতিক কারণ নয় রেয়ার আর্থ সম্পদ নিয়ন্ত্রণের কৌশলগত স্বার্থও কাজ করছে জনমনে প্রশ্ন।
নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক ও বহুজাতিক উন্নয়ন সংস্থার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। এই সম্পর্কই এখন বাংলাদেশের রেয়ার আর্থ সম্পদে বিদেশি প্রবেশের কূটনৈতিক দরজা খুলে দিয়েছে কী?
পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরকার রেয়ার আর্থ খনিজ বিদেশে রপ্তানি বা হস্তান্তর বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু ইউনূস সরকারের সময় থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং জামায়াতপন্থী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সক্রিয়তা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। সরকারের ঘনিষ্ঠ মহলে এমনও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে , টারভিয়াম ব্লকের নিয়ন্ত্রণ পশ্চিমা কনসোর্টিয়ামের হাতে তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে কী? জনমনে প্রশ্ন।
ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি ও সম্ভাব্য সংঘাত যদি বাংলাদেশ কৌশলগত উপাদান টারভিয়াম অক্সাইড বিদেশি হাতে তুলে দেয়, তাহলে এটি শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, বরং ভূরাজনৈতিক নিরাপত্তার বড় হুমকি হয়ে উঠবে। কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় রেয়ার আর্থ দখল এখন চীন, ভারত, রাশিয়া ও পশ্চিমা জোটের সামরিক ভারসাম্যের অংশে পরিণত হয়েছে।
একজন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেন, Rare earth is the oil of the 21st century. Whoever controls it, controls the future of warfare, communication, and energy dominance.
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং রেয়ার আর্থ মজুদ একে পরাশক্তিদের কৌশলগত মানচিত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। ফলে দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এখন আন্তর্জাতিক শক্তির লড়াইয়ের অংশ হয়ে উঠছে।
ভবিষ্যতের প্রশ্ন
সার্বভৌমত্ব না সমর্পণ? রেয়ার আর্থ সংকটের এই সময় বাংলাদেশ এক জটিল মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেশ কি নিজের সম্পদ, সার্বভৌমত্ব ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবে, নাকি পরাশক্তির স্বার্থে নিজেই নিজের ভবিষ্যৎ বিকিয়ে দেবে এই প্রশ্নের উত্তরই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশের পরবর্তী দশকের ভাগ্য।
ঢাকা, নভেম্বর ২০২৫
















