বাংলাদেশের লালমনিরহাট এয়ারপোর্ট সংস্কারের উদ্যোগে ভারতের পাল্টা ব্যবস্থা


ভারতীয় চিকেন নেকের নিকটে অবস্থিত বাংলাদেশের লালমনিরহাটে চীনের সহায়তায় বাংলাদেশ একটি পুরাতন বিমানবন্দর সংস্কার কাজ করতে চায় এমন ঘোষণার ভিত্তিতে বিমানঘাঁটির চীনা-সমর্থিত উন্নয়নের সম্ভাব্য কৌশলগত প্রভাব নিয়ে নয়াদিল্লিতে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার মধ্যে ত্রিপুরা রাজ্যের কৈলাশহর বিমানঘাঁটির প্রতি নতুন করে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
ভারতের সীমান্ত থেকে ২০ কিলোমিটারেরও কম দূরে বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি বিমানঘাঁটির উন্নয়নে চীন সহায়তা করছে এমন খবরের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ত্রিপুরায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা একটি বিমানঘাঁটির পুনরুজ্জীবনের কাজ ত্বরান্বিত করছে বলে জানা গেছে। স্থানটি শিলিগুড়ি করিডোরের খুব কাছে অবস্থিত, যা ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সংকীর্ণ ভূমি যা ভারতের মূল ভূখণ্ডকে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সাথে সংযুক্ত করে। প্রায়শই চিকেন নেক নামে পরিচিত, এই করিডোরটি ভারতের আঞ্চলিক অখণ্ডতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি হিসেবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত।
পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, ২৬ মে ত্রিপুরার উনাকোটি জেলার কৈলাশহর বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন ভারতের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (এএআই) এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অবকাঠামো, জমির প্রাপ্যতা এবং দৃশ্যমানতার অবস্থা মূল্যায়নের জন্য এই স্থান পরিদর্শন করা হয়। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে অকার্যকর থাকা এই বিমানবন্দরে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করার ক্ষেত্রে এই প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সিলেট জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে এই বিমানবন্দরের অবস্থান।
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে অচল থাকার পর, ত্রিপুরার উনাকোটি জেলার কৈলাশহর বিমানবন্দরটি পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা চলছে। গত ২৬ মে ২০২৫ ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ (AAI) এর একটি উচ্চ পর্যায়ের দল বিমান চলাচল পুনরায় চালু করার সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য স্থানটি পরিদর্শন করেছে।
পরিদর্শনটি দীর্ঘদিনের জনসাধারণের দাবি পূরণের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক গোষ্ঠী বারবার বিমানবন্দরটি পুনরায় চালু করার আহ্বান জানিয়েছে, উন্নত আঞ্চলিক যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে। বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে বিমানবন্দরটি পুনরুজ্জীবিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং রাজ্য ও কেন্দ্রীয় উভয় স্তরেই দলটি এখন নিয়ন্ত্রণে থাকায়, প্রক্রিয়াটি গতিশীল হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় আঞ্চলিক পরিচালক এম. রাজকিশোরের নেতৃত্বে AAI দলে আগরতলা বিমানবন্দরের পরিচালক কৈলাশ চন্দ্র মীনা এবং ঊর্ধ্বতন জেলা কর্মকর্তারা ছিলেন। তারা বর্তমান অবকাঠামোগত অবস্থা, জমির প্রাপ্যতা এবং পরিচালনাগত চ্যালেঞ্জগুলি পরীক্ষা করেছেন।
রাজকিশোর উল্লেখ করেছেন, প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন হলেও, রাজ্য সরকারের সাথে আরও আলোচনা করা প্রয়োজন। তিনি আরও যোগ করেছেন যে কৈলাশহর থেকে টেকসই বিমান পরিষেবা নিশ্চিত করার জন্য সাশ্রয়ী মূল্য এবং রুট পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ হবে।
ভারতের কৈলাশহর বিমানবন্দরের পুনরুজ্জীবন ঐতিহাসিক তাৎপর্য এবং কৌশলগত গুরুত্ব উভয়ই বহন করে। ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের সময়, বিমানবন্দরটি ভারতীয় বিমান বাহিনী এবং নতুন বাংলাদেশের নব সৃষ্ট বিমান বাহিনীর প্রতিরোধের জন্য একটি লঞ্চপ্যাড হিসেবে কাজ করেছিল। এই বিমানবন্দর থেকেই ‘কিলো ফ্লাইট’-এর প্রথম অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত ছিল, যেখানে যুদ্ধ এবং গোয়েন্দা অভিযানের জন্য পুনঃনির্মিত বেসামরিক বিমান ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৯৯১ সালে এই বিমানঘাঁটিটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়।
ত্রিপুরা বর্তমানে আগরতলায় অবস্থিত একটি প্রধান বিমানবন্দরের উপর নির্ভরশীল। কৈলাশহর বিমানবন্দর পুনঃচালনা কেবল আঞ্চলিক যোগাযোগ জোরদার করবে না বরং একটি সংবেদনশীল সীমান্ত অঞ্চলে লজিস্টিক প্রস্তুতিও বৃদ্ধি করবে। এটি একটি দ্বৈত-উদ্দেশ্যমূলক উদ্যোগ হিসেবে কাজ করতে পারে, যা প্রয়োজনে বেসামরিক বিমান ভ্রমণকে বাড়িয়ে তুলবে এবং সম্পদের দ্রুত সংগ্রহের সুযোগ তৈরি করবে।
অন্যদিকে ভারত নিজে বাংলাদেশের একেবারে সীমান্ত ঘেঁষে রামগড়-সাবরুম বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু সংলগ্ন এলাকায় আরো একটি নতুন এয়ার স্ট্রিপের মতো অবকাঠামো তৈরি করছে। এটা বাংলাদেশ সীমান্তের এতটাই কাছে যে, এখানে যে কোন প্রকার বিমান উঠানামা করতে হলে বাংলাদেশের আকাশ সীমায় প্রবেশ ছাড়া কোন উপায় নেই। এবং ভারত ইতোমধ্যেই এই বিমানবন্দর কার্যকর করতে হাসিনা শাসনামলে বাংলাদেশের আকাশ সীমা ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে রেখেছে। সেকারণে এটি হয়তো ড্রোন পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর পাশের রেল সংযোগের মতো অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে বলে দেখা যায়। অথচ বেসরকারি ব্যবহারের জন্য আগরতলায় সম্পূর্ণ চালু একটি এয়ারপোর্ট রয়েছে। এতে বোঝা যায় ভারত সামরিক উদ্দেশ্যেই এই এয়ার স্ট্রিপ প্রস্তুত করছে।